‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে অসামপ্রদায়িক চেতনা ধ্বংসের অপচেষ্টা হয়েছে’

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১১ অক্টোবর, ২০২০ at ৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, যেই অসামপ্রদায়িক চেতনার ভিত্তিতে সবার রক্তস্রোতের বিনিময়ে বাংলাদেশে স্বাধীন হয়েছিল ৭৫ এর ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে সেটা ধ্বংসের অপচেষ্টা করা হয়েছে। এই রাষ্ট্রে ধর্ম যার যার, উৎসব কিন্তু সবার, এই শ্লোগানে আমরা বিশ্বাস করি। আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এই নীতিতে বিশ্বাস করেন, সেই কারণে এই কথা তিনি সব সময় বলেন। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান মুসলিম সবার মিলিত রক্তস্রোতের বিনিময়ে এই দেশের অভ্যুদয় হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রকে উল্টো পথে হাঁটানোর চেষ্টা করা হয়। দীর্ঘ ২১ বছর রাষ্ট্র উল্টো পথে হেঁটেছে। এরপর ৯৬ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর যে চেতনার ভিত্তিতে রাষ্ট্র রচিত হয়েছে সেই চেতনা গুলোকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করেছে। গতকাল শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃক দুস্থ ও মন্দিরের অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এ জেড এম শরীফ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি বাবুল চন্দ্র শর্মা, উত্তম কুমার শর্মা, চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শ্যামল কুমার পালিত, সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার দেব প্রমূখ।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, দেশ ভাগ হয়েছিল সামপ্রদায়িকতার ভিত্তিতে। আমরা দেশ ভাগের সময় পাকিস্তান রাষ্ট্র পেয়েছিলাম সামপ্রদায়িকতার ভিত্তিতে। যেখানে ধর্মীয় পরিচয়টাকে মুখ্য হিসেবে গণ্য করা হতো। কিন্তু আমরা বাঙালিদের আবহমানকাল ধরে লালিত সংস্কৃতি হচ্ছে আমাদের কাছে ধর্মীয় পরিচয় মুখ্য নয়। আমাদের কাছে বাঙালি পরিচয় হচ্ছে মুখ্য। যখন আমরা দেখতে পেলাম ধর্মীয় পরিচয় মুখ্য করতে গিয়ে আমাদের বাঙালি পরিচয়ের ওপর আঘাত আসছে, বাঙালির কৃষ্টি-সংস্কৃতির উপর আঘাত আসছে, বাংলা ভাষার উপর আঘাত আসছে। তখন আমরা সেই সামপ্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার লক্ষ্যে জাতির পিতার নেতৃত্বে স্বাধীনতার যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে যখন পূজা উৎসব হয়, তখন সেটা শুধু হিন্দু ধর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনা, সেই উৎসবে মুসলমান-খ্রিস্টান-বৌদ্ধ সবার মাঝে সেই উৎসবের আনন্দ সঞ্চারিত হয়। আমাদের দেশে যখন ঈদ উৎসব হয় সেই আনন্দ শুধু মুসলমান সমপ্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনা। একইভাবে যখন প্রবারণা পূর্ণিমা হয় তখন ফানুস উড়ানোর উৎসব শুধু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকেনা। এটিই হচ্ছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সৌন্দর্য। এটাই হচ্ছে অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ। কিন্তু এখানে মাঝেমধ্যে সামপ্রদায়িকতাকে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। যেটি আমাদের সরকার কঠোর হস্তে দমন করতে বদ্ধপরিকর।
আজকে বাংলাদেশ সমস্ত অর্থনৈতিক-মানব উন্নয়ন-সামাজিক সূচকে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে। মানব উন্নয়ন ও সামাজিক সূচকে অনেক ক্ষেত্রে ভারতকেও পেছনে ফেলেছি আমরা। এসব সম্ভব হয়েছে রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি, এটিকে অব্যাহত রাখতে হবে। সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড় বাংলাদেশের হিন্দু সমপ্রদায়ের জন্য নয় শুধু পৃথিবীর সকল হিন্দু সমপ্রদায়ের জন্য তীর্থস্থান উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সেখানে কিন্তু সবাই উঠতে পারেনা, সে জন্য একটা ব্যবস্থা হওয়া প্রয়োজন। আমি অনেকের সাথে আলাপ করেছি, আমার মনে হয় হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট একটি উদ্যোগ নিতে পারে, কিভাবে কি করা যায়। চট্টগ্রামের মানুষ হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভূমিমন্ত্রীর সঙ্গে চসিক প্রশাসকের সাক্ষাৎ
পরবর্তী নিবন্ধসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী কাজ করছেন