বই পড়ার মানসিকতা সৃষ্টি করতে হবে

রূপম চক্রবর্ত্তী | সোমবার , ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৬:৫০ পূর্বাহ্ণ

বই পড়ার অভ্যাস হতে আমাদের নতুন প্রজন্ম দিনদিন দূরে সরে যাচ্ছে। ছোট বেলায় মা বাবার অজান্তেই অনেক বই কিনেছি এবং পুরো বইটা মনোযোগ সহকারে পড়েছি। বই বাদ দিয়ে আমাদের সন্তানদের কেউ কেউ ভিন্ন পথে পরিচালিত হচ্ছে দেখে অনেক সময় মর্মাহত হয়ে পড়ি। কেউ খারাপ পথে পরিচালিত হোক এটা আমাদের কাম্য হতে পারেনা। অনেক কিশোর অপরাধী এমনভাবে মগজ ধোলাই পাই যার জন্য তাদের কাছে অপরাধ করার পর কোনো অনুশোচনা থাকেনা। এই ধরনের অপরাধী তার কৃতকর্মের জন্য এমন সব যুক্তি দাঁড় করায় যাতে তার কোনো অপরাধবোধ বা অনুশোচনা থাকে না। কোনো কোনো কিশোর অপরাধী এমনভাবে নিজেকে উপস্থাপন করে যেখানে দেখা যায় তারা সমাজে আইন মেনে চলা মানুষকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে যাতে এমন মনোভাব প্রকাশ পায় যে তারা প্রচলিত আইনকে সম্মান করে এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করে। এই থিওরির আলোকে একজন কিশোর অপরাধী প্রথমত দায়বদ্ধতা অস্বীকার, তারপর আঘাত অস্বীকার, ভুক্তভোগীকে অস্বীকার, নিন্দুকের নিন্দা এবং উচ্চতর আনুগত্য এই পাঁচটি টেকনিকের নিরিখে নিজেকে সঠিক হিসেবে জাহির করে। আবার কোনো কিশোর অপরাধী চাল চলনে খুব ভয়ংকর হয়ে উঠে। তারা কিছুকে তোয়াক্কা করেনা। বড় জনদের সম্মান করেনা। এরা জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে। এই কিশোরেরা সমাজের মধ্যে নিজেদের মতো করে নতুন এক সমাজ গড়ে তুলছে। ওই সমাজের সংস্কৃতি, ভাষা, বিশ্বাস, মূল্যবোধ, আচার-আচরণ সবকিছু আলাদা। মারামারি, ছিনতাই, চুরি, পাড়া বা মহল্লার রাস্তায় মোটরসাইকেলের ভয়ঙ্কর মহড়া, মাদক এবং ইয়াবা সেবন ও বিক্রি, চাদাঁবাজি, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা এমনকি খুনখারাবিসহ বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ছে ভবিষ্যত সমাজের অপার সম্ভাবনাময়ী তরুণ এবং কিশোর সদস্যরা। এই কিশোরদের উদ্ধার করতে হবে। এদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। খবরের কাগজ খুললেই বিভিন্ন সময় কিশোর গ্যাং নিয়ে লেখালিখি হচ্ছে। বিপথগামী শিশু ও তরুণ সমাজের একটি বড় অংশ এখন গ্যাং কালচারের সঙ্গে যুক্ত। শহর থেকে এখন গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়েছে এমন অপরাধের ঢেউ। শিশু কিশোরদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভয়ঙ্কর এই গ্যাং সংস্কৃতি।
গ্যাং সংস্কৃতির পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে অতিরিক্ত ইন্টারনেট প্রীতি। ভবিষ্যত প্রজন্ম নিয়ে অভিভাবক মহল থেকে শুরু করে সমাজবিজ্ঞানী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। বিশ্বের অন্য দেশের শিশু, কিশোররাও নিজেদের যুক্ত করেছে বেপরোয়া গ্যাং কালচারের সঙ্গে। এই কালচার যদি চরমে উঠে দেশের কেউ ভালো থাকতে পারবেনা। প্রতিটি কিশোরকে বাঁচাতে হবে। উগ্রতা না শিখিয়ে ধর্মীয় মূল্যবোধের সঠিক নির্যাসগুলো তাদের কাছে তুলে ধরতে হবে। লেখাপড়া জানা কিছু ছাত্রের পাশাপাশি নিম্ন আয়ের কম লেখাপড়া জানা ব্যক্তিদের সন্তানগুলো টাকা পয়সার লোভে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ছে। যত প্রযুক্তির উন্নয়নের জোয়ারে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি তত অপরাধী কিশোরের সংখ্যাও বাড়ছে। তাই চলুন পর্যাপ্ত কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের কিশোরদের আলোর পথ দেখানোর চেষ্টা করি। একজন সন্তানের উপর তার মা বাবার অনেক আশা থাকে। অনেক স্নেহ মমতা আর ভালোবাসায় একজন সন্তানকে তার মা বাবা গড়ে তোলেন। প্রতিটি সন্তান সুসন্তান হয়ে দেশের সেবাই আত্মনিয়োগ করুন। সব রকম মাদকতা,হিংসা, অহংকার আর অন্যায়কে আমাদের কিশোররা ঘৃণা করতে পারে। আমাদের সন্তানদের হাতে ভালো বই তুলে দিতে হবে যাতে তারা বই প্রেমিক হতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতোমাকে চাই
পরবর্তী নিবন্ধযতীন্দ্রমোহন বাগচী : রবীন্দ্রযুগের বিশিষ্ট কবি