গ্যাসের চাহিদা মোকাবেলায় প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন

| রবিবার , ৬ ডিসেম্বর, ২০২০ at ১০:১১ পূর্বাহ্ণ

গ্যাস জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে জনসংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে প্রাকৃতিক জ্বালানি কমছে। ফলে গৃহস্থালি কাজে গ্যাসের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে এবং তা বাড়তেই থাকবে। অন্যদিকে শিল্পকারখানায় বাড়ছে এই চাহিদা। এই বাড়তি চাহিদা মোকাবিলার জন্য যেমন প্রয়োজন আশু ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং সেই পরিকল্পনার যথাযথ বাস্তবায়ন। গত ২ ডিসেম্বর ‘গ্যাস বিক্রিতে দৈনিক ক্ষতি পৌনে ৯ কোটি টাকা, ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে আজাদীতে। এতে বলা হয়েছে, আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্পখাত মিলিয়ে চট্টগ্রাম গ্যাসের গ্রাহক ৬ লাখের বেশি। আবাসিক গ্রাহক ৫ লাখ ৯৮ হাজারের কাছাকাছি। শিল্প গ্রাহক রয়েছে ১১২৭, বাণিজ্যিক গ্রাহক ২৮৬২, ক্যাপটিভ পাওয়ার ১৯০, সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন ৭০টি, বিদ্যুৎকেন্দ্র ৫টি ও সার কারখানা রয়েছে ৪টি। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা থাকে ৪৮০-৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এলএনজি আমদানির আগে চাহিদার বিপরীতে চট্টগ্রামে ২০০ মিলিয়ন ঘনফুটের কম গ্যাস পেত গ্রাহকরা। বর্তমানে ৩০০-৩২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাচ্ছে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) ২০১৯ সালের ৩০ জুন জারি করা সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনে কেজিডিসিএলের গ্রাহকদের জন্য গ্যাসের মূল্যহার নির্ধারণ করে দেয়। ওই প্রজ্ঞাপনে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য ৪ টাকা ৪৫ পয়সা, ক্যাপটিভ পাওয়ারের জন্য ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা, সার কারখানার কাঁচামাল হিসেবে ৪ টাকা ৪৫ পয়সা, শিল্প কারখানা ও চা বাগানের জন্য ১০ টাকা ৭০ পয়সা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ২৩ টাকা, সিএনজি স্টেশনের জন্য প্রতি ঘনমিটার ৪৩ টাকা এবং আবাসিকে মিটারভিত্তিক ব্যবহারের জন্য ১২ টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।
পেট্রোবাংলার উপ-মহাব্যবস্থাপক (এলএনজি) মো. শাহ আলম বলেন, গ্যাসের সংকট কাটাতে এলএনজি আমদানি শুরু করেছে। সরকার দুই বছর ধরে ভর্তুকি দিয়ে গ্রাহকদের আমদানিকৃত এলএনজি সরবরাহ করছে, যা হিসেব করলে অনেক টাকা।
ভর্তুকি দিয়ে হলেও গ্রাহকদের কাছে গ্যাস সরবরাহ করা সরকারের দায়িত্ব বলে কাজটি করে যাচ্ছে নিরবচ্ছিন্নভাবে। যত বেশি সংযোগ, তত বেশি ভর্তুকি। আবাসিকে নতুন গ্যাস সংযোগ এখন বন্ধ রয়েছে। সেটা চালুর ব্যবস্থা করতে হবে। পত্রিকান্তরে গ্যাসখাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র দেখে অবাক হয়েছি বারবার। অবৈধ সংযোগের ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকা। সেই অবৈধ চুলাগুলো বৈধতায় নিয়ে এসে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে অনেক আয় জমা হতো সরকারের কোষাগারে।
জানা গেছে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে কিছু ব্যাখা চেয়েছে। এসব ব্যাখার উত্তর দেওয়ার পরপরই আবাসিকে নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। নতুন বছরের জানুয়ারিতে দরপত্র আহ্বান করার পর মার্চে-ই আবাসিকে নতুন গ্যাস সংযোগ পাবেন গ্রাহকরা। উল্লেখ্য, প্রায় ১০ বছর ধরে আবাসিকে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে। ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে গঠিত কমিটি শহরাঞ্চলে গ্যাসের নতুন আবাসিক সংযোগ চালু করার সুপারিশ করে। বিদেশ থেকে আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) পাইপলাইনের মাধ্যমে আবাসিকে সরবরাহ করার কথা বলে এই কমিটি। কিন্তু গত দেড় বছরেও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
জানা যায়, চট্টগ্রাম অঞ্চলে পুরনো ২৫ হাজার আবেদনকারী রয়েছে। আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হলে আরও ৫০ হাজার যুক্ত হবে। সবমিলিয়ে ৭৫ হাজারেরও বেশি নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়া হতে পারে। ২০০৯ সালের ২১ জুলাই থেকে শিল্প ও বাণিজ্যিকে নতুন গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ করা হয়। এরপর ২০১০ সালের ১৩ জুলাই থেকে আবাসিকেও নতুন গ্যাস-সংযোগ বন্ধ করা হয়। ২০১৩ সালের ৭ মে আবাসিকে সংযোগ দেওয়া শুরু হলেও কিছুদিন পরই তা আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়।
জনজীবনে মৌলিক উপাদানের সমস্যা মোকাবেলায় নারীদের হিমশিম খেতে হয়। গৃহস্থালি বা আবাসিক কাজে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা এখন সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে আবাসিক কাজে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন স্বাভাবিক কারণেই। আবাসিক গ্যাস ব্যবহারকারীরা স্বল্প গ্যাস ব্যবহার করে থাকেন এবং অতি প্রয়োজনীয়, বিশেষ করে খাবার প্রস্তুতের কাজে এ গ্যাস ব্যবহার হয়ে থাকে। সুতরাং এ সরবরাহ কোনোক্রমেই ব্যাহত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধুর অবমাননা সহ্য করা হবে না
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬