প্রাণ ফিরে আসুক সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

রেবেকা নাসরিন | রবিবার , ৩ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:২৬ পূর্বাহ্ণ

মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন, আপনার একটু সহায়তা পেলেই অনাহারেও অর্ধাহারে থাকা যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চলছে তা বা ঝরে পড়া প্রতিষ্ঠান সমূহকে উঠে দাঁড়াবার প্লাটফরম আপনি চাইলে ঠিক করে দিতে পারেন।
আপনি বেসরকারী হাইস্কুল ও প্রাইমারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে নিয়ে বসেন, করোনা পরবর্তী নির্দেশনা দেন কিভাবে প্রতিষ্ঠানসমূহ পরিচালিত হবে। যদি কিছু প্রণোদনার ব্যবস্থা করে দেন তাহলে প্রতিষ্ঠানসমূহ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে। সরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ ঘরভাড়া ও লাগেনা, শিক্ষকদের বেতন ও ঠিকমতো পেয়ে যান তারা। উনারা স্কুল চত্ত্বরে না এসেও দিব্যি বেতন-ভাতা ভোগ করতে পারছেন।
কিন্তু বেসরকারী স্কুলসমূহ শিক্ষকগণ ১৮ মাস বেতন পায় নাই বা অর্ধেক বেতন পেয়ে মানবতর জীবন-যাপন করছে। মাননীয়মন্ত্রী মহোদয়, একটি নীতিমালা ঠিক করে দেন, গাছ লাগানোর সময় অথবা কোন স্কুলের অনুষ্ঠানে গিয়ে বলেন পি.এস.সি ও জে.এস.সি পরীক্ষা এ বছর অনুষ্ঠিত হবে না তাহলে আপনি কি চিন্তা করেছেন তারপরের দিনই আপনার বেধে দেওয়া নিয়মে থাকা স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা আর উপস্থিত থাকবে না বা থাকছেনা। পি.এস.সি ও জে.এস.সি বা অন্যসকল শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বার্ষিক পরীক্ষায় যেন অবতীর্ণ হয়। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না নিলে উপরের ক্লাসে উর্ত্তীণ হতে পারবেনা এ ধরনের যদি নির্দেশনা না হয় তাহলে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো একেবারে মাঠে মারা যাবে। বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ অনেকবার করোনাকালীন সময়ে আপনাদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। আপনাদের সেদিকে দেখার সময়ও পর্যন্ত নেই। তাহলে একেবারেই বলে দেন মাননীয় মন্ত্রী, যে আপনারা সরকারী স্কুলসমূহ আমাদের দেশের জন্য যথেষ্ট। আর কোনো বেসরকারী স্কুলের প্রয়োজন নেই। তাহলে আমরা যারা বেসরকারী স্কুল পরিচালনা করছি তারা সকলেই পদ্মা নদীতে ঝাঁপ দেয়া ছাড়া কোনো গতি নেই। মাননীয়মন্ত্রী মহোদয়, আমরা যারা বেসরকারী স্কুলসমূহ পরিচালনা করে আসছি, তারা সকলেই ২০২০ এর মার্চ এর ১৭ তারিখ স্কুল মহামারীর কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই এপ্রিলের ১ম সপ্তাহ থেকে অনলাইন স্কুল কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। একেবারেই স্কুল সময় সকাল ৮ টা থেকে ১০টা পর্যন্ত। ভার্চুয়ালী তারা পরীক্ষা পর্যন্ত নিয়েছে। তার একমাত্র কারণ, যেন শিক্ষার্থীরা বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা থেকে পিছিয়ে না যায় এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ যেন বাঁচতে পারে, বিলিন না হয়ে। তখন দেখা গেল ৭০% ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাস করলেও কিন্তু বেতন আদায় হয়েছে ৩০%। মাননীয়মন্ত্রী, এমতাবস্থায় শুধু লোনের বোঝাই বেড়েছে কিন্তু মেরুদন্ড সোজা হতে পারছেনা। পরবর্তীতে ১৮ মাস পরে স্কুল খুললেও অত্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে, সেখানেও যদি একেকসময় একে ধরনের নীতিমালা আসে আমরা হতভাগারা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো। মাননীয় মন্ত্রী, আপনি তো বিশ্বের সব দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার খবর রাখেন, আমরাও যেন উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার কাতারে দাঁড়াতে পারি সেই ব্যবস্থা করেন। ইউনিসেফকে যেন বলতে না হয়; “বাংলাদেশ সবার শেষে শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছে”। মাননীয়মন্ত্রী এখন আপনার বেঁধে দেওয়া নিয়মে ৬০% ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে উপস্থিত হচ্ছে। অভিভাবকরা মনে করছেন, এবছর তো শেষ, আর স্কুলে গিয়ে কী লাভ! টি.সি লাগে না। যেকোন বেসরকারী স্কুলে এমনিতেই ভর্তি নিয়ে নেয়। অভিভাবকরা এখন কিশোরীদের নিরাপত্তার জন্য বাল্য বিবাহের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। তবুও স্কুলমুখী হচ্ছে না; সেটা আপনারা পত্র-পত্রিকা খুললেই দেখতেই পাচ্ছেন। আপনি আমাদের অভিভাবক হয়ে একটি দিক নির্দেশনা দেন যাতে শিক্ষার্থীরা স্কুলমুখী হয়।
তাহলে হয়তো বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রাণ ফিরে পাবে এবং কিছু জনগণের আর্থিক সহায়তা হবে। মাননীয় মন্ত্রী, যেসব শিক্ষকরা টিউশনি করে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য লেখাপড়া করত তারা আজ গ্রামে গিয়ে হাল-চাষ করছে না হয় ছোট-খাটো ব্যবসা-বাণিজ্য জড়িয়ে গেছে। এসব শিক্ষকরা ফিরে না আসলে আমাদের দেশের উচ্চ শিক্ষার হার অনেক নীচে নেমে যাবে। টিকার আওতায় এসে, সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে একটি উন্নয়নমুখী নির্দেশনা দেন, যাতে আমরা বাঁচার আশা দেখতে পারি। আমরা যতো শিঘ্রই সম্ভব মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যাতে সঠিক দিক-নির্দেশনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আসে প্রাণ ফিরে আসুক সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশরতের রূপ
পরবর্তী নিবন্ধপ্রসঙ্গ : ‘চুল এত বড় কেন’