বহদ্দারহাট মোড়। গতকাল শনিবার। বিকেল সাড়ে পাঁচটা। একটা মাইক্রোবাসকে ঘিরে মানুষের জটলা। কাছে যেতে দেখা গেল, গাড়িটির সামনে একটি বেসরকারি ব্যাংকের নামে স্টিকার সাঁটানো। কোভিড-১৯ বিস্তার রোধকল্পে চলমান বিধিনিষেধের মধ্যে যাত্রী পরিবহন করায় মাইক্রোবাসটি আটকিয়েছে কর্তব্যরত পুলিশ। এ সময় চালক জানান, গাড়িটি ব্যাংকের মালিকানাধীন না। তবে ব্যাংকারদের আট হাজার টাকা ভাড়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়ে যাচ্ছেন। তখন দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, ব্যাংকার হলেও নির্দিষ্ট সময়ে চলে যাওয়া উচিত ছিল। এখন জেলা থেকে কোনো গাড়ি বের হওয়ার সুযোগ নেই। এ সময় ব্যাংকার পরিচয়ে যাত্রীরা তাদের কর্মস্থলে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার অনুরোধ করে। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে মাইক্রোবাসটি যেদিক থেকে এসেছে ওইদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।
কোভিড-১৯ বিস্তার রোধকল্পে গত শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়েছে ১৪ দিনের বিধিনিষেধ। চলবে ১৪ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত। সরকারের দায়িত্বশীলদের ভাষায় ‘কঠোর লকডাউন’। গতকাল ছিল এ বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিন। বহদ্দারহাট মোড়ের সৃষ্ট ঘটনা থেকে নগরের লকডাউনের একটি চিত্র অনুমান করা যায়। অর্থাৎ অজুহাতে মানুষ রাস্তায় বের হলেও লকডাউন কার্যকর করতে কঠোর অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মাঠে ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, জেলা প্রশাসন, সিএমপিসহ সংশ্লিষ্টরা। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পরিচালিত পৃথক ভ্রাম্যমাণ আদালতে ১৮৪ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ৫২ হাজার ৭৯০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
গতকাল নগরের প্রধান সড়কগুলোতে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা। কোনো গণপরিবহন ছিল না। তবে রাস্তায় ও মোড়ে মোড়ে প্রচুর রিকশা ছিল। চলে প্রাইভেট কারও। অন্য সময়ের তুলনায় পথচারীর সংখ্যাও ছিল কম। যদিও নগরের বিভিন্ন প্রবেশপথে ঈদের ছুটি কাটিয়ে শহরে ফেরা লোকজনের হালকা ভিড় ছিল। এছাড়া রাস্তায় বের হওয়া লোকজনের কেউ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ এর ভ্যাঙিন দিতে যাচ্ছেন। কেউ বলেছেন, শারীরিক সমস্যার কারণে চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন। অনেক প্রবাসীকে দেখা গেছে যারা কোভিড-১৯ টেস্ট করাতে বের হয়েছেন। অলিগলিতে সকালে লোকজন কম দেখা গেলেও বিকেলে আড্ডা দিতে দেখা গেছে। তবে সার্বিকভাবে গত ১ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত কার্যকর থাকা বিধিনিষেধকালীন যে পরিমাণ যানবাহন ও লোকসমাগম ছিল গতকাল তার চেয়ে অনেক কম ছিল।
এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত সময়ে লকডাউন থাকলেও গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্পকারখানা খোলা ছিল। যা এবার বন্ধ। ফলে গার্মেন্টস ও শিল্পকারখানায় কর্মরত শ্রমিকদেরও কর্মস্থলে যাওয়ার তাড়া নেই। ঘরেই আছেন তারা।
এদিকে গতকাল বিকেলে ওয়াসার মোড়ে উপস্থিত হয়ে দেখা গেছে, ট্রাফিক পুলিশের চেক পোস্ট। সেখানে প্রাইভেট কার, সিএনজি ও মোটরসাইকেল থামিয়ে যাত্রীরা কোথায় যাচ্ছেন জানতে চাওয়া হয়। উপযুক্ত কারণ দেখাতে পারলে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। এ সময় বেশিরভাগ যাত্রী চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা বলেন।
মোড়টিতে দায়িত্বরত এক ট্রাফিক সার্জেন্ট সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবারের চেয়ে লোকজন একটু বেশি। তবে তাদের বেশিরভাগই প্রবাসী যারা করোনা টেস্ট করতে যাচ্ছেন এবং অন্য রোগীও রয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা ইঞ্জিনচালিত গাড়িগুলোকে নিরুৎসাহিত করছি। জিইসি মোড়েও পুলিশের চেকপোস্ট ছিল। সেখানে কয়েকটি টং দোকান খোলা দেখা গেছে। জিইসি মোড়ে কতর্ব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট কাইয়ুম বলেন, এবার যারা বের হচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই উপযুক্ত কারণে বের হচ্ছেন।
২ নম্বর গেইটে মানুষের জটলা দেখা গেছে। সেখানে মাস্ক ছাড়া হেঁটে যাওয়া এক পথচারীর কাছে জানতে চাইলে বলেন, মাস্ক ভুলে ফেলে আসছি। তবে তিনি করোনায় ভীত নন জানিয়ে বলেন, আমার মৃত্যু কিভাবে হবে তা সৃষ্টিকর্তা নির্ধারণ করে রেখেছেন। তাই ভয় পেয়ে কি হবে?
মুরাদপুর মোড়ে দেখা গেছে, রিকশার পাশাপাশি প্রচুর মোটরসাইকেল। রাইড শেয়ারিং অ্যাপ বন্ধ থাকলেও যাত্রীর অপেক্ষায় ছিলেন মোটরসাইকেল চালকরা। এদিকে রাউড শেয়ারিং করায় বহদ্দারহাট মোড় থেকে জব্দ করে একটি মোটরসাইকেল রাখা হয় পুলিশ বঙে। পরে চালক পুলিশের অগোচরে অন্য একটি চাবি দিয়ে মোটরসাইকেলটি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে এক কনস্টেবল দেখে ফেলেন।
এ বিষয়ে ট্রাফিক সার্জেন্ট হাসান উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, রাইড শেয়ারিং করায় পুলিশ বঙে এনে রাখি। চালকের কাছে দুইটা চাবি থাকে। একটা আমরা নিয়ে নেয়ায় অন্যটি দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। বহদ্দারহাট চেক পোস্টে আটকানো এক মোটরসাইকেল আরোহী দাবি করেন, তিনি বোয়ালখালী থেকে ক্যান্সার আক্রান্ত পিতার ওষুধ কিনতে এসেছেন।
কাজীর দেউড়িতে এক পথচারী বলেন, আমরা আইন মেনে কোথাও যাচ্ছি না। বাড়িও যাচ্ছি না। আর এখন দেখছি প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া মারছে। এটা কেমন কথা।
এদিকে জরুরি কাজে বের হওয়া লোকজন দাবি করেছেন, রিকশা চালকরা অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মনির নামে এক রিকশা চালক বলেন, কোরবান উপলক্ষে দুইদিন একটু বেশি ভাড়া ছিল। এখন স্বাভাবিক ভাড়ায় নেয়া হচ্ছে।