ফ্যাশন টেকনোলজিতে উচ্চশিক্ষার নতুন দ্বার খুলছে চট্টগ্রামে

বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির আনুষ্ঠানিক যাত্রা কাল মার্চ থেকে একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর আশা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২০ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

তৈরি পোশাক খাতকে বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় এক্সপার্টে সমৃদ্ধ করার মাধ্যমে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রাম। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামের যুবসমাজের সামনে খুলে দেয়া হচ্ছে ফ্যাশন টেকনোলজির বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চ শিক্ষার নয়া দুয়ার। শনিবার (২১ জানুয়ারি) আনুষ্ঠানিকভাবে ‘চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (সিবিইউএফটি)’ নামের উচ্চ শিক্ষার বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

আসন্ন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর মার্চের প্রথম দিন থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। প্রথম সেমিস্টারে চারটি বিভাগের প্রতিটিতে ৩৫ জন করে শিক্ষার্থী ভতি করা হবে। বিজ্ঞানে এইচএসসি পাসের পর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া যাবে। ছাত্রছাত্রী ভর্তিতে কোনো ধরনের তদবিরে নয়, মেধাবীদেরই নেয়া হবে। সীমাহীন এক সম্ভাবনার পথে যে যাত্রা তাতে মেধা নিয়ে কোনো ধরনের আপোস করা হবে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

বিশেষায়িত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয় বলে মন্তব্য করে উদ্যোক্তারা বলেছেন, টাকা কামানোর জন্যই এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে না। দেশের একটি সম্ভাবনার দুয়ার খোলার মিশন সামনে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। শুরুতে বিজিএমইএ ভবনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হলেও আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়ে তোলা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার খুলশীর বিজিএমইএ ভবনস্থ বিশ্ববিদ্যালয়টির সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে উপরোক্ত আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সিবিইউএফটি ট্রাস্টি বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন চৌধুরী। এসময় উপস্থিত ছিলেন সিবিইউএফটির উপাচার্য ড. ওবায়দুল করিম, ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান এম এ সালাম, এসএম আবু তৈয়ব, হেলাল উদ্দিন চৌধুরী, এএম চৌধুরী সেলিম, মোহাম্মদ ফরহাত আব্বাস, এমডি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, এসএম সেজাদুল ইসলাম, বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ মো. নজরুল ইসলাম, বিজিএমইএ পরিচালক এম আহসানুল হক, আবদুল মান্নান রানা প্রমুখ।

সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয় যে, আগামী ২১ জানুয়ারি শনিবার নগরীর টাইগারপাসের নেভি কনভেনশন হলে বিকেল ৩টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বিশেষ অতিথি থাকবেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ, এফবিসিসিআইর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। গেস্ট অব অনার থাকবেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।

নাসির উদ্দিন চৌধুরী জানান, ২০০২ সালের ২৭ অক্টোবর বিজিএমইএ ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (বিআইএফটি) নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে ডিপ্লোমা কোর্স চালু করা হয়েছিল। ২০ বছরে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী ডিপ্লোমা এবং অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিংয়ে সার্টিফিকেট কোর্স করে দেশে ও বিদেশে পোশাক শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এর মধ্যে একজন শিক্ষার্থী জাপানে বাংলাদেশি টাকায় ৭ লাখ টাকা বেতনে চাকরি করছে। অনেকে নিজস্ব বুটিক হাউস, ফ্যাশন হাউস গড়ে তুলে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।

চাহিদা বাড়ায় ২০১৩ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (সিবিআইএফটি) চালু করে দক্ষ জনবল তৈরি করে পোশাক শিল্পে নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়। ইতিমধ্যে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে বিদেশি জনশক্তির স্থলাভিষিক্ত হয়েছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, ফ্যাশন ওয়ার্ল্ডে প্রতিনিয়ত তথ্যপ্রযুক্তির আধুনিকায়ন ইত্যাদি বিষয় মাথায় রেখে ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। ২০২২ সালের ২৪ আগস্ট ১০৬তম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সিবিইউএফটির অনুমোদন দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে চারটি বিভাগ চালুর অনুমোদন দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। দুইটি অনুষদে বিভক্ত এসব বিভাগ।

ক্লথিং ও ফ্যাশন টেকনোলজি অনুষদের অধীনে টেঙটাইল অ্যান্ড ক্লথিং টেকনোলজি (টিসিটি) ও ফ্যাশন ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজি (এফডিটি) বিভাগ থেকে বিএসসি কোর্স এবং ফ্যাশন অ্যান্ড অ্যাপারেল ডিজাইন অনুষদে অ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (এএমএম) ও ফ্যাশন ডিজাইন (এফডি) বিভাগ ব্যাচেলর ডিগ্রি দেওয়া হবে। আগামী জুলাইডিসেম্বর সেশনে টেঙটাইল ম্যানুফেকচারিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (এফটিএমই) অনুষদ চালুর পরিকল্পনা আছে। এর অধীনে টেঙটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং (টিই) ও টেঙটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (টিইএম) বিভাগের বিএসসি ডিগ্রি নিতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।

পোশাক কারখানায় বিদেশ থেকে দক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা চলে যেত। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দক্ষ জনবল তৈরি হবে। এতে একদিকে বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচবে, অন্যদিকে বেকারত্ব কমবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চার বছরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থীর গড়ে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা খরচ পড়তে পারে। সিবিইউএফটিতে আন্তর্জাতিক মানের সব সুবিধাই পাবেন শিক্ষার্থীরা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ডিজিটাল ক্লাসরুম, অত্যাধুনিক সুবিধার ল্যাবরেটরি, স্যুইং ল্যাব, টেঙটাইল টেস্টিং ল্যাব, ফ্যাশন ডিজাইনিং স্টুডিও, উচ্চ ক্ষমতার ফ্রি ইন্টারনেট, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি থেকে শুরু করে বিষয়ভিত্তিক প্রয়োজনীয় মেশিনারিজ এবং প্রজেক্টর মাল্টিমিডিয়ার মতো শিক্ষা সহায়ক উপকরণ থাকবে। চট্টগ্রামের সেরা পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইন্টার্নশিপের সুযোগের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা নামী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনা, মতবিনিময়ের সুযোগও পাবেন। এছাড়া ভালো ফল করলে শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ মিলবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব তহবিল তৈরির পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর
পরবর্তী নিবন্ধডা. ফজলুল-হাজেরা কলেজে বিদায় সংবর্ধনা