বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে লাখো পর্যটকের ভিড়

কক্সবাজার সৈকত

কক্সবাজার প্রতিনিধি | রবিবার , ১ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৪:০৮ পূর্বাহ্ণ

পুরনো বছরকে বিদায় জানাতে এবং নতুন বছরকে বরণ করতে দেশের প্রধান অবকাশ যাপন কেন্দ্র কক্সবাজারে এখন ভিড় করছে লাখো পর্যটক। গতকাল শনিবার বিকেলে বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে সৈকতে বসে নানা বর্ণের ও বয়সের লাখো মানুষের মিলনমেলা। তবে এবারের থার্টি ফার্স্টে সকল ধরনের অনুষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় কক্সবাজারে প্রত্যাশিত সংখ্যক পর্যটক আসেনি বলে জানান হোটেল মালিকরা।

হোটেল মালিকরা জানান, প্রতিবছর দুই ঈদ এবং থার্টিফার্স্ট’র ছুটিতে কক্সবাজারে সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। এসময় হোটেলমোটেলে শতভাগ রুম বুকিং থাকে। আর এবারের থার্টি ফার্স্ট এর ছুটিতেও প্রত্যাশিত সংখ্যক পর্যটক আসবেন বলে আশা করা হলেও তা হয়নি। শনিবার থার্টিফার্স্ট’র দিন কক্সবাজারের হোটেলগুলোর ২০% ভাগ থেকে ৩০% ভাগ কক্ষ খালি আছে বলে দাবি করেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম সার্ভিসেস এসোসিয়েশন কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার।

গতকাল শনিবার রাত ৮টার সময় তিনি জানান, কক্সবাজারের প্রায় ৫শ হোটেলমোটেল ও গেস্ট হাউসে প্রায় দেড় লাখ পর্যটকের রাত যাপনের সুবিধা রয়েছে। কিন্তু থার্টিফার্স্ট’র দিন কক্সবাজারের হোটেলগুলোর মাত্র ৭০% ভাগ থেকে ৮০% ভাগ বুকিং হয়েছে।

এবারের থার্টি ফার্স্টে সকল ধরনের অনুষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় কক্সবাজারে প্রত্যাশিত সংখ্যক পর্যটক আসেনি বলে মনে করেন তিনি।

একই মতামত কলাতলীমেরিন ড্রাইভ হোটেলরিসোর্টস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান ও কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশনে প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি এসএম কিবরিয়া খানেরও। তাদের মতে, এবারের থার্টিফার্স্ট’র ছুটিতে কক্সবাজারে লাখো পর্যটকের আগমন ঘটেছে। তবে পর্যটন ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা ছিল আরও অনেক বেশি। কিন্তু ওপেন এয়ার কনসার্টের পাশাপাশি এবার ঘরোয়া অনুষ্ঠানেও নিষেধাজ্ঞা থাকায় কক্সবাজারে প্রত্যাশিত সংখ্যক পর্যটক আসেনি।

কলাতলীমেরিন ড্রাইভ হোটেলরিসোর্টস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, কক্সবাজারের হোটেলগুলোতে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে সরকারি ছুটির দিনগুলোতে প্রায় শতভাগ কক্ষ বুকিং হয়েছে। তবে গত শুক্রবার থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ৫ দিন প্রায় শতভাগ রুম বুকিং গেলেও বুধবার থেকে পর্যটক কমতে শুরু করে।

কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশনে প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান বলেন, চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে, শীত বাড়ার সাথে সাথে দেশের প্রধান অবকাশযাপন কেন্দ্র কক্সবাজারে ছুটে আসছে ভ্রমণ পিপাসু মানুষ। সপরিবারে অথবা বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন মিলে বেড়াতে আসছেন সাগরপাড়ে। পর্যটকেরা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, বার্মিজ মার্কেট, শুটকিপল্লী, দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেক ও টেকনাফ সমুদ্র সৈকত ছাড়াও জাহাজে সেন্টমার্টিন দ্বীপে এবং স্পিডবোটে সোনাদিয়া দ্বীপে ভ্রমণে যাচ্ছেন। আর কেউ কেউ ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, রামু বৌদ্ধ মন্দির ও মহেশখালী আদিনাথ মন্দির পরিদর্শনে। পাশাপাশি ঘুরতে যাচ্ছেন কক্সবাজারের পার্শ্ববর্তী পার্বত্য বান্দরবান জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পটে। তবে এবারের থার্টিফার্স্ট’র ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় না থাকায় অসাধু হোটেল মালিকরা এবার পর্যটকদের গলাকাটার সুযোগ পাননি বলে মন্তব্য করেন কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের আহবায়ক আ ন ম হেলালউদ্দিন। তিনি বলেন, মাত্রাতিরিক্ত পর্যটক আসলে কক্সবাজার শহরে প্রায় অচলাবস্থা তৈরি হয়। সংকট তৈরি হয় নানা খাতে। আর সেই সুযোগে অসাধু হোটেল মালিকরা পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে।

তবে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, কক্সবাজারে পর্যটকেরা যাতে হয়রানির শিকার না হয় তা নিশ্চিত করতে পুলিশের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের বিচকর্মীরা দায়িত্ব পালন করছে। দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পর্যটন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত সক্রিয় রয়েছে। তবে এবারের ছুটিতে পর্যটক হয়রানির কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। আর অভিযোগ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান জানান, পর্যটকদের চাপের কথা মাথায় রেখে কক্সবাজারের রাস্তাঘাটে এবং পর্যটন স্পটসমূহে ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া শহরের কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সৈকতে গ্রহণ করা হয়েছে চব্বিশ ঘণ্টা পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাইফুল গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধবই উৎসব আজ