প্রাণের উচ্ছ্বাস, উৎসবে রঙিন

চবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সুবর্ণজয়ন্তীতে বর্ণাঢ্য আয়োজন

চবি প্রতিনিধি | শনিবার , ২১ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৮:১২ পূর্বাহ্ণ

সফলতার পঞ্চাশ বছর পার করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগ। এ উপলক্ষে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজনে সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব উদযাপন করেছে বিভাগটি। গতকাল শুক্রবার ‘গৌরবের পঞ্চাশে, মিলি প্রাণের উচ্ছ্বাসে’ প্রতিপাদ্যে তিন পর্বের বর্ণিল আয়োজনে উদযাপিত হয়েছে এ উৎসব।

দিনব্যাপী এ উৎসব বিভাগের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের সম্মিলনে রঙিন হয়ে ওঠে। বিভাগের প্রথম ব্যাচ থেকে শুরু করে শেষ ব্যাচ পর্যন্ত নানা বয়সের, নানা পেশার হাজার কয়েক বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী উৎসবে অংশ নিয়েছেন। কেউ এসেছেন পরিবার নিয়ে। দীর্ঘদিন পর মায়া জড়ানো এই প্রাণের ক্যাম্পাসে নিজ বিভাগে আসতে পেরে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন অনেকেই। আবার অনেকে প্রিয় বন্ধুদের সান্নিধ্য পেয়ে হয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন। কেউ স্মৃতিচারণ করেন পুরনো দিনের।

কেউবা ঘুরে আসেন ক্লাসরুম ও দীর্ঘদিন অবস্থান করা আবাসিক হলে। কেউবা মেতে ওঠেন সেলফি তোলায়। সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদ প্রাঙ্গণ থেকে প্রশাসনিক ভবন পর্যন্ত বর্ণাঢ্য র‌্যালির মাধ্যমে শুরু হয় উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। এরপর জীববিজ্ঞান অনুষদের সামনে বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন বিভাগটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রফেসর ড. শফিক হায়দার চৌধুরী (অব.)। সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব উপলক্ষে এদিন জীববিজ্ঞান অনুষদ প্রাঙ্গণে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

এতে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়ার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর বেনু কুমার দে।

বক্তব্যে উপউপাচার্য বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী একটি বিভাগ হলো এই প্রাণিবিদ্যা বিভাগ। ইতোমধ্যেই বিভাগটি ৫০ বছর পূর্ণ করেছে। এই বিভাগ থেকেই বের হয়ে গেছেন দেশের বহু গুণীজন। আমি বিভাগের অ্যালামনাই বর্তমান ও সাবেকদের সবার প্রতি শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। এই প্রাণিবিদ্যা বিভাগ আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তব্য (অনলাইন) রাখেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য প্রফেসর ড. আশিষ কুমার পাণিগ্রাহী। তিনি তার বক্তব্যে প্রাণিবিদ্যার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী যেভাবে প্রাণীর ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, গাছপালা নষ্ট হচ্ছে, তাতে আমরা খুবই চিন্তিত। আমাদেরকে এসবের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে কাজ করে যেতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ চবির একটি ঐতিহ্যবাহী ও সমৃদ্ধশালী বিভাগ। গত ৫০ বছরে এই বিভাগ থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। চবির এই ঐতিহ্যবাহী বিভাগের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আজ বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে আমাদের এই প্রাণিবিদ্যা বিভাগ।

এসময় জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. তৌহিদ হোসেন, আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের সাবেক উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী আজাদী (অব.), অবসরপ্রাপ্ত সচিব ড. অপরূপ চৌধুরী, সিনিয়র সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিসহ মোট ৩১ জনকে সম্মাননা প্রদান করা হয় যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। দুপুরের পর তৃতীয় পর্বে বিভাগের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে পরিবেশিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র মতে, প্রফেসর ড. শফিক হায়দার চৌধুরীর হাত ধরে ১৯৭৩ সালের ১ জানুযারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। তিনিই ছিলেন এই বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এই বিভাগে বর্তমানে কীটতত্ত্ব, ফিশারিজ অ্যান্ড লিমনোলজি, প্যারাসাইটোলজি ও ওয়াইল্ডলাইফ অ্যান্ড কনজারভেশন বায়োলজি শাখা চলমান রয়েছে।

বর্তমানে প্রাণিবিদ্যা বিভাগে ১৭ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। তাছাড়া অনার্সে ৪৪২ জন, মাস্টার্সে ৫৯ জন, এম.ফিল ১১ জন ও পিএইচডিতে ১০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। এ পর্যন্ত বিভাগ থেকে অনার্সে ১ হাজার ৩০৩ জন, মাস্টার্সে ১ হাজার ৩৩৮ জন, এম.ফিল ১০ জন ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন ১৭ জন শিক্ষার্থী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজনপ্রিয়তা পাচ্ছে চুইঝাল
পরবর্তী নিবন্ধদৃষ্টিনন্দন বান্দরবান মহাসড়ক নজর কাড়ছে ভ্রমণকারীদের