বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে বাঙালির স্বপ্নকে স্তব্ধ করে দেয়া হয়েছিল

শেখ হাসিনা পিতার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছেন : ওয়াসিকা এমপি ।। চট্টগ্রাম মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সভায় তথ্যমন্ত্রী

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৭ আগস্ট, ২০২২ at ৭:৩৭ পূর্বাহ্ণ

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা শুধুমাত্র একটি নেতাকে কিংবা পরিবারকে হত্যা করা নয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে হত্যা করার লক্ষ্যেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বপ্নকে স্তব্ধ করে দেয়া হয়েছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গতকাল শনিবার বিকালে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা ইউনিট কমান্ডের যৌথ উদ্যোগে নগরীর আন্দরকিল্লাস্থ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন চত্বরে আয়োজিত দ্বিতীয় দিনের আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শুধু বাঙালিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন তা নয়, বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন বাংলাদেশ একটি উন্নত সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হবে। দেশকে পুনর্গঠিত করে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকাভূক্ত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ যে দেশকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানী সেনাবাহিনী, জনপদের পর জনপদ, গ্রামের পর গ্রাম, এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত যেখানে ধুলির সাথে ছাইয়ে পরিণত করেছিল, পুরো বাংলাদেশ, সেই ছাইয়ের ভস্ম থেকে বাংলাদেশ পুনর্গঠিত করার কাজ শুরু করলেন এবং পুনর্গঠন করেছেন। এক কোটি মানুষ বারতে আশ্রয় নিয়েছে, আরো ২ কোটি মানুষ দেশের অভ্যন্তরে ঘর-বাড়ি ছাড়া হয়েছে। সেই মানুষ গুলোকে তিনি পুনর্বাসিত করেছেন। পুরো একটি দেশকে পরিপূর্ণভাবে কাঠামোর উপর দাঁড় করিয়েছেন। স্বল্প উন্নত দেশের তালিকাভূক্ত করেছেন। যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয় ১৯৭৫ সালে তখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ অর্থাৎ সাড়ে ৯ শতাংশ। যদি বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতেন বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে এই সাড়ে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারতো তাহলে স্বাধীনতার ১৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ একটি আধুনিক উন্নত সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হতো। বঙ্গবন্ধু যখন সাড়ে ৯ শতাংশের বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিলেন ১৯৭৪-৭৫ অর্থ বছরে তখন সেই সময় সিঙ্গাপুর জেলে পল্লী থেকে মাথা উচু করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। মালেশিয়া তখনো ঘুমাচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়া তখনো ঘুমাচ্ছে। তারা আমাদের চেয়েও দরিদ্র ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার মধ্যদিয়ে বাঙালির সেই স্বপ্নকে হত্যা করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আজকে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এখন স্বল্প উন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত রূপান্তরিত হয়েছে। খাদ্য ঘাটতির দেশ থেকে খাদ্যে উদ্বৃত্তের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। করোনা মহামারির মধ্যে আমাদের মাথা পিছু আয় ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তান সর্বক্ষেত্রে আমাদের চেয়ে এগিয়ে ছিল। আমরা আজ থেকে ৭-৮ বছর আগে সমস্ত সূচকে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে গেছি। আমরা মানব উন্নয়ন সূচকে, সামাজিক সূচকে, অর্থনৈতিক সূচকে-স্বাস্থ্য সূচকসহ সমস্ত সূচকে পাকিস্তানকে অতিক্রম করেছি। আমরা অনেক সূচকে বিশেষ করে মানব উন্নয়ন সূচক, সামাজিক সূচক এবং অর্থনৈতিক সূচকের ক্ষেত্রে-মাথা পিছু আয়ের ক্ষেত্রে ভারতকে অতিক্রম করেছি। আজকে আপনারা যারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন, দেশকে স্বাধীন করেছেন, আপনাদের কাছে অনুরোধ জানাবো এখনো অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যেমন ষড়যন্ত্র হয়েছিল সেই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় ১৫ আগস্ট ঘটানো হয়েছিল। আজকেও অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আপনাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং ষড়যন্ত্রকারীদের বিষ দাঁত ভেঙ্গে দিতে হবে। তাদের মুখোশ উন্মোচিত করতে হবে।
অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি বলেছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক কলঙ্কময় অধ্যায় যুক্ত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নয়নের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যেত। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা তা হতে দেয়নি। তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর পিতার সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন। যারা স্বাধীনতা বিরোধী ও বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারের হত্যার মদদ দিয়েছে তাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে। শোককে শক্তিতে রূপান্তরের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে জানার কোনো শেষ নেই। তিনি অত্যন্ত দুরদর্শী নেতা ছিলেন। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠাই তিনি আজীবন যুদ্ধ করে গেছেন। যে ব্যক্তি আজীবন দেশের স্বাধীনতা ও এদেশের মানুষের জন্য ত্যাগ করে গেছেন তাঁকেই সপরিবারে নিষ্ঠুরতম হত্যাকান্ডের শিকার হতে হয়েছে। আমরা দুর্ভাগা জাতি। বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছে তারাই আজ ইতিহাস বিকৃত করছে। নতুন প্রজন্মের কাছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সন্তানদেরকে সরকারের উন্নয়নের মহাসড়কে সামিল হতে হবে। জাতির পিতা হত্যাকারী ও ইতিহাস বিকৃতকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা জরুরি।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিটের ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল হক চৌধুরী সৈয়দের ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. সরওয়ার আলম চৌধুরী মনির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত শোক দিবসের দ্বিতীয় দিনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন তথ্য ও সস্প্রচার মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি। প্রধান বক্তা ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম. শাহজাহান, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিটের সহকারী কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা এফ এফ আকবর খান, জেলা ইউনিটের সহকারী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক, রাঙ্গুনিয়া কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল বশর মুন্সী ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড মহানগর কমিটির যুগ্ন আহ্বায়ক মিজানুর রহমান সজীব। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা ইউনিটের অধীন সর্বস্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সন্তান কমান্ডের নেতৃবৃন্দরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
আজ ৭ আগস্টের কর্মসূচি : আজ ৭ আগস্ট রোববার বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিতব্য আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি। প্রধান বক্তা থাকবেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আলহাজ্ব আ জ ম নাছির উদ্দিন। বিশেষ অতিথি থাকবেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ডা. মোহাম্মদ ইসমাইল খান, জেলা পুলিশ সুপার এস.এম. রশিদুল হক, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য মাহমুদ সালাউদ্দিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইমাম হোসাইনের (রা.) শাহাদাতের সিঁড়ি বেয়ে বিশ্বজুড়ে ইসলামের পতাকা উড়ছে
পরবর্তী নিবন্ধআইএমএফের ঋণ পেতে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি : ফখরুল