বঙ্গবন্ধু, চট্টগ্রাম সমিতি-ঢাকা এবং মুশতাকের নানা কথা

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী | রবিবার , ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ, নানা কর্মোদ্যোগ ও সাংগঠনিক কর্মের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ চলে গেলেন। তাঁকে সকলেই চেনেন। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধির উদ্ভাবক, তিনি ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক। তাঁর প্রয়োজন কখনো ফুরাবে না। তাঁর শৃন্যতা পূরণ হবে না। কিছু না করলেও শুধু ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি উদ্ভাবনের জন্য তিনি অমর হয়ে থাকবেন। যতদিন ‘বঙ্গবন্ধু’ বেঁচে থাকবেন, মুশতাকও বেঁচে থাকবেন এই ‘বঙ্গবন্ধুর’ জন্য। যখনই আমরা ‘বঙ্গবন্ধু’র নাম উচ্চারণ করবো, যতবার বঙ্গবন্ধু আমাদের স্মৃতিপটে জাগরূক হবেন, মুশতাকের কথাও ততবার আমাদের মনে পড়ে যাবে। পৌরাণিক চরিত্র মা দুর্গা এবং মহিষাসুর দিয়ে বঙ্গবন্ধু এবং মুশতাকের একটা চমৎকার ব্যাখ্যা বা সাযুজ্য খুঁজে পেতে পারি। মা দুর্গার সঙ্গে লড়াই করতে করতে মহিষাসুর যখন বুঝতে পেরেছিলেন, মায়ের হাতে তার বধ বা পতন অনিবার্য, তখন তিনি নাকি কাতর কণ্ঠে মায়ের কাছে একটি বর প্রার্থনা করেছিলেন, যে মা আমাকে এই বর দাও, তোমার সঙ্গে তোমার সন্তানরা যেন আমার কথাও মনে রাখে, আমার প্রতিমাও তৈরি করে। মা বললেন তথাস্তু। তাই হলো, প্রতিবছর মা আসেন কৈলাস থেকে পিতৃগৃহে, সঙ্গে সেই মহিষাসুরও আসেন, বাঁচতে নয় বধ হতে। ভক্তজনের চোখে মা যেমন সত্য, মহিষাসুরও সত্য।
রেজাউল হক মুশতাক মহিষাসুর নন, ভাল মানুষ; তবে মা দুর্গার সাথে মহিষাসুর যেমন সত্য; বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মুশতাকও সত্য। মুশতাক বঙ্গবন্ধুর কাছে বর মাগেননি, কিন্তু বঙ্গবন্ধু আপন উদার্যে আপন মহত্বে একজন সাধারণ মুশতাককে আপন সঙ্গী করে নেন।
এবার মুশতাকের বঙ্গবন্ধু উপাধি কয়েন করার ইতিহাসটা বলি।
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান, দলীয় নেতা-কর্মীদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসামিশ্রিত আন্তরিক সম্বোধনে ‘মুজিব ভাই’, ১৯৬৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানে প্রথম ৬ দফা ঘোষণা করার পর চট্টল শার্দুল এমএ আজিজ তাঁকে নতুন এক উপাধিতে ভূষিত করলেন। সেদিন থেকে মুজিব ভাই হয়ে গেলেন ‘বঙ্গশার্দুল’ শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৬৮ অব্দি বঙ্গশার্দুল লকব টিকে রইলো। আটষট্টিতে যখন তিনি আগরতলা মামলার প্রহসনমূলক বিচারে মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায় শোনার জন্য উৎকর্ণ হয়ে আছেন, সেই সময়ে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধুর পুত্র শেখ কামালের সহপাঠী রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক বঙ্গশার্দুল শেখ মুজিবের জন্য নতুন এক উপাধি উদ্ভাবন করলেন। সেই উপাধি ‘বঙ্গবন্ধু’। শেখ কামাল ও মুশতাক যৌথভাবে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড তুলে ধরার জন্য ‘প্রতিধ্বনি’ নামে একটি বুলেটিন প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেই বুলেটিনেরই নভেম্বর ’৬৮ সংখ্যায় রেজাউল হক মুশতাক “সারথী” ছদ্ম পরিচয়ে ‘আজব দেশ’ নামে লেখা এক রাজনৈতিক প্রবন্ধে শেখ মুজিবের নামের আগে বঙ্গশার্দুল না লিখে ‘বঙ্গবন্ধু’ বিশেষণটি প্রয়োগ করেন। মুশতাক বেশ কিছুদিন ধরেই ভাবছিলেন, ৬ দফা আন্দোলন ও আগরতলা মামলা থেকে শেখ মুজিবের জনপ্রিয়তা যেখানে বাড়তে বাড়তে আকাশছোঁয়া উচ্চতায় উপনীত হচ্ছিলো, তাতে বঙ্গশার্দুল উপাধি তাঁকে ঠিক ধারণ করতে পারছিলোনা। এমন কোন যুৎসই উপাধি উদ্ভাবন করা দরকার, যে উপাধি নতুন পরিস্থিতিতে বহুগুণ বর্ধিত শেখ মুজিবের জনপ্রিয়তা ধারণ করতে পারে। এক বছর পর যখন উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে আইয়ুবের তখ্‌তে তাউস তাসের ঘরের মত উড়ে গেল এবং শেখ মুজিবুর রহমান এক মহানায়ক, মহাবীরের ন্যায় কারগার থেকে মুক্তিলাভ করে বেরিয়ে আসলেন বাইরে; সেই পরিস্থিতিতে ’৬৯-এর ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) তাঁর সম্মানে এক গণসংবর্ধনা আয়োজন করা হলো। সেই গণসংবর্ধনার কিছু আগে মুশতাকই ডাকসুর ভিপি তোফায়েল আহমদকে বলেছিলেন মুজিব ভাইকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করলে কেমন হয়? আজকের অনুষ্ঠানে আপনি তাঁকে সেই উপাধিতে ভূষিত করলে একটি ইতিহাস সৃষ্টি হবে। মুশতাকের কথা থেকে তোফায়েল আহমদ পেয়ে গেলেন এক মহামন্ত্র। তিনি গণসংবর্ধনায় শেখ মুজিবুর রহমানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করলেন। সেদিন থেকে শেখ মুজিব হয়ে গেলেন ‘বঙ্গবন্ধু’। শেখ মুজিব, তাঁর সৃষ্টি বাংলাদেশ এবং তাঁর লকব ‘বঙ্গবন্ধু’-এসব অমরত্বের মহিমায় উদ্ভাসিত। ‘বঙ্গবন্ধু’ খেতাবের সঙ্গে জনাব রেজাউল হক মুশতাকও অমর হয়ে রইলেন। যতদিন ‘বঙ্গবন্ধু’ বেঁচে থাকবেন, মুশতাক সাহেবও ততদিন বেঁচে থাকবেন তাঁর ছায়াসঙ্গী হয়ে। বাঙালির সঙ্কটে-সংগ্রামে, দুর্যোগ-দুর্বিপাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ চিরকাল সাহস ও সংকল্পের প্রেরণা জুগিয়ে এসেছে। মুক্তিযুদ্ধে ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’-ই ছিলো রণাঙ্গণে মুক্তিযোদ্ধাদের রণধ্বনি।
মুশতাক সাহেবের দুর্ভাগ্য, বাঙালি জাতির পিতার জন্য ‘বঙ্গবন্ধু’ খেতাব সৃষ্টি করে স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি যে প্রবল আবেগ ও প্রচণ্ড গতি সঞ্চার করেছিলেন, এবং বঙ্গবন্ধু ধ্বনি উচ্চারণ করতে করতে জাতি স্বাধীনতার আলিঙ্গণে বাঁধা পড়েছিলো ’৭১-এর ২৬ মার্চ-সেজন্য ‘বঙ্গবন্ধু’ খেতাব উদ্ভাবকের যে কিছু কৃতিত্ব প্রাপ্য হয়, জীবিত থাকতে সেটা তাঁকে দেয়া হয়নি। এই খেতাব উদ্ভাবক হিসেবে আনুষ্ঠানিক কোনো স্বীকৃতিও দেয়া হয়নি তাঁকে। রাষ্ট্র বা সরকারই তাঁকে এই স্বীকৃতি দেয়ার কথা, কিন্তু দেয়া হয়নি।
মুশতাক নশ্বর জীবন থেকে বিদায় নিয়েছেন। কোন স্বীকৃতি তো তাঁকে দেয়া হয়নি। স্বীকৃতি পাওয়া না পাওয়ার অনেক উর্দ্ধে তিনি উঠে গেছেন। তবুও কি জাতি শেষ শ্রদ্ধার আনত হবে না তাঁর স্মৃতির প্রতি? চিরবিদায়ের দিনে বাঙালি কি তাঁকে শ্রদ্ধাভরে একটু স্মরণ করলো? মুশতাক সাহেবের জন্ম না হলে আমরা ‘বঙ্গবন্ধু’ খেতাব পেতাম না।
আর একটা কথা, বঙ্গবন্ধুর দুটি উপাধির সঙ্গেই চট্টগ্রাম জড়িয়ে আছে। বঙ্গশার্দুল দিয়েছিলেন চট্টগ্রামের জননেতা এমএ আজিজ আর বঙ্গবন্ধু দিলেন চট্টগ্রামেরই আরেক কৃতী সন্তান রেজাউল হক মুশতাক। তিনি তখন ঢাকার ছাত্রলীগ নেতা।
ষাটের দশককে বলা হয় বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের চূড়ান্ত বিকাশের দশক। সে সময় বিকাশমান বাঙালি জাতীয়তাবাদকে বিকশিত করার জন্য যে কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা অক্লান্ত শ্রম, ত্যাগ ও কঠোর মনোবল নিয়ে সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ছাত্রলীগকে সংগঠিত করেছিলেন। তাদের মধ্যে রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
আনোয়ারা থানার ভিংরোল গ্রামের মরহুম নুরুল হক চৌধুরী ও মুসলিম আরা বেগমের পুত্র রেজাউল হক মুশতাক মুসলিম হাইস্কুল থেকে ১৯৬৭ সালে এস.এস.সি পাস করে পিতার ইচ্ছায় ও জননেতা মরহুম এমএ আজিজের অনুপ্রেরণায় ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। এখানেও লেখাপড়ার পাশাপাশি উত্তপ্ত ছাত্র আন্দোলনের ছোঁয়ায় তিনি আরও উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার ঘটনাবলি প্রত্যক্ষভাবে কাছ থেকে দেখার সুযোগ লাভ করেন। এই সময় তৎকালীন রাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্যমণি শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম পুত্র শেখ কামালের সাথে সহপাঠী হিসেবে তাঁর পরিচয় ঢাকা কলেজেই।
১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ঢাকার প্রাণকেন্দ্রের ঐতিহ্যবাহী এ কলেজে ছাত্র আন্দোলনের জন্য সে সময় গুরুত্ব ছিল বহুমাত্রিক। ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড তুলে ধরার জন্য রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক ও শেখ কামালের যৌথভাবে ‘প্রতিধ্বনি’ নামে বুলেটিন প্রকাশের কথা আগেই বলা হয়েছেন। মোহাম্মদ আমিনুর রহমান সম্পাদিত এ বুলেটিনে তৎকালীন ছাত্র আন্দোলনের খবরাখবরের পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ঘটনাবলীও প্রকাশিত হতো।
ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের সময় তিনি ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি গণ আন্দোলন সংগঠনের পাশাপাশি ঢাকা নগরে বিভিন্ন স্কুল কলেজে কমিটি গঠনের মাধ্যমে ছাত্রলীগকে সংগঠিত করেন। উল্লেখ্য যে, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল উক্ত কমিটির ক্রীড়া সম্পাদিকা ছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সহঃদপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হন।
জনাব মুশতাক ৭০-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচন কার্যক্রমে ছাত্র সমাজের পক্ষে কেন্দ্রীয় প্রচার কার্যক্রমে নিজ থানা আনোয়ারা’য় নির্বাচনী প্রচারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন এবং পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য ছিলেন। স্বাধীনতা পরবর্তীতে তিনি ১৯৭২ সালে সফলতার সাথে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সহ-সভাপতি ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ ও ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্‌্রবিজ্ঞানে যথাক্রমে অনার্স ও এম.এ. ডিগ্রী লাভ করেন। তাঁর স্ত্রী নাজনীন চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্‌্রবিজ্ঞানে অনার্সসহ এম.এ. পাস করেন। এরপর মুশতাক সম্পর্কে আর কিছু না বললেও বোধ করি চলে। তবুও বলা যায়, যেমন চট্টগ্রাম সমিতি-ঢাকা একটি বৃহৎ ক্ষেত্র, সেখানে তিনি প্রভূত অবদান রেখেছেন ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি উদঘাটনের বিষয় যদি সামনে এসে না দাঁড়াত, তাহলে চট্টগ্রাম সমিতিই হয়তো তাঁর অবদানের বৃহৎ ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়াত এবং তাকেই বড় করে দেখতে হতো। মুশতাক তিনদফা চট্টগ্রাম সমিতি ঢাকার সাধারণ সম্পাদক (১৯৯০-৯১, ১৯৯৬-৯৭, ১৯৯৮-৯৯) এবং এক দফা সভাপতি ছিলেন (২০১২-২০১৩)। পদ দিয়ে নয়, চট্টগ্রাম সমিতিতে তাঁর অবদান নির্ণয় করতে হবে তাঁর বহুতর কর্মকৃতি দিয়ে। যেমন চট্টগ্রাম সমিতিতে তিনি তারুণ্যের রক্ত সঞ্চার করেছিলেন। তোপখানা রোডের একটি নোনা ধরা শ্যাওলা পড়া জীর্ণ ভবনে স্থিত চট্টগ্রাম সমিতির অফিসের সার্বক্ষণিক বাসিন্দা ছিলেন সাংবাদিক ছৈয়দ মোস্তফা জামাল সাহেব, হয়তো তাঁর ভাই এশিয়া, আমার বন্ধু সাতকানিয়ার শামসুদ্দিন ও পটিয়ার আতাউল কবির এবং কেয়ারটেকার আলম। আরো কোন আবাসিক থাকলেও আমি তাঁর বা তাদের নাম বিস্মৃত হয়েছি। সেজন্য ক্ষমাপ্রার্থী।
শতবর্ষ প্রাচীন চট্টগ্রাম সমিতিকে নবজীবন দান করেছেন রেজাউল হক মুশতাক। সমিতির নবরূপায়ন ঘটেছে তাঁর হাতে। আজ চট্টগ্রাম সমিতির যে আড়ম্বর, প্রেস্টিজ, চাকচিক্য পরিলক্ষিত হয়, সমিতির ইতিহাসে মুশতাকের মত কর্মকর্তার আগমন না ঘটলে হয়তো এসব হতো না। মান্ধাতার আমলের জরাজীর্ণ একটি সমিতিই হয়ে থাকতো চট্টগ্রামের নামাঙ্কিত সমিতিটি।
ঢাকায় চট্টগ্রামবাসীর স্থায়ী ঠাঁই গড়ে দেবার জন্য স্বপ্ন দেখছিলেন রেজাউল হক মুশতাক। সত্যিই একদিন তাঁর সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিলো। ঢাকার কেন্দ্রস্থল পল্টন তোপখানা রোড, যার দক্ষিণ পাশে বাংলাদেশের মস্তিস্ক সচিবালয়, সেখান পাকিস্তান-উত্তর ক’বছর ইডেন গার্লস কলেজের ক্লাশ হতো তো তোপখানা রোডের দিয়ে উত্তর পাশ ধরে হাঁটলে ৩২ নম্বর হোল্ডিংয়ে চোখে পড়বে একটি সুদৃশ্য সাইনবোর্ড যাতে লেখা রয়েছে ‘ঢাকার বুকে একখন্ড চট্টগ্রাম’। অর্থাৎ চট্টগ্রাম সমিতির নিজস্ব ঠিকানা-বহুতল ভবন। কী নেই সেই ভবনে- এক ছাদের নিচে লাইব্রেরি, আর্কাইভস, মিলনায়তন, ডরমিটরি প্রভৃতির চমৎকার সহাবস্থান । চট্টগ্রামের জন্য এমনি এক ভূখন্ডেরই স্বপ্ন দেখেছিলেন মুশতাক।
২০১২-১৩ খ্রিস্টাব্দে রেজাউল হক মুশতাক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়ে উল্লেখযোগ্য যে কাজটি করেন, যেটি তাঁর আগে পরে আর কেউ করেননি। চট্টগ্রামের যেসব লেখক সাহিত্য চর্চা করেন, তিনি তাদেরকে নিয়ে ঢাকায় সমিতি ভবনে চট্টগ্রাম লেখক সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন। এই সম্মেলন চট্টগ্রামের নবীন- প্রবীণ লেখকদের মধ্যে বিপুল উৎসাহের সঞ্চার করে। চট্টগ্রামে সাহিত্যিচর্চায় জোয়ার আসে এবং একটি নতুন সাহিত্যিকগোষ্ঠী গড়ে ওঠে।
লেখক : সাবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা, সংস্কৃতি সংগঠক

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাপ্তাইয়ের মারমা পাড়া ৫৮ বছর পর বিদ্যুতের আলো
পরবর্তী নিবন্ধপাঁচলাইশে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় হামলা