ফয়েজ আহ্মদ – বরেণ্য সাংবাদিক, মননশীল সাহিত্যিক, প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে খ্যাতিমান। সাম্প্রদায়িকতা ও প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে আজীবন সোচ্চার ফয়েজ আহ্মদ মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এদেশের শিল্প, সংস্কৃতি ও রাজনীতিকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। আজ তাঁর অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী।
ফয়েজ আহ্মদের জন্ম ১৯২৮ সালের ২ মে বিক্রমপুরের বাসাইলডোগ গ্রামের এক সামন্ত পরিবারে। কিন্তু পারিবারিক পরিবেশ তাঁর মানসগঠনে প্রভাব ফেলেনি। চল্লিশের দশকে দেশ বিভাগ, ভারত ছাড় আন্দোলন, মহা মন্বন্তর প্রভৃতি পারিপার্শ্বিকতা তাঁর ব্যতিক্রমী হয়ে ওঠার পেছনে বিশেষ অবদান রেখেছিল। লেখালেখির প্রতি আকর্ষণ ছেলেবেলা থেকেই। ষোল বছর বয়সে সান্নিধ্য লাভ করেন কবি আহসান হাবীব ও হাবিবুর রহমানের। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর ফয়েজ আহ্মদ কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। আমৃত্যু তিনি বাম রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। দায়িত্ব পালন করেন প্রগতিশীল সংগঠন সাহিত্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের। ১৯৪৮-এ আত্মপ্রকাশ করেন সাংবাদিক হিসেবে। সাংবাদিক জীবনে ‘ইত্তেফাক’, ‘সংবাদ’, ‘আজাদ’ সহ বিভিন্ন পত্রিকার সাথে যুক্ত ছিলেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রধান সম্পাদক হিসেবেও কাজ করেছেন। ১৯৭১-এ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে সারা বিশ্বের গণমাধ্যমে বাংলাদেশের খবর প্রচারে তাঁর ভূমিকা ছিল অগ্রণী। বাংলাদেশে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন ফয়েজ আহ্মদ।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে জাহানারা ইমামের সাথে তিনিও ছিলেন অন্যতম কর্মী। ছিলেন গণআদালতের বিচারক। তাঁর নেতৃত্বে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট প্রগতিশীল রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি মহাপ্লাবণ, ঘুর্ণিঝড় প্রভৃতি সংকটকালীন সময়ে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল। ফয়েজ আহ্মদের সাহিত্যিক পরিচয়ও ছিল অনন্য। প্রচুর কাজ করেছেন শিশুদের জন্য। যুক্তিঋদ্ধ ও সুমিত ভাবনাশীল প্রবন্ধ রচনাতে তাঁর অবদান সনিষ্ঠ। বাংলাদেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি, সংবাদ মাধ্যম ও রাজনীতিতে ফয়েজ আহ্মদের অবদান চিরস্মরণীয়। ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ফয়েজ আহ্মদ প্রয়াত হন।