কক্সবাজারে টানা কয়েকদিনের ভ্যাপসা গরমের পর শনিবার রাতের ও রোববার বিকালের হালকা বৃষ্টিপাতে জনমনে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। তবে সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টির ফলে রোববার সকালে আবহাওয়া বিভাগের সতর্কতা সংকেত জারির পর জেলেরা মাছ ধরা বন্ধ করে বঙ্গোপসাগর থেকে ঘাটে ফিরতে শুরু করেছে।
আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে মৌসুমী বায়ু সক্রিয় রয়েছে এবং গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্র বন্দরের উপর দিয়ে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ৩ নং সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং মাছধরা ট্রলারসমূহকে উপকুলের কাছাকাছি সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
কক্সবাজারে টানা কয়েকদিনের ভ্যাপসা গরমের পর শনিবার রাতে ও রোববার বিকালে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানায় আবহাওয়া বিভাগ। সেসাথে রোববার কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের গড় বায়ুচাপ বেড়ে ১০০০ হেক্টোপ্যাসকেলে ওঠেছে বলেও জানায় বিভাগটি। আগেরদিন (১৯ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজারের বায়ুচাপ ছিল মাত্র ৯৯.৭ এইচপিএ, এর আগেরদিন (১৮ সেপ্টেম্বর) ৯৯.৯ এইচপিএ। অথচ কক্সবাজারে স্বাভাবিক আবহাওয়ার বায়ুচাপ থাকে ১০০৪ কিংবা ১০০৫ এইচপিএ। যদিও ১০১৩.২৫ এইচপিএ বায়ুচাপকেই একটি আদর্শ বলা হয়। একই সাথে রোববার কক্সবাজারের গড় তাপমাত্রাও কমেছে। এদিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বনিম্ন ২৬.৫ ডিগ্রি। অথচ আগেরদিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং এরআগেরদিনের (১৮ সেপ্টম্বর) ছিল ৩৩.৫ ডিগ্রি সে.। আবহাওয়ার এ পরিবর্তনে জনমনে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। তবে সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টির ফলে আবহাওয়া বিভাগের সতর্কতা সংকেত জারির পর বঙ্গোপসাগরে মাছধরারত অর্ধলক্ষাধিক জেলে মাছ ধরা বন্ধ করে রোববার দুপুর থেকে ঘাটে ফিরতে শুরু করেছে বলে জানায় কক্সবাজার জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতি।
জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ জানান, রোববার সকালে আবহাওয়া বিভাগের সতর্কতা সংকেত জারির পর গভীর সাগরে মাছধরারত জেলেরা মাছধরা বন্ধ করে ঘাটে ফিরতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে (রোববার রাত ৯টা পর্যন্ত) কক্সবাজারের প্রায় এক তৃতীয়াংশ ট্রলার ঘাটে ফিরে এসেছে। আজ সোমবারের মধ্যেই সব ট্রলার ঘাটে ফিরবে বলে আশা করেন তিনি।
জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সূত্রমতে, কক্সবাজারে মাছ ধরার ছোট বড় ৭ সহস্রাধিক যান্ত্রিক বোট রয়েছে। এরমধ্যে বড় নৌকায় ৩০ থেকে ৪০ জন এবং ছোট নৌকায় ৫ থেকে ১৭ জন জেলে থাকে। আবার কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর ঘাটের ইঞ্জিনবিহীন ককশিটের বোটে থাকে মাত্র ২ জন জেলে। নৌকাগুলোর মধ্যে ইলিশ জালের বোটগুলো গভীর বঙ্গোপসাগরে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো উপকূলের কাছাকাছি মাছ ধরে। বিহিন্দি জালের বোটগুলো মূলত ছোট প্রজাতির মাছ ধরে, যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘পাঁচকাড়া’ (পাঁচ প্রকারের) মাছ বলা হয়। এছাড়া ককশিটের বোটগুলো প্রতিদিন ২ থেকে ৩ বার পর্যন্ত সাগরে মাছ ধরতে যায়।