টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুই দলের পথ চলা দু রকমের। নিউজিল্যান্ড শুরু করেছিল চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে। আর পাকিস্তানের শুরুটা হয়েছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের কাছে হেরে। শুধু তাই নয় পরের ম্যাচে দুর্বল জিম্বাবুয়ের কাছে হেরে বিদায়ের শংকায়ও পড়েছিল পাকিস্তান। শেষ পর্যন্ত নেদারল্যান্ডের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকার হারে সুযোগ আসে পাকিস্তানের সামনে। আর সে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শেষ চারে জায়গা করে নেয় পাকিস্তান। অপরদিকে চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে শুরু করা নিউজিল্যান্ড সবার আগে জায়গা করে নেয় সেমিফাইনালে।
ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে এখন মুখোমুখি এই দুই দল। মেলবোর্নের টিকিট মিলবে কার হাতে তা নিশ্চিত হয়ে যাবে আজ। শক্তি, সামর্থ আর অভিজ্ঞতা সব মিলিয়ে দু দল প্রায় সমানে সমান। যদিও পরিসংখ্যান কথা বলছে পাকিস্তানের পক্ষে। কারণ দু দলের ২৮ মোকাবেলায় ১৭টি জয় পাকিস্তানের। আার ১১টি জয় নিউজিল্যান্ডের। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও পাকিস্তানের কাছে হেরেছিল নিউজিল্যান্ড। শুধু তাই নয় বিশ্বকাপের আগে নিজেদের মাঠে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালসহ দুই ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে হেরেছিল নিউজিল্যান্ড। দু দলের গত দশ মোকাবেলায় ৭টিতে জিতেছে পাকিস্তান। কাজেই যতই ভাগ্যের জোরে সেমিফাইনালে আসুক না কেন আজ পাকিস্তানই মাঠে নামবে ফেবারিট হিসেবে।
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ পর্বে ব্যাটে-বলে সমান তালে এগুচ্ছে নিউজিল্যান্ড এবং তাদের ক্রিকেটাররা। দলের শীর্ষ ব্যাটসম্যানরা রয়েছে দারুণ ফর্মে। অপরদিকে পাকিস্তানের দুই সেরা তারকা দুই ওপেনার বাবর আজম এবং মোহাম্মদ রিজওয়ান এখনো জ্বলে উঠতে পারেনি। সুপার টুয়েলভ পর্বের পাঁচ ম্যাচে একটি মাত্র ম্যাচে দুই অংকের ঘরে যেতে পেরেছেন পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর। তাও শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে। রিজওয়ানও পারছেন না নিজেকে মেলে ধরতে। তবে শেষ দুই ম্যাচে সুযোগ পাওয়া মোহাম্মদ হারিস, সাদাব খান, ইফতেখার, শান মাসুদরা ছোট ছোট ইনিংস খেলে দলকে তিনটি জয় উপহার দিয়ে সেমিফাইনালে নিয়ে গেছেন। তবে পাকিস্তানের সবচাইতে বড় শক্তির জায়গাটা হচ্ছে তাদের পেস বোলিং। শাহীন শাহ আফ্রিদির নেতৃত্বে নাসিম শাহ, মোহাম্মদ ওয়াসিম, হারিস রউফরা বল হাতে আগুন ঝরাচ্ছেন। স্পিনেও কম যাচ্ছেন না নেওয়াজ এবং সাদাব খান। এখন যদি বাবর আজম আর রিজওয়ান ফর্মে ফিরে তাহলে পাকিস্তানকে রুখে আর সাধ্য কার।
অপরদিকে নিউজিল্যান্ডের সবচাইতে বড় ভরসার জায়গার নাম তাদের ব্যাটিং। ব্যাটসম্যানরাও রয়েছেন দারুণ ফর্মে। বিশেষ করে ডেভন কনওয়ে, ফিন অ্যালেন, অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন, গ্লেন ফিলিপসরা রয়েছে দারুণ ফর্মে। কিউই পেসাররাও কম যান না। অভিজ্ঞ টিম সাউদি এবং ট্রেন্ট বোল্টের সাথে রয়েছেন লুকি ফার্গুসন। অভিজ্ঞ ইশ শোদির সাথে মিচেল সান্টনারের স্পিনও কাজে দিচ্ছে। তাই লড়াইটা জমজমাটই হবে এই দুই দলের সেটা বলাই যায়। তবে ক্রিকেট যতটানা গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা তার চাইতে অনিশ্চিত একটি দল পাকিস্তান। কখন কি করে বসে সেটা তারা নিজেরাও বলতে পারে না। তবে বরাবরই একটি ট্রেডমার্ক পাকিস্তানিদের গায়ের সাথে লাগানো থাকে। তা হচ্ছে যখনই কোনঠাসা অবস্থা থেকে ফিরে আসে তখন আর পেছনে ফিরে তাকায় না। এবারে যেমন একেবারে ভাগ্যের জোরে সেমিফাইনালে এসেছে পাকিস্তান। অথচ গত আসরে টানা সব দলকে হারিয়ে শেষ চারে গিয়েছিল।
কিন্তু সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে বাজে ভাবে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল বাবর আজমের দলকে। এখন দেখার বিষয় এবারে কতটা নিজেদের সেরাটা উপহার দিতে পারে পাকিস্তান। অপরদিকে নিউজিল্যান্ডেরও রয়েছে চূঁড়ায় উঠে ভেঙে পড়ার নজির। গত আসরে যেমন ফাইনালে গিয়েও শেষটা রাঙাতে পারেনি প্রতিবেশি অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে। তাই এখন দেখার বিষয় শেষ হাসিটা আজকে কার। আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান নাকি ধারাবাহিক নিউজিল্যান্ডের।