প্রাচীন নিদর্শন আর উজ্জ্বল ইতিহাস

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর

চবি প্রতিনিধি | শনিবার , ২৭ আগস্ট, ২০২২ at ৭:২৮ পূর্বাহ্ণ

বাঘের মাথার দেখা মিলবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) জাদুঘরে। কঙ্কাল বানিয়ে রেখে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক পেরিয়ে কাটা পাহাড়, শহীদ মিনার হয়ে সামনে গেলেই দেখা মিলবে জাদুঘরটির। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের কোল ঘেঁষে নব্বইয়ের দশকে গড়ে উঠেছে চট্টগ্রামের সমৃদ্ধ ও বৃহত্তর এই জাদুঘরটি। জাদুঘরে ঢুকতেই চোখে পড়বে হাজার বছর পুরনো গাছের ফসিল। নিচতলায় রয়েছে গবেষণা কেন্দ্র, আলোকচিত্র স্টুডিও ও প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণাগার। এছাড়া রয়েছে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ কোষ গ্রন্থাগার। কয়েকটি গ্যালারি নিয়ে এই জাদুঘর ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে।
ইতিহাস বিভাগের বিশেষায়িত জাদুঘর হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত হয় ১৯৭৩ সালের ১৪ জুন। কিন্তু এর কার্যক্রম আরম্ভ হয় যেদিন বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে সেদিন থেকে। ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধনের মাহেন্দ্রক্ষণকে স্মরণীয় করে রাখতে কর্তৃপক্ষ ২৪টি প্রত্নসামগ্রী নিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
এখানে রয়েছে হাতে লেখা কোরআন শরীফ, নকশে সোলেমানি ও পাণ্ডুলিপি লেখার সরঞ্জাম। আছে মধ্যযুগের অস্ত্রশস্ত্র, কামান, প্রাচীন যুগের সিরামিক, হাতপাখা ও কলের গান। চট্টগ্রাম মহানগরীর নাসিরাবাদ পাহাড় থেকে প্রাপ্ত টার্সিয়ারী যুগের একটি মাছের ফসিল উপহার হিসাবে পায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর। আর এটিই সংগ্রহশালার সর্বপ্রাচীন নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত। এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক ইতিহাস অধ্যয়ন ও গবেষণায় এটির রয়েছে অসামান্য অবদান। এখানে আরো রয়েছে প্রায় ২০ হাজার বছরের পুরনো কাঠের ফসিল। এছাড়া প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারের নানা ঐতিহাসিক নিদর্শনও রয়েছে এখানে। আছে সপ্তম শতাব্দীর কুমিল্লা কোটবাড়ি থেকে সংগ্রহীত ল্যাম্পস্ট্যান্ড, কোটবাড়ির পোড়ামাটির ফলক ও সোমপুর বিহারের পোড়ামাটির ফলক।
এ ছাড়া রয়েছে দুষ্প্রাপ্য ৫২টি কষ্টি পাথরের মূর্তি। এ সংগ্রহশালার সবচেয়ে মূল্যবান বস্তু হিসেবে বিবেচিত হয় এগুলো। রয়েছে ২৮টি ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য এবং ধাতু নির্মিত কিছু ভাস্কর্য। যেগুলোর অধিকাংশই পাল আমলের। গুপ্ত সাম্রাজ্যের একটি সূর্যমূর্তি রয়েছে এই জাদুঘরে। আরো রয়েছে বৈষ্ণব, শিব, সুরিয়া, শাক্ত এবং গাণপত্য পৌরাণিক চরিত্রসমূহের মূর্তি এবং ভাস্কর্য।
আছে চট্টগ্রামের মীরসরাই থেকে প্রাপ্ত নবম শতকের স্যান্ড পাথরের ভাস্কর্যে গরুড় রাধা বিষ্ণুর একটি প্রাচীনতম নিদর্শন।
পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম শতাব্দীর কষ্টি পাথরের ভাস্কর্যেরও দেখা মিলবে এতে। সম্রাট শাহজাহানের কামান, মুঘল আমলের ঢাল-তলোয়ার, কাব্য সংকলন, ১২০৯ সালের আলমগীরনামা, ফার্সি ভাষার গুলিস্তা, আকরব, উমাইয়া এবং সুলতানি আমলের স্বর্ণ ও রুপ্য মুদ্রা সংগ্রহশালাকে দান করেছে অনন্য উচ্চতা। এছাড়া এখানে আছে রথযাত্রার দৃশ্যাবলী, নিদ্রারত কুম্ভকর্ণ, শ্রীকৃষ্ণের জীবন চিত্র, হাতির দাঁত ও রাজকীয় লাঠির মাথা।
এছাড়া গ্যালারিতে বর্তমান যুগের চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিন, মর্তুজা বশীর, এস এম সুলতান, হাশেম খান ও আবদুর রশিদের নানা চিত্রকর্ম রয়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল অব্দি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আগত দর্শনার্থীরা জাদুঘরের সৌন্দর্য উপভোগ করেন। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কাজেও যেতে হয় সেখানে।
যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সমৃদ্ধ জাদুঘর থাকায় আমরা অনেক কিছু সচক্ষে দেখতে পারছি। এখানে প্রাচীন যুগের অনেক জিনিস রয়েছে, যেগুলো সচরাচর খুঁজে পাওয়া যায় না বা দেখতে পাওয়া যায় না। কিন্তু আমরা সহজেই তা দেখতে পাচ্ছি।
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, বহু বছরের পুরনো অনেক জিনিস জাদুঘরটিতে স্থান পেয়েছে। একসাথে সহজেই জিনিসগুলো দেখা যায়। জাদুঘরে গেলে মনে হয় আমরা ইতিহাসের সাথে কথা বলছি। এছাড়া আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অনেক তথ্যসমৃদ্ধ লেখা এখানে পাওয়া যায়। যেগুলো আমাদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করতে সহযোগিতা করছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএএসপি, ওসিসহ আহত ৪০
পরবর্তী নিবন্ধমাছ চাষের জন্য সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্লুইচ গেট খুলে দেয়ার অভিযোগ