প্লাস্টিক বর্জ্যের বিনিময়ে স্বাস্থ্যসেবা

দেশে প্রথম এ উদ্যোগ শুরু হলো নগরীতে

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ১:২৩ অপরাহ্ণ

প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে দূষিত হয় কর্ণফুলী। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম শহরের ৪০ শতাংশ প্লাস্টিকের ঠাঁই হয় কর্ণফুলীতে। প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে কমছে কর্ণফুলীর নাব্যতা। এতে বাড়ছে জলাবদ্ধতার ঝুঁকি। এর সঙ্গে আছে মানুষের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি।

এমন পরিস্থিতিতে প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে নগরে শুরু হয়েছে প্লাস্টিক বর্জ্যের বিনিময়ে স্বাস্থ্যসেবা, যা বাংলাদেশে প্রথম। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) সহযোগিতায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য এ সেবা চালু করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। নগরের ২ নম্বর গেট কসমোপলিটন আবাসিক এলাকায় স্থাপিত বিদ্যানন্দ মা ও শিশু দাতব্য চিকিৎসালয়ে পাওয়া যাবে এ সেবা। গতকাল সোমবার সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। প্রথমদিন ২৭ জন চিকিৎসেবা নিয়েছেন।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিদ্যানন্দ মা ও শিশু দাতব্য চিকিৎসালয়টি স্থায়ী। ‘প্লাস্টিক কেয়ার’ প্রকল্পের আওতায় এখানে সারা বছর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর লোকজন প্রাথমিকভাবে তাদের কুড়ানো প্লাস্টিক বর্জ্যের বিনিময়ে এই হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্যসেবা পাবেন। এই সেবার মধ্যে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, ওষুধ ও ল্যাব টেস্ট সুবিধা রয়েছে। ধীরে ধীরে অন্যান্য রিসাইক্লেবল বর্জ্যেও বিনিময় করা যাবে। শহরের প্লাস্টিক দূষণ কমাতে ভূমিকা রাখবে ‘প্লাস্টিক কেয়ার’ প্রকল্প, একইসঙ্গে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবাও নিশ্চিত হল। এদিকে গতকাল বিদ্যানন্দ মা ও শিশু দাতব্য চিকিৎসালয় ও বর্জ্যের বিনিময়ে চিকিৎসাসেবা কর্মসূচির উদ্বোধনকালে সিটি মেয়র নিজেই পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বিনিময়ে ৫ জন রোগীকে সরাসরি নিজ হাতে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। ভবিষ্যতেও হাসপাতালে স্বেচ্ছাশ্রম দিতে আসবেন বলে জানান। এসময় ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন দীর্ঘ সময় ধরে তাদের উদ্ভাবনী আইডিয়ার মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশনকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা করে যাচ্ছে। আজকের এই কর্মসূচির মাধ্যমে এই সহযোগিতা আরো এক ধাপ এগিয়ে গেলো। আজকের এই ইনোভেশন বাংলাদেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় একটি রোল মডেল হিসেবে থাকবে।

এ সময় বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বোর্ড ডিরেক্টর মো. জামাল উদ্দিন বলেন, অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ফলে পরিবেশ দূষণের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। একই সময়ে এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তাদের মৌলিক চাহিদা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। এই দুইটা সমস্যাকে একটা কনসেপ্টের মাধ্যমে সমাধান করার চিন্তা থেকে প্লাস্টিক কেয়ার প্রজেক্টের যাত্রা। এর ফলে একদিকে পরিবেশ দূষণ যেমন কমবে তেমনি প্রান্তিক মানুষও স্বাস্থ্যসেবা পাবেন এবং মানুষের মধ্যে পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে সচেতনতা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটবে। এটি স্থায়ীভাবে চালু থাকবে।

অনুষ্ঠানে অন্যন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মুজিবুর রহমান, শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. নিউটন ঘোষ, মেয়রের একান্ত সহকারী জিয়া উদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার জমির উদ্দিন নাহিদ।

জানা গেছে, নগরকে প্লাস্টিক দূষণ থেকে রক্ষায় চসিকের সহযোগিতায় গতবছর ‘প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজার’ কার্যক্রম চালু করেছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। এই প্রকল্পের আওতায় পতেঙ্গা ও হালিশহরে ২টি স্থায়ী স্টোর চালু করা হয়। এসব সেন্টারে যে কেউ পরিত্যক্ত প্লাস্টিক জমা দিলে বাজার করার সুযোগ পেয়ে থাকেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে ভ্রাম্যমাণ বাজার করা হয়। সেখানেও প্লাস্টিক জমা দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী কিনতে পারেন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসততা প্যাকেজড ড্রিংকিং ওয়াটারকে ২ লাখ টাকা জরিমানা
পরবর্তী নিবন্ধজাতীয় নির্বাচনে যে দায়িত্বই দেওয়া হবে সেনাবাহিনী পালন করবে