তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, মুজিববর্ষ আমরা যেভাবে পালন করতে চেয়েছিলাম করোনার কারণে সেভাবে পালন করতে পারছি না। মুজিববর্ষের শেষের দিকে এসে আজকে নানাভাবে নানা প্রসঙ্গ টেনে বিতর্ক তৈরি করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। একটি অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আজকে সমাজে অস্থিরতা তৈরি করার অপচেষ্টা হচ্ছে। আমাদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কোনোভাবেই কোনো ইস্যুতে বঙ্গবন্ধুর অবমাননা সহ্য করা হবে না।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে গতকাল শনিবার সকালে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল কর্তৃক চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবকে বই বিতরণ অনুষ্ঠান ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু একদিকে যেমন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, ঠিক একইভাবে তিনি বিশ্ব ইতিহাসে সেরা নেতাদের মধ্যে একজন। নানা ইস্যু তৈরি করে যারা বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা ও সমাজে হানাহানি সৃষ্টি করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের সোচ্চার হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, সাংবাদিকরা দেশের মানুষকে পথ দেখায়। আমাদের স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনে যেমন সাংবাদিকদের অনন্য ভূমিকা ছিল, একইসাথে স্বাধীনতা সংগ্রামেও সাংবাদিকদের অনবদ্য ভূমিকা ছিল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতার জন্য সাংবাদিকদের লেখনি মনন তৈরি করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে। যারা সমাজকে পিছিয়ে দিতে চায়, যারা মধ্যযুগের সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়, তাদেরকে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করে, তাদের বিরুদ্ধেও আজ কলম নিয়ে সোচ্চার হবার সময় এসেছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রেস কাউন্সিলের ক্ষমতা বৃদ্ধি করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। প্রেস কাউন্সিল আইন সংশোধনের পর্যায়ে রয়েছে। চেষ্টা করছি আগামী সংসদ অধিবেশনে সেটি উপস্থাপনের জন্য। এ আইন পাস হলে প্রেস কাউন্সিলের ক্ষমতা অনেক বাড়বে। এতে জনগণ এবং সাংবাদিকরাও প্রেস কাউন্সিলের দ্বারস্থ হয়ে প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে পারবে।
মন্ত্রী বলেন, সংবাদ মাধ্যমের সাথে পাঠকের কোনো বিরোধ সৃষ্টি হলে সেটি নিরসন করার লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেন। এক্ষেত্রে বিচারিক পর্ষদ হিসেবে প্রেস কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কিন্তু ৭৪ সালের পর ৪৫ বছরের বেশি কেটে গেছে, এখন প্রেস কাউন্সিলের যেটুকু ক্ষমতা আছে সেইটুকু ক্ষমতা আজকের প্রেক্ষাপটে খুব বেশি কার্যকর নয়। এজন্য প্রেস কাউন্সিল আইন যুগোপযোগী করতে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, মানুষ ধীরে ধীরে বই থেকে দুরে সরে যাচ্ছে। এখন খুব কম মানুষ বই পড়ে। বই পড়ার অভ্যাস আবারো ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। জীবন সংগ্রামে জয়ী হওয়ার জন্য নতুন প্রজন্মের মাঝে বই পড়ার প্রবণতা ফিরিয়ে আনতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, প্রেস কাউন্সিলের সদস্য ও প্রাচীনতম দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এমএ মালেক সাহেব চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ করার কথা বলেছেন। বঙ্গবন্ধু কর্নার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে হবে। আমরা প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সাথে প্রেস ক্লাবের একটা সেতুবন্ধন তৈরি করতে চাই।
তিনি বলেন, করোনাকালীন যেসব সাংবাদিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের পাশে ছিলেন। করোনার পর দেশের প্রতিটি জেলায় প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল থেকে সাংবাদিকদের অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কারণ বর্তমান সরকার গণমাধ্যমের প্রতি আন্তরিক।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রেস কাউন্সিলের সদস্য ও দৈনিক আজাদী সম্পাদক এমএ মালেক, প্রেস কাউন্সিলের সদস্য ও বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব এমএ মজিদ, বিএফইউজের সহ-সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সালাউদ্দিন মো. রেজা, ও সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন প্রেস কাউন্সিলের সচিব (যুগ্ম সচিব) শাহ আলম।
প্রেস কাউন্সিলকে সক্রিয় করার পরামর্শ দিয়ে দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, প্রেস কাউন্সিলকে নিয়ে আমরা গর্ব করি। কিন্তু প্রেস কাউন্সিলকে অনেকেই চিনে না। প্রেস কাউন্সিলকে যুগোপযোগী করা গেলে সমাজের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য ভালো হবে। এর জন্য একটি আইন করতে হবে। পত্রিকা সংক্রান্ত সকল মামলা যেন প্রথমে প্রেস কাউন্সিলে যায়, সেখানে যদি তিনি (বাদীপক্ষ) সন্তুষ্ট না হন, তাহলে তিনি পরবর্তীতে আদালতে যেতে পারবেন। অনেকেই সংবাদ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং মানহানির মামলা করেন; যার যেখানে ইচ্ছে সারা দেশে মামলা করেন। সেটা না করে প্রথমে প্রেস কাউন্সিলে গেলে প্রেস কাউন্সিল অনেক বেশি কার্যকর হবে এবং কোর্টে মামলা অনেক কমে যাবে। সাংবাদিকদের হয়রানি অনেক কমে যাবে। জনগণ উপকৃত হবে, সংবাদ মাধ্যমও উপকৃত হবে।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ করার জন্য প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, প্রেস কাউন্সিল থেকে দেশের বিভিন্ন প্রেস ক্লাবে বঙ্গবন্ধু কর্নার করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবেও করার কথা। আমাদের চেয়ারম্যান সাহেব তার মেয়াদের মধ্যেই এখানে বঙ্গবন্ধু কর্নার করবেন বলে আমি আশাবাদী। এখানে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপিত হলে এই কর্নারে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও সাংবাদিকতা বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো স্থান পাবে। সাংবাদিক এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা বইগুলো পড়ে উপকৃত হবে।
২০১৪ সালে নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাইয়ের একটি বক্তৃতার উদ্ধৃতি দিয়ে আজাদী সম্পাদক বলেন, ‘একটি কলম, একটি বই, একটি শিশু পৃথিবী বদলে দিতে পারেন।’ বই আমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে যায়। মানুষের আলোকিত জীবনের উপকরণ হচ্ছে বই। পৃথিবীতে বিনোদনের কত কিছুই তো আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু সেগুলো বই পড়ার নির্মল আনন্দের সমতুল্য হতে পারেনি। মজার কোনো বইয়ের বিষয়বস্তু বা ঘটনা মানুষ সহজে ভুলে না। বই-ই মানুষের অনুভূতিকে সজীব রাখে। বই ছাড়া একটি ঘর আত্মা ছাড়্া দেহের মতো।
প্রেস কাউন্সিলের সদস্য ও বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব এমএ মজিদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এক ও অভিন্ন। এই আদর্শ থেকে যখনই বিচ্যুত হই তখনই আমরা পিছিয়ে পড়ি।
অনুষ্ঠানে প্রেস কাউন্সিল কর্তৃক চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবকে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে ৮৫টি বই প্রদান করা হয়। তথ্যমন্ত্রী চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের হাতে এসব বই তুলে দেন।