চট্টগ্রাম ওয়াসার মীরসরাইয়ের ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি)-জি টু জি প্রক্রিয়ায় মেঘনা নদী হতে পানি পরিশোধনপূর্বক সরবরাহ’ প্রকল্পটি গত ৩১ আগস্ট অর্থনৈতিক বিষয়াদি সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ কমিটির (সিসিইএ) বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পে মেঘনা-পদ্মা-ডাকাতিয়ার সংযোগস্থল থেকে দৈনিক ৯০ কোটি লিটার পানি উত্তোলনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। তিন নদীর মোহনায় চাঁদপুরের ওই স্থান থেকে পানি মীরসরাইয়ের শিল্প নগরে আনতে প্রায় ১৩২ কিলোমিটার পাইপ লাইনের কাজ করতে হবে। এই প্রকল্পটির ব্যাপারে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একে এম ফজলুল্লাহ আজাদীকে জানান, মীরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে পানি সরবরাহের জন্য মেঘনা নদী থেকে পানি পরিশোধনপূর্বক সরবরাহের জন্য পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, তা অর্থনৈতিক বিষয়াদি সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ কমিটির ১৯তম বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে প্রথম ধাপ এগিয়ে গেছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার একটি সূত্র জানায়, প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ১০ হাজার কোটিরও বেশি টাকা ব্যয় হবে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় কোরিয়ান কোম্পানি-তাইইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে বলে জানা গেছে। কোরিয়ান এই প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম ওয়াসার বোয়ালখালীস্থ ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পেরও কাজ করছে।
এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম আজাদীকে জানান, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় কোনো প্রকল্প
বাস্তবায়ন করতে গেলে প্রথমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পিপিপি কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে হয়। প্রকল্পটি পিপিপির অধীনে বাস্তবায়ন করা যায় কিনা তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন উপযোগী হলে এটা ‘অর্থনৈতিক বিষয়াদি সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ কমিটির (সিসিইএ) কাছে নীতিগত অনুমোদনের জন্য পাঠায়। এই কমিটি থেকে নীতিগত অনুমোদন নিতে হয়।
সিসিইএ’র সভায় অনুমোদনের পর প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি শুরু হবে। ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি শেষে প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পিপিপি কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রকৌশলীরা জানান, মেঘনা-পদ্মা ও ডাকাতিয়ার সংযোগস্থল থেকে পানি উত্তোলনের
পরিকল্পনা করা হয়েছে প্রকল্পে। সে অনুযায়ী দুটি শোধনাগারের মাধ্যমে দৈনিক ৯০ কোটি লিটার পানি তোলা হবে। সেখান থেকে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের দূরত্ব প্রায় ১৩২ কিলোমিটার। এ লম্বা পথজুড়ে পাইপলাইন স্থাপন করতে হবে। বুস্টিং স্টেশন নির্মাণ করতে হবে দুই থেকে তিনটি। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের অভ্যন্তরে ২০ কিলোমিটার বিতরণ লাইন স্থাপন করতে হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় লাগবে পাঁচ থেকে সাত বছর।
প্রস্তাবিত এ প্রকল্পে দীর্ঘ দূরত্বে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি আনার সময় পথে হাজিগঞ্জ, লাকসাম, ফেনী, বারৈয়ারহাটসহ কয়েকটি স্থানে প্রায় ৪৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহেরও পরিকল্পনা আছে ওয়াসার। বাকি ৪৫ কোটি লিটার পানি যাবে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও মীরসরাই এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় ৩০ হাজার একর জমিতে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর’ স্থাপনে কাজ করছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রায় ৪০০ শিল্প-কারখানা স্থাপন এবং ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। এই শিল্প নগরে ২০৪০ সাল নাগাদ পানির চাহিদা হবে সাড়ে ৯৬ কোটি লিটার।











