‘সম্মান ক্ষুণ্ন করার ভয়’ দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে টাকা। ক্ষতিটা টাকার মানদণ্ডে বিচার্য হলে মানা যেত। কিন্তু এ ধরনের প্রতারণার ঘটনা মুহূর্তেই ধূলিস্যাৎ করে দিচ্ছে সামাজিক মান মর্যাদা, পরিবারের নাম-যশসহ সবকিছু। নগরীতে এ ধরনের অপরাধের প্রতিটিতেই অপরাধীর প্রতিশোধপরায়ণতা ও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার বিষয় কাজ করেছে।
প্রথমে ফোনালাপ, পরে বন্ধুত্ব আর শেষ পরিণতি সর্বস্ব হারিয়ে চোখে শর্ষেফুল দেখা। প্রতারণার অভিনব সংযোজন এটি। এক্ষেত্রে প্রতারক চক্র কখনো ক্লায়েন্ট পরিচয় দেয়, কখনো ভালো লাগার সম্পর্ক তৈরি করে। কখনো টার্গেট করা ব্যক্তি যে পেশায় আছে, সেই পেশা-সংশ্লিষ্ট কোনো একটা অস্ত্র খুঁজে বের করে। চট্টগ্রামে এ চক্র ফাঁদ বিস্তার করেছে বিভিন্ন থানা এলাকায়।
কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নেজাম উদ্দীন আজাদীকে বলেন, তাদের উদ্দেশ্য ব্ল্ল্যাক মেইলিংয়ের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া। আগে আমরা ভুয়া র্যাব, ডিবির কথা শুনেছি। জিনের বাদশা, ভাগ্য প্রতারকের কথাও শুনেছি। প্রতারণার ক্ষেত্রে এটি এখন প্রচলিত একটি কৌশল। ডবলমুরিং থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন আজাদীকে বলেন, সম্প্রতি আমার থানা এলাকায় এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছে। অপরিচিত নম্বর থেকে কল দিয়ে জাহাঙ্গীরের সাথে কথা বলে ফাতেমা। সপ্তাহখানেক কথা বলা পর প্রেমের প্রস্তাব। অতঃপর দেখা করার কথা বলে জাহাঙ্গীরকে নিয়ে যায় ফাতেমার ঘর পানওয়ালাপাড়া হাড্ডি কোম্পানি মোড়ের জহুরুল্লাহ সর্দারের বাড়িতে (সাইফুলের ভাড়া ঘরে)। সেখানে জাহাঙ্গীরকে জিম্মি করে মোবাইলসহ টাকা আত্মসাৎ করে নেয় প্রতারক চক্র। এতে আব্দুল কাদের নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সে ছাড়া এ চক্রে আছে সাইদুল, হাসান, সোহাগ, ফাতেমাসহ অজ্ঞাতনামা ২ থেকে ৩ জন।
চলতি মাসে এ রকম প্রতারণার শিকার হয়েছে হাসান মোল্লা নামে নতুন-পুরাতন সিএনজি টেক্সি ক্রয়-বিক্রয় করা এক ব্যক্তি। এ ঘটনায় বায়েজিদ থানার এসআই তানভীর তার টিম নিয়ে সেই ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে নয়ন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে। তবে এ চক্রের নাটের গুরু নয়নের মা কাজল বেগম ও তার ভাইয়েরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। গ্রেপ্তারকৃত নয়ন জামিনে বেরিয়ে আসে কয়েকদিনের মধ্যে। বর্তমানে হাসানকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
গত ১৩ মার্চ নগরীতে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর সঙ্গে ভুয়া আত্মীয় পরিচয়ে প্রতারণার ছক তৈরি করে একই কৌশলে জোরপূর্বক কেড়ে নেওয়া হয় স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থ। নগরীতে বেসরকারি ব্যাংকের এক কর্মকর্তাকে ফাঁদে ফেলে টাকা আদায়ের অভিযোগ পেয়ে চার যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনা ঘটে গত ১১ মার্চ।
বাকলিয়া থানার ওসি রুহূল আমিন বলেন, চক্রটির সদস্যরা বিত্তশালীদের টার্গেট করে কৌশলে তাদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে। সেই নম্বরে চক্রের কোনো নারী সদস্য বিভিন্ন পরিচয়ে কথা বলে ও যোগাযোগ করে। কয়েকদিন কথা বলার পর গড়ে তুলে প্রেমের সম্পর্ক। এক পর্যায়ে দেখা করার কথা বলে আনা হয় নির্দিষ্ট জায়গায়। পরে সেখানে জিম্মি করে ব্ল্যাকমেইল করে আদায় করে মুক্তিপণ। বিভিন্ন সময়ে ১০ থেকে ১৫ জনকে একইভাবে জিম্মি করে টাকা আদায় করার কথা গ্রেপ্তারকৃতরা স্বীকার করেছে। এ সিন্ডিকেটের আরো দশজনের সম্পৃক্ততার কথা জানতে পেরেছি। কয়েকজন নারীও আছে। চক্রের কয়েকজনের বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় আরও মামলা আছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত থাকবে।