প্রাকৃতিক ঝিরি থেকে পানি যাবে পাহাড়ি পাড়ায়

পানির সংকট নিরসনে নয়া উদ্ভাবন

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | শনিবার , ১৩ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:৫০ পূর্বাহ্ণ

পাহাড়ের পানির সংকট নিরসনে প্রথমবারের মতো উদ্ভাবনী প্রকল্প নিয়েছে সরকার। কোন যন্ত্রচালিত প্রযুক্তির সহায়তা ছাড়াই মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ছড়ায় বাঁধ দিয়ে পাইপের মাধ্যমে পানি পৌঁছে যাচ্ছে গ্রামে গ্রামে। এলজিএসপি প্রকল্পের আওতায় জেলার অতি দুর্গম গ্রামে এমন প্রকল্পের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের পানির সংকট নিরসন হয়েছে গ্রামবাসীর।খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার বাবুছড়া ইউনিয়নের দুর্গম শালুয়া কার্বারি পাড়া। উপজেলার ধনপাতা থেকে এই পাড়ায় যেতে হয় পায়ে হেঁটে। উঁচু পাহাড়ের কোল ঘেষে এই পাড়ায় সুর্দীর্ঘ সময় পানির সংকট ছিল। পাথুরে মাটি হওয়ার কারণে পানির স্তর পাওয়া যায় না। বছরের পর বছর পানির সংকটে এলাকার বাসিন্দারা। পাহাড়ি গ্রামগুলোতে সারা বছরই পানির সংকট দেখা যায়। ২-৪ কিলোমিটার দূরে গিয়ে খাবার পানি সংগ্রহ করে। পানির সংকট কবলিত শালুয়া কার্বারি পাড়ায় সংকট নিরসনের উদ্ভাবনী প্রকল্প নিয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ। লোকাল গভমের্নট সাপোর্ট প্রজেক্টও আওতায় শুরু হয় পাড়ার পাশের ঝিরিতে বাঁধ নির্মাণ। অতিদুর্গম পাহাড়ি এলাকায় প্রাকৃতিক ঝিরিতে বাঁধ দিয়ে পাইপের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে পানি। এর মাধ্যমে স্থানীয়দের যুগ যুগ ধরে চলা দীর্ঘদিনের পানির সংকট দূর হয়েছে। এতে করে খুশি স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দা দয়াসোনা চাকমা ও চলঞ্চা চাকমা। এই দুই নারী বলেন, আগে আমাদের গ্রামে পানির কষ্ট ছিল। ঘরে রান্না, পোশাক ধোয়া কিংবা গোসলের পানিও ঠিকমতো পেতাম না। এখন ঝিরিতে বাঁধ দেওয়ার পর গ্রামের মধ্যে পানি পৌঁছে যাচ্ছে। পাইপের মাধ্যমে সারাদিনই এখানে পানি আসে। যখন ইচ্ছে তখন পানি সংগ্রহ করতে পারি। কোন কষ্ট হয় না। শালুয়া কার্বারি পাড়ার অন্য দুই বাসিন্দা অমিতা চাকমা ও মিলন চাকমা জানান, গ্রাম থেকে অন্তত আধা কিলোমিটার দূরে উঁচু ঝিরিতে বাঁধ দেয়া হয়েছে। বাঁধ থেকে পাইপের মাধ্যমে সরাসরি গ্রামে পানি সরবরাহ হচ্ছে। আগে শীত ও গ্রীষ্মকালে পানির কষ্ট বেশি থাকত। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার পর এই গ্রামে পানির আর কোনো কষ্ট নেই। সরাসরি পাইপের মাধ্যমে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা গ্রামের মানুষ পানি পাচ্ছে।
বাবুছড়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব বেগিন চাকমা বলেন, গ্রামের লোকেরা পানির সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে আসে। এখানে পানির কোন উৎস ছিল না। আমরা আলোচনা করে ঝিরিতে বাঁধ দিয়ে পানি সরবারাহের উদ্যোগ নিয়েছি। এতে ব্যয় হয়েছে মাত্র ২ লক্ষ টাকা। গ্রামের উপরে বাঁধ হওয়ায় খুব সহজেই পানি অপেক্ষাকৃত নিচের গ্রামে পৌঁছে যাচ্ছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য অরুণ বিকাশ চাকমা বলেন, শালুয়া কার্বারী পাড়া এলাকায় পানির সংকট নিরসনে এলজিএসপি থেকে প্রকল্প নেওয়ার পর দীর্ঘদিনে পানির সংকট নিরসন হয়েছে। পাহাড়ি ঝিরিতে যাতে সারা বছরই পানি সংরক্ষণ করা যায় সেজন্য প্রাকৃতিক বন ও ঝিরির পাথর সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কেউ চাইলেই বাণিজ্যিকভাবে ঝিরি থেকে পাথর উত্তোলন করতে পারবে না। প্রাকৃতিক বন টিকলে ঝিরি ঝরনায় সারা বছর পানি থাকবে।
এলজিএসপি খাগড়াছড়ির ডিস্ট্রিক্টফ্যাসিলিটেটর অরুণদর্শী চাকমা জানান, পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় বিদ্যুৎ সুবিধা নাই। পাহাড়ের লোকজন চিরায়িত জীবন-যাপনের অংশ হিসেবে ঝিরি-ঝরনা থেকে পানি সংগ্রহ করত। কিন্তু পাড়া থেকে ঝিরি অনেক দূর হওয়ার কারণে পানি সংগ্রহ করা কষ্টকর। তাই ঝিরিতে বাঁধ দিয়ে পাইপে মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে পানি পৌঁছে দেয়া হয়। এখন সারা বছর পানির সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। এখানে কোন ধরনের বিদ্যুৎ বা সৌর বিদ্যুতের প্রয়োজন নেই। ভবিষ্যতে এই ধরনের প্রকল্প আরো বাড়ানো হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবৈদ্যুতিক ফাঁদ আর গুলিতে মারা যাচ্ছে বন্যহাতি
পরবর্তী নিবন্ধঅ্যাসোসিও লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড পেলেন জয়