প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখুন

| সোমবার , ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ

বর্তমানে এমনভাবে দিন যাচ্ছে, সাধারণ মানুষের কথা ভাবার কেউ আছেন বলে মনে হয় না। এরা করোনার ধাক্কায় বিপর্যস্ত, স্বাভাবিক আয়ে এখনো ফিরতে পারেনি। তার উপর সঞ্চিত অর্থেও টান পড়ছে। পত্রিকার পাতায় খবর বের হয় : বাজারে লাগাতার বাড়তে থাকা জিনিসপত্রে দাম স্বস্তি দিচ্ছে না কাউকে। উচ্চমূল্যের এই বাজারে খাবারের খরচ জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছে সীমিত ও স্বল্পআয়ের মানুষ। দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষের জন্য বাজারের বাড়তি খরচ যেন গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা, ডিম ও মাংসসহ একে একে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। সরকারের হিসাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে, মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাথাপিছু আয় কিংবা মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তের আয় যে পরিমাণে বেড়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি হারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। প্রতিদিনের রান্নায় দরকার হয় এমন সব পণ্য কিনতেই নাভিশ্বাস উঠেছে ভোক্তাদের।
এরই মধ্যে পনির দাম বাড়াতে চায় সরকার। বাড়াতে চায় গ্যাসের দাম। এমনকি বিদ্যুতের দামও। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ওয়াসা পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় একতরফাভাবে। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকদের কোনো মতামত নেওয়া হয় না। অথচ ভোক্তা অধিকার আইন অনুসারে, পানির দাম বাড়াতে হলে ওয়াসার অবশ্যই ভোক্তাদের মতামত নেওয়া উচিত। গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আগে গণশুনানির ব্যবস্থা আছে, কিন্তু ওয়াসায় তেমন কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ওয়াসার পরিচালনা বোর্ড তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে পানির দাম বাড়ায়। অবশ্যই ওয়াসার পানির দাম বাড়ানোর আগে গণশুনানির ব্যবস্থা করা উচিত। এভাবে পানির দাম বাড়ানো মেনে নেওয়া যায় না।
এক্ষেত্রে অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়িয়ে সর্বসাধারণের জীবনযাত্রার ওপর বাড়তি আর্থিক চাপ সৃষ্টি করা উচিত নয় বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেন, এমনিতেই করোনার চাপে বিপর্যস্ত মানুষ। তাই যে সিদ্ধান্ত জনজীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, তা গ্রহণযোগ্য নয়।
করোনা মহামারী আমাদের অর্থনীতিকে ভীষণভাবে বিপর্যস্ত করেছে। সেটা ধনী বা উচ্চবিত্তরা অনুভব করতে না পারলেও কেবল দেশের চাকরিজীবী ও গরিব মানুষরা টের পাচ্ছে হারে হারে। কত শতাংশ মানুষ চাকরি হারিয়েছে সে হিসাব না করলেও সাধারণ মানুষ আছে ব্যয়ের চাপে। যদিও আমরা জানি আমাদের উন্নতি হচ্ছে। আমাদের অর্থনীতি নিম্নআয় থেকে উন্নয়নশীল স্তরে উঠে যাচ্ছে। কিন্তু প্রান্তিক মানুষের পেটে যে খাদ্য জুটছে না, সে খবর ফলাও হয় না।
আজ অস্বীকার করার উপায় নেই যে, প্রায় ২ বছর ধরে করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সীমাহীন আর্থিক দুরবস্থায় নিমজ্জিত। এমন পরিস্থিতিতে নিত্যপণ্য, বিশেষ করে খাদ্যসামগ্রীর দাম ক্রমাগত বাড়ছে। নতুন করে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের জীবন আরও কষ্টকর হয়ে উঠবে।
বাজার পর্যবেক্ষকরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাজারব্যবস্থায় একটি দুষ্টচক্র তথা সিন্ডিকেটের প্রভাব দেখা যাচ্ছে। এই সিন্ডিকেট বিভিন্ন সময়ে মজুদ ও কৃত্রিম সংকট এবং বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে দাম বাড়িয়ে সাধারণ ভোক্তার কষ্টার্জিত অর্থ হাতিয়ে নেয়। এ ধরনের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠলেও কখনই কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘বাজারে প্রতিটি প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। পণ্যের মূল্য বেঁধে দেওয়া, আমদানি বাড়ানো, বাজার তদারকি জোরদারসহ সরকারের নানা উদ্যোগ থাকলেও তা কাজে আসছে না। আমাদের বাজার ব্যবস্থাপনা ও নজরদারিতেই গলদ রয়েছে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে পণ্যের দাম বেঁধে দিয়ে খুব একটা কাজ হয় না। আমাদের পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক কিংবা স্বাভাবিকের কাছাকাছি রাখতে হবে।’
অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ এখন কোনো না কোনোভাবে ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কিন্তু বাজারের সবটা ব্যবসায়ীদের কাছে অবাধে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা মনে করেন, কোনো কোনো জরুরি ব্যবহার্য পণ্যের ও সেবার খাতের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে সরকার দাম নিয়ন্ত্রণে রাখবে অথবা ক্রেতাকে সরাসরি সহায়তা দিয়ে সাহায্য দেবে। এটি চলমান টিসিবির বিক্রয় পদ্ধতি, আগেকার রেশন ব্যবস্থা বা দরিদ্র ক্রেতাদের সরাসরি পণ্য বা আর্থিক সহায়তা দিয়ে করা যায়। আশা করি এ ব্যাপারে সরকার গুরুত্ব দেবে। সাধারণ মানুষের কল্যাণের বিষয়টি বিবেচনায় এনে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার বলে আমরা মনে করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে