বছরে ২০ লাখ সিলিন্ডার তৈরির প্লান্ট বানাতে চায় বিপিসি

সরকারি এলপি গ্যাস বিপণনে নতুন মাত্রা

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৯ জানুয়ারি, ২০২১ at ৫:৩১ পূর্বাহ্ণ

এলপি গ্যাসের বাজার ধরে রাখতে বছরে ২০ লাখ সিলিন্ডার তৈরির একটি প্লান্ট বসানোর পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। এ লক্ষ্যে বিপিসির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এলপিজিএল’র (এলপি গ্যাস লি.) প্রায় ৬৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সরকারি এলপি গ্যাস বিপণনে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণের পর সরকারি পর্যায়ে আমদানি হলে এসব সিলিন্ডারের চাহিদা আরো ব্যাপকহারে বাড়বে বলে জানিয়েছেন এলপিজিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমান খান।
পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ ক্রমান্বয়ে কমার কারণে দেশে ক্রমেই বাড়ছে এলপিজি’র (লিকুফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস) ব্যবহার। ফলে চাহিদা বাড়ার কারণে দিন দিন বড় হচ্ছে বোতলজাত এ গ্যাসের বাজার। ইতোমধ্যে বাজার দখল করে নিয়েছে বেসরকারি উদ্যোক্তারা। বাজারে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সরকারি প্রতিষ্ঠান এলপিজিএল বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও নানান কারণে তা সহজে আলোর মুখ দেখে না। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় আমলাতান্ত্রিক রশি টানাটানি ও লাল ফিতার দৌরাত্ম্যের কারণে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। ফলে বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিপিসি সূত্র জানায়, গ্যাসের সিলিন্ডার তৈরির যে কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেটিতে বছরে ২০ লাখ সিলিন্ডার তৈরি হবে। টাঙ্গাইলে বিপিসির নিজস্ব প্রায় ৭ একর জায়গায় প্লান্টটি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি এলপিজিএলের বোর্ড সভায় সিলিন্ডার তৈরির প্লান্ট করার সিদ্ধান্ত হয়। দেশে বর্তমানে ওমেরাসহ তিনটি এলপি গ্যাস কোম্পানি নিজস্ব কারখানাতেই সিলিন্ডার তৈরি করলেও অধিকাংশ সিলিন্ডার এখনো বিদেশ থেকে আমদানি হয়ে থাকে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে দেশে আড়াই লাখ টন এলপিজি ব্যবহার হয়েছে। এরপর ২০১৬ সালে ৪ লাখ টন এবং ২০১৭ সালে সাড়ে ৬ লাখ টনে দাঁড়ায় এলপি গ্যাসের ব্যবহার। ২০১৮ সালে এলপি গ্যাসের ব্যবহার সাড়ে ৮ লাখ টন ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৯ সালে দেশের অভ্যন্তরে প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন এলপি গ্যাস ব্যবহৃত হয়। সর্বশেষ ২০ সালেও ১২ লাখ টনের বেশি এলপি গ্যাস ব্যবহৃত হয়েছে। বিপিসি সূত্রে জানা যায়, এলপিজি ব্যবসার জন্য ৬৩টির অধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জ্বালানি বিভাগের অনুমোদন পেলেও বর্তমানে ২৭টি প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম চালাচ্ছে। তদ্মধ্যে অর্ধেক প্রতিষ্ঠান সরাসরি আমদানি ও বোতলজাত করলেও অন্যরা আমদানিকারকদের কাছ থেকে কিনে বোতলজাত ও বাজারজাত করে আসছে। বেসরকারি পেট্রোলিয়াম পরিশোধন কারখানাতেও এলপি গ্যাস বাজারজাত করছে অনেকে।
বিপিসির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমান খান গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় দৈনিক আজাদীকে বলেন, দেশে এলপি গ্যাসের বাজার বাড়ছে। এলপি গ্যাসের বোতলগুলো আগে আমদানি করা হত। এখন কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সিলিন্ডার তৈরি করছে। বাজারের সাথে পাল্লা দিতে আমরাও নিজেরা এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার তৈরির প্লান্ট নির্মাণের পদক্ষেপ নিয়েছি। ইতোমধ্যে বিপিসি থেকে সিদ্ধান্ত পাওয়া গেছে। আমাদের নিজস্ব প্রায় ৭ একর জায়গাতে প্লান্টটি তৈরি করা হবে। প্লান্টটি নির্মাণে ৬২-৬৫ কোটি টাকা প্রয়োজন হতে পারে।
তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রস্তাবনা চাওয়া হয়েছে। প্লান্টটিতে বছরে আন্তর্জাতিক মানের ২০ লাখ সিলিন্ডার তৈরি করা হবে। মাতারবাড়িতে এলপিজি টার্মিনাল হয়ে গেলে চাহিদা আরো বাড়বে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআড়তে পেঁয়াজের স্তূপ, জন্মাচ্ছে গাছ
পরবর্তী নিবন্ধরেড লেডির ফলন ভালো চাষ বাড়ছে পাহাড়ে