বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘গুলাব’

বিপদ নেই বাংলাদেশে

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:০৯ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়টির নাম রাখা হয়েছে ‘গুলাব’। ঘূর্ণিঝড় গুলাবের কারণে বাংলাদেশে তেমন বিপদ নেই বলেও জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। তবে এই ঘূর্ণিঝড় চলে যাওয়ার পর বঙ্গোপসাগরে আরেকটি সুষ্পষ্ট লঘুচাপের সৃষ্টি হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় গুলাবের প্রভাবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম আবহাওয়া ও ভূ-প্রাকৃতিক কেন্দ্রের উপ-পরিচালক সৈয়দ আবুল হাসানাৎ দৈনিক আজাদীকে বলেন, বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে। এটির কারণে আমাদের বিপদের তেমন আশংকা নেই। ঘূর্ণিঝড়টি ভারতীয় উপকূলের দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড়টি চলে গেলে সাথে সাথে আরেকটি লঘুচাপ আসবে। যেটির কারণে চট্টগ্রামসহ দেশের আবহাওয়া কিছুটা খারাপ হতে পারে।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিস থেকে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬ টার স্থানীয় পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পরবর্তী ২৪ ঘন্টায় চট্টগ্রামের আকাশ আংশিক মেঘলা থেকে সাময়িকভাবে মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। সেই সাথে অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরণের বৃষ্টি কিংবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘন্টায় ১০-১৫ কিলোমিটার বেগে, যা অস্থায়ীভাবে দমকায় ৩৫-৪৫ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রবাহিত হতে পারে। গতকাল শনিবার চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ১.৯ ডিগ্রি বেশি। অন্যদিকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ১.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সন্ধ্যা ৬টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ এবং পরবর্তীতে আরও ঘনীভূত হয়ে প্রথমে নিম্নচাপ এবং পরবর্তীতে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে বর্তমানে এটি উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরো ঘনীভূত হয়ে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ উড়িষ্যা হয়ে উত্তরপূর্ব দিকে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ মধ্য বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় বিরাজ করছে। খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায়, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরণের বৃষ্টি কিংবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে মাঝারি ধরণের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায় ৩৬.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন ছিল গোপালগঞ্জে ২৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি আরো ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্ধর থেকে ৪৮০ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কঙবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে পশ্চিম উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৫০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটে সাগর উত্তাল রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কঙবাজার, মংলা এবং পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থারনত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেইসাথে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শেখ ফরিদ আহমদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, বঙ্গোপসাগরে সুষ্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এজন্য বন্দরগুলোকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডব্লিউটিসির অনুরোধে বন্দর কর্তৃপক্ষের ‘না’
পরবর্তী নিবন্ধহলুদ ট্রাংকে তরুণীর লাশ আর একটি জিডি