মাছ চাষের জন্য সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্লুইচ গেট খুলে দেয়ার অভিযোগ

লবণ পানিতে কয়েকশ কৃষকের সর্বনাশ

চকরিয়া প্রতিনিধি | শনিবার , ২৭ আগস্ট, ২০২২ at ৭:২৯ পূর্বাহ্ণ

সমুদ্র উপকূলের সঙ্গে লাগোয়া কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারায় বগাইছড়ি খালের একটি স্লুইচ গেট কাম কালভার্টের জল কপাট খুলে দেওয়ায় লবণ পানিতে সর্বনাশ ঘটেছে কয়েকশ কৃষকের। গত কয়েকদিন ধরে স্লুইস গেট দিয়ে পরিকল্পিতভাবে লবণ পানি ঢোকানোর কারণে ১০০ কানির বেশি জমিতে রোপিত ধান পুড়ে বিবর্ণ হয়ে পড়েছে। এতে ওইসব কৃষকের ঘরে ঘরে কান্নার রোল পড়েছে। এই অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা উপায়ন্তর না দেখে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত নালিশ দিলে অভিযুক্ত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজন তাদের পিটিয়ে আহত করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে অভিযোগকারী কৃষকদের বাড়িতে গিয়ে এ হামলা ও মারধরের ঘটনাটি ঘটেছে।
এদিকে কৃষকদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে গতকাল শুক্রবার বিকেলে সরেজমিন ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের হেতালবনিয়াস্থ স্লুইস গেট কাম কালভার্ট পরিদর্শন করেছেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান। এ সময় ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা উপস্থিত ছিলেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক এবং তাদের অভিযোগের বরাত দিয়ে ডুলাহাজারা ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর দৈনিক আজাদীকে বলেন, ডুলাহাজারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ওই স্লুইস গেটটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে লবণ পানি ঢুকিয়ে মৎস্যচাষ করে আসছেন।
মূলত এই স্লুইস গেটটি উপজেলা পরিষদের বরাদ্দে নির্মাণ করা হয়েছিল ২০১৭ সালে। যাতে হাজারো কৃষক তাদের জমিতে মিঠাপানি ব্যবহার করে প্রতি মৌসুমে ধান, সবজিসহ রকমারি ফসলের আবাদ করতে পারে। কিন্তু অতিসম্প্রতি সেই স্লুইস গেটের জলকপাট খুলে দিয়ে লবণ পানি ঢোকানোর কারণে ইউনিয়নের হেতালবনিয়া এলাকায় ১০০ কানির বেশি জমিতে রোপিত ধানের চারা পুড়ে বিবর্ণ হয়ে পড়েছে।
ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগকারী হেতালবনিয়া এলাকার কৃষক মোহাম্মদ ইসমাইল অভিযোগ করেছেন, ইউনিয়নের কয়েকটি ওয়ার্ডের হাজারো কৃষক তাদের জমিতে ধানসহ রকমারি সবজির আবাদ করেন বগাইছড়ি ছড়াখালের উপকূল তীরবর্তী লাগোয়া স্লুইস গেটে আটকানো মিঠাপানির সুবিধা নিয়ে। কিন্তু সেই স্লুইস গেটের জলকপাট খুলে দেদার লবণাক্ত পানি প্রবেশ করানোর কারণে তারসহ অন্তত শতাধিক কৃষকের জমিতে রোপিত ধানের চারা পুড়ে বিবর্ণ হয়ে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ইসমাইল বলেন, এই অবস্থায় ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ করায় ক্ষুব্ধ হয়ে সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বৃহস্পতিবার রাতে আমাদের বাড়িতে সদলবলে হানা দেয়। এ সময় আমাকে এবং স্ত্রীকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। বর্তমানে আমরা হাসপাতালে ভর্তি আছি। তিনি জানান, শুধু তিনি নন, ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগে যেসব কৃষক স্বাক্ষর করেছেন, সেখান থেকে খুঁজে খুঁজে বাড়ি গিয়ে তাদেরকে পেটাচ্ছেন অভিযুক্ত নুরুল আমিন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তিনি স্লুইস গেট খুলে দিয়ে লবণ পানি ঢুকাননি। তার বিরুদ্ধে করা মারধরের অভিযোগটিও বানোয়াট। বর্তমান চেয়ারম্যান আদরের ইন্ধনেই তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে।
এই ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান গতরাতে দৈনিক আজাদীকে বলেন, চলতি বর্ষা মৌসুমে অনাবৃষ্টির কারণে এমনিতেই চাষাবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি সবাই। সেখানে স্লুইস গেটের জল কপাট খুলে লবণ পানি ঢোকানো খুবই দুঃখজনক এবং যা মরার উপর খাঁড়ার ঘাঁর মতো। ডুলাহাজারার কৃষকদের কাছ থেকে বৃহস্পতিবার রাতে এমন অভিযোগ পেয়ে অভিযুক্তকে ডাকা হয়। কিন্তু তিনি না আসায় শুক্রবার সরেজমিন স্লুইস গেট এবং লবণ পানিতে পুড়ে বিবর্ণ হওয়া ধানের ক্ষেত পরিদর্শন করেছি। এ সময় ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে নিয়ে লবণ পানি ছেড়ে দিয়ে জলকপাট আটকে দেওয়া হয়। যাতে মিঠাপানি ব্যবহার করে চাষাবাদ করতে পারে। ইউএনও বলেন, এই বিষয়ে অভিযোগ করার কারণে যেসব কৃষক মারধরের শিকার হয়েছে তাদের থানায় লিখিত এজাহার দিতে বলা হয়েছে। একই সাথে এই স্লুইস গেট যাতে পরিকল্পিতভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারে সেজন্য কমিটি করে দেওয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রাচীন নিদর্শন আর উজ্জ্বল ইতিহাস
পরবর্তী নিবন্ধমীরসরাইয়ে পুকুরে ডুবে শিশুর মৃত্যু