বঙ্গমাতার নামে হাসপাতাল নয়, জাতীয় উদ্যান চাই

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৭:৩১ পূর্বাহ্ণ

সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের প্রক্রিয়া কোনো বিবেকবান মানুষই মেনে নিতে পারে না। প্রথমত, এটি সরকারিভাবেই হেরিটেজ জোন হিসেবে খ্যাত। দ্বিতীয়ত, এখানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম জিএস শহীদ আবদুর রবসহ আটজন শহীদের কবর রয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদের কবরের উপর হাসপাতালের নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করতে দিচ্ছেন তা আমরা কিছুতেই বিশ্বাস করি না। তাঁকে ভুল বুঝানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অদম্য নেত্রী। তিনি চট্টগ্রাম নিয়ে ভাবেন। একাত্তরের পরাজিত শক্তির মত কিছু উচ্চাভিলাষী আজ চক্রান্ত করছে। হাসপাতাল হলে এখানে সবুজের চিহ্নও থাকবে না। এ আন্দোলনের লক্ষ্য একটাই, ‘বাঁচাও সবুজ, বাঁচো নিজে’। আমরা বলছি, প্রাকৃতিক অক্সিজেন ধ্বংস করে সিলিন্ডারের অক্সিজেন নিয়ে জীবন্মৃত হয়ে বাঁচতে চাই না। এ আন্দোলন কাউকে গদিচ্যুত করতে নয়, বরং বলা চলে চট্টগ্রামের মানুষই আন্দোলনের গতি পথ নির্ধারণ করছে। আমরা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসার নামে এখানে হাসপাতাল নয়, একটি জাতীয় উদ্যান চাই। গতকাল শুক্রবার সিআরবিতে নাগরিক সমাজ চট্টগ্রাম স্বাস্থ্যবিধি মেনে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে আলোচকবৃন্দ এসব কথা বলেন। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, এখানে ৫০০ গজের একটা হাসপাতাল নির্মাণের কথা বলে একটা সময় পুরো সিআরবি তারা দখল করে নেবে। গোটা সিআরবিটাই একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। এজন্য এটা এখানে হতে দেয়া ঠিক হবে না। এখন গায়ের জোরে যদি করে কেউ, সেটা আলাদা ব্যাপার। রেলমন্ত্রী কথা দিয়েছেন, চট্টগ্রামবাসী না চাইলে সিআরবিতে হাসপাতাল হবে না। আমরা আশা করি তিনি তাঁর কথা রাখবেন। নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ২৪নং অনুচ্ছেদে বলা আছে, বিশেষ শৈল্পিক কিংবা ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বা তাৎপর্যমন্ডিত স্মৃতি নিদর্শন, বস্তু বা স্থানসমূহকে বিকৃতি, বিনাশ বা অপসারণ হইতে রক্ষা করিবার জন্য রাষ্ট্র ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন। এছাড়াও মাস্টার প্ল্যানের আলোকে ২০০৯ সালে সিডিএ কর্তৃক প্রণীত ‘ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ)’ এ সিআরবিকে ‘সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য’ হিসেবে সংরক্ষণের কথা উল্লেখ আছে। রেলওয়ে বলছে, এখানে হাসপাতাল হলে গাছ কাটা পড়বে না। অথচ হাসপাতাল নির্মাণের নির্দ্ধারিত স্থানেই তিনশ গাছ আছে শতর্বষী গাছসহ। যাদের ত্যাগ, রক্ত, সম্ভ্রমের বিনিময়ে আজ জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এদেশ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছে, সেই দেশে এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত কিছুতেই বাস্তবায়িত হতে পারে না।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মো. শাহআলম বলেন, প্রথম কথা হল, আমাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কেন্দ্র ভূমি হল সিআরবি। আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের হেডকোয়ার্টার ছিল সিআরবি। এটাতো একটা গৌরবের বিষয়। কাজেই সিআরবি আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের অংশ। তাছাড়া চিকিৎসা ব্যবস্থা যদি বিবেচনা করা হয়, তাহলেও এটা কোনোভাবেই প্রাইভেট সেক্টরকে দেয়া যাবে না। এভাবে সব জায়গা যদি প্রাইভেট সেক্টরকে দিয়ে দেই, তাহলে আগামীতে সরকার চাইলেও কোন জায়গা পাবে না শহরে কিছু করার জন্য। সিআরবিকে বলা হচ্ছে নগরীর ফুসফুস। এটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেয়া যায় না। আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে, প্রাকৃতিক পরিবেশকে ধ্বংস করে এটা কোনোভাবেই করা যাবে না।
কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন জাসদ কেন্দ্রীয় নেতা জসীম উদ্দিন বাবুল, বীর মুক্তিযোদ্ধা তৌহিদুল রহমান কাজল, সংগঠক বন বিহারী চক্রবর্তী, নারী নেত্রী হাসিনা আক্তার টুনু, আবৃত্তি শিল্পী প্রনব চৌধুরী, দিলরুবা খানম, তৈয়বা জহির আরশী, খেলাঘর সংগঠক মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী, শিল্পী নারায়ণ চন্দ্র দাশ প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাটহাজারীতে অপহৃত কিশোরীকে নগরীতে উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধমালয়েশিয়ায় অনলাইন জুয়া গ্রেপ্তার ৫ বাংলাদেশি