বছরে রেকর্ড কন্টেনার ও খোলা পণ্য হ্যান্ডলিং

এ সাফল্যে বিশ্বের ব্যস্ততম একশ বন্দরের তালিকায় হারানো স্থান ফিরে পাওয়ার আশা

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:২৭ পূর্বাহ্ণ

সদ্য শেষ হওয়া বছরে ধারণার চেয়ে বহু বেশি কন্টেনার এবং খোলা পণ্য হ্যান্ডলিং করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বছরজুড়ে জাহাজের আনাগোনাও ছিল প্রচুর। শেষ ধারণাকেও ভুল প্রমাণ করেছে বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিং। গত শুক্রবার রাতে বছরের শেষ দিনে ধারণা করা হয়েছিল বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিং ৩২ লাখ সাড়ে ১৩ হাজার টিইইউএস এর ধারে-কাছে হবে। বছরের শেষ প্রহরে হিসেব কষে দেখা গেছে ২০২১ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে ৩২ লাখ ১৪ হাজার ৫৪৮ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছে। খোলা পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রেও ধারণা আমূল পাল্টে গেছে। ২০২১ সালে বন্দরে ১১ কোটি ৬৬ লাখ টনেরও বেশি খোলা পণ্য হ্যান্ডলিং হয়েছে। বন্দরে ৪ হাজার ২শ ৯টি জাহাজে এসব কন্টেনার ও পণ্য হ্যান্ডলিং হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে বিশ্বের ব্যস্ততম একশ বন্দরের তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দর হারানো স্থানটি আবারো ফিরে পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানিয়েছে, করোনা মহামারীতে বিশ্বের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে মারাত্মক রকমের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যার সরাসরি ধাক্কা লাগে বিশ্বের শিপিং সেক্টরে। এর প্রভাবে চট্টগ্রাম বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। এতে করে চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেনার এবং কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে ধস নামে। ২০২০ সালে চট্টগ্রাম বন্দর ধারণার চেয়ে বহু কম কন্টেনার হ্যান্ডলিং করে। যার প্রেক্ষিতে বিশ্বের একশ ব্যস্ততম কন্টেনার পোর্টের তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দর ৯ ধাপ পিছিয়ে ৬৭তম স্থানে অবস্থান চলে যায়। আগের বছর বন্দরের অবস্থান ছিল ৫৮তম। প্রতিবছর বন্দর সামনের দিকে এগুলেও করোনা মহামারীর ধাক্কায় ২০২০ সালে পিছিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি স্বাভাবিক থাকলেও একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল বলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন। ২০২০ সালে বন্দর কর্তৃপক্ষ ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ৯৭৭ টিইইউস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করে।
২০২০ সালের পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গত বছর বন্দর সচল রাখার ব্যাপারে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়। আর বছরজুড়ে এরই সুফল পাওয়া যায়। যা দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ২০২১ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩১ লাখ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা। কিন্তু গত শুক্রবার মধ্যরাতে শেষ হওয়া ২০২১ সালের হিসেব কষে দেখা যায় যে, বন্দরে ৩২ লাখ ১৪ হাজার ৫৪৮ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৫৭১ টিইইউএস কন্টেনার বেশি হ্যান্ডলিংয়ের এই অর্জন গত বছর হারিয়ে ফেলা স্থানে চট্টগ্রাম বন্দর পুনরায় আসীন হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। অবশ্য এর জন্য বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন শিপিং বিষয়ক সংবাদপত্র লয়েড’স এর তালিকা প্রকাশ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। গতবছরের কার্যক্রমের উপর চলতি বছর লয়েড’স বিশ্বের ব্যস্ততম একশ বন্দরের তালিকা প্রকাশ করবে।
কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের পাশাপাশি চলতি বছরে খোলা পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে বেশ সফলতা অর্জিত হয়েছে। গত শুক্রবার মধ্যরাতে শেষ হওয়া ২০২১ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে ১১ কোটি ৬৬ লাখ ১৯ হাজার ১৫৮ টন খোলা পণ্য হ্যান্ডলিং হয়েছে। ২০২০ সালে এর পরিমাণ ছিল ১০ কোটি ৩২ লাখ ৯ হাজার টন। ২০১৯ সালে ছিল ১০ কোটি ৩০ লাখ ৭৭ হাজার টন। এক বছরের ব্যবধানে খোলা পণ্য হ্যান্ডলিং বেড়েছে ১ কোটি ৩৪ লাখ ১০ হাজার ১৫৮ টন।
উপরোক্ত কন্টেনার এবং খোলা পণ্য পরিবহনে ২০২১ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে দেশি-বিদেশি সমুদ্রগামী জাহাজ এসেছে ৪ হাজার ২০৯টি। ২০২০ সালে বন্দরে জাহাজ এসেছিল ৩ হাজার ৭২৮টি জাহাজ। ২০১৯ সালে এর সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৮০৭টি। এতে করে বন্দরে জাহাজের আনাগোনা ২০২১ সালেও স্বাভাবিক ছিল বলে সূত্র মন্তব্য করেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক গতকাল দৈনিক আজাদীকে জানিয়েছেন, আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। ভয়াবহ মহামারীর মাঝে আমাদের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা অনেক কঠিন ছিল। বন্দরের সর্বস্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী এবং বন্দর ব্যবহারকারীরা নিরলসভাবে কাজ করেছে। সরকারের দূরদর্শী কিছু সিদ্ধান্ত এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের যথোপযুক্ত পদক্ষেপ এই লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরেমিটেন্সে প্রণোদনা আড়াই শতাংশ করার ঘোষণা
পরবর্তী নিবন্ধউৎসব নেই, আছে উচ্ছ্বাস