বছরে ১০০ কোটি টাকা আয়ের কর্মপরিকল্পনা

আয়বর্ধক প্রকল্পগুলো ঘিরে আশাবাদী চসিক।। বাস্তবায়নে জোর দেওয়ার পরামর্শ

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৮:২৭ পূর্বাহ্ণ

আয়বর্ধক প্রকল্পের মাধ্যমে বছরে ১০০ কোটি টাকা আয়ের কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। মার্কেট, কাঁচাবাজার, বিনোদন পার্ক, আবাসনসহ বিভিন্ন খাতকে ঘিরে সম্প্রতি এ বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে সংস্থাটির রাজস্ব শাখা। তবে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করলেও বাস্তবায়ন নিয়ে খোদ সংস্থাটিই ‘সন্দিহান’। কারণ প্রণীত কর্মপরিকল্পনায় উল্লেখ আছে, ‘উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন সাপেক্ষে আদায় নির্ভরশীল’। এছাড়া এর আগে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরেও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল চসিকের রাজস্ব শাখা; যার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে নগরবাসী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নকে সাধুবাদ জানালেও তা বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন। এ বিষয়ে চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন দৈনিক আজাদীকে বলেন, সবকিছু নির্ভর করছে কাজের ওপর। অনেক সময় পরিকল্পনাগুলো হয় থিউরিটিক্যাল। প্র্যাকটিক্যাল হয় না। যেমন অতীতে সিটি কর্পোরেশনের অনেক সম্পত্তির কোনো আগা-মাথা ছিল না। শাহ আমানত মার্কেটের পার্কিং নামমাত্র মূল্যে ইজারা দেওয়া হয়েছে। নিয়ম-নীতি না মেনে শপিং কমপ্লেঙ সৌন্দর্যবর্ধনে দেওয়া হয়েছিল। এতে সিটি কর্পোরেশনের লাভ বেশি হয়নি। সৌন্দর্যবর্ধনের নামে যেখানে-সেখানে দোকান বানিয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রশাসক বলেন, শহরের উন্নতি করতে চাই। কিন্তু খরচটা আসবে কীভাবে সেটা দেখতে হবে। শিক্ষা খাতে প্রতি বছর ঘাটতি পূরণ করতে হচ্ছে। ভর্তুকির টাকা আসবে কীভাবে। এক্ষেত্রে যারা কর্পোরেশনের সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে টাকা আয় করছে তাদের কাছ থেকে নিতে হবে।
এদিকে আয়বর্ধক প্রকল্পগুলো ঘিরে আশাবাদী চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মুফিদুল আলম। তিনি আজাদীকে বলেন, আয়বর্ধক প্রকল্পগুলোর কাজ চলমান। হ্যাম্পার হতে দিচ্ছি না। কাজ শেষ হলে আমাদের টার্গেট পূরণ হবে।
আয়বর্ধক প্রকল্পগুলো : কর্মপরিকল্পনাগুলো বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, আয়ের বেশিরভাগ ধার্য করা হয়েছে সংস্থাটির মালিকানাধীন বিভিন্ন মার্কেট ঘিরে। এর মাঝে আগ্রাবাদ-ব্যাংকক সিঙ্গাপুর মার্কেট প্রথম তলা থেকে ষষ্ঠ তলা পর্যন্ত আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ করে ১১ তলা পর্যন্ত ফ্লোর নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সম্প্রসারিত ভবন থেকে বছরে ভাড়া বাবদ ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা, ফুডকোর্টের বিপরীতে ১৬ কোটি ২৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা আয়ের লক্ষ্যেমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
একইভাবে কাজিরহাটে চারতলা ভবন নির্মাণ করে প্রথম দুই তলায় কিচেন মার্কেট এবং বাকি দুই তলায় কমিউনিটি সেন্টার করে আয় হবে ২ কোটি টাকা। কাজির দেউড়ি শিশু পার্ক থেকে বছরে ১৮ লাখ টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, শাহ আমানত মার্কেটে ৪র্থ তলার উপরে ২টি ফ্লোর নির্মাণ করে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে, যার বরাদ্দ মূল্য ছয় কোটি ৪৪ লাখ টাকা। দুটি ফ্লোরের বার্ষিক ভাড়া বাবদ ২১ লাখ ৬০ হাজার টাকা কর্পোরেশনের আয় হবে। নিচতলায় ও ২য় তলায় ফ্লোর বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। ফ্লোর দুটির বিপরীতে দাবি ৯ কোটি ৫২ লাখ সাড়ে ১৮ হাজার ৫শ টাকা। ইতোমধ্যে বুকিং মানি বাবদ ৩ কোটি ৩৯ লাখ ৬ হাজার টাকা আদায় হয়েছে।
এছাড়া বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের প্রাথমিক পর্যায়ে দ্বিতীয় ও নিচতলার কাজ শেষ হলে ইতোপূর্বে বরাদ্দের বাকি টাকা আদায় এবং অবরাদ্দকৃত দোকান বরাদ্দ দিয়ে আয় হবে ১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। নিচতলায় পুরাতন স্টলের উন্নয়ন চার্জ বাবদ আয় হবে ৫ কোটি ১ লাখ ৮৩ হাজার টাকা।
কর্মপরিকল্পনা সূত্রে জানা গেছে, চকবাজার কাঁচাবাজার থেকে ৪ কোটি টাকা, সি বিচ রোডে রেস্ট হাউজ ইজারা দিয়ে ২০ লাখ টাকা, কোরবানিগঞ্জে রাজগরিয়া ভবনের খালি ফ্লোর ইজারা দিয়ে ১০ কোটি টাকা, উত্তর খুলশী কোবে হাউজিং প্রকল্প থেকে ৩ কোটি টাকা, লেকসিটি হাউজিং প্রকল্প থেকে ২ কোটি টাকা, মাদারবাড়ি পোর্ট সিটি হাউজিং প্রকল্প থেকে ৫০ কোটি টাকা, অঙিজেন অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা, মাদারবাড়ি ফ্ল্যাট (৪০ নং ভবন) থেকে ৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা, দেওয়ানহাট পোর্ট সিটি কমপ্লেঙ থেকে ২০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ঠান্ডাছড়ি লেকে বিনোদন পার্ক নির্মাণ করা হলে চিত্ত বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়া স্পটটি থেকে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে অস্থায়ী ব্যবহার ফি ধার্য করলে কর্পোরেশন আর্থিকভাবে লাভবান হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিঙ্গাপুর আওয়ামী লীগ নেতার শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ
পরবর্তী নিবন্ধযাকে ধরতে অভিযান তার নেতৃত্বেই পুলিশের ওপর হামলা