প্রশ্ন অনেক, উত্তর কি আছে?

ডাস্টবিন, রাস্তা বা ঝোপঝাড়ে অজ্ঞাত শিশুর লাশ, ৯৯ ভাগই নবজাতক মামলায় বাদী-বিবাদী না থাকায় আগ্রহ কম : পুলিশ

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:১০ পূর্বাহ্ণ

গত বছর ২৪ জুলাই রোববার রাত দশটা; নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন জাতিসংঘ পার্কের পাশে আড্ডা দিচ্ছিলেন ছয় তরুণ। তারা দেখেন চলন্ত প্রাইভেটকার থেকে একটা পুটলি ছুড়ে মেরেছে কেউ। ময়লাআবর্জনা ভেবে প্রথমে তেমন গুরুত্ব দেননি তারা। কিছু সময় পর ওই স্থান থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসতে থাকে। সেই স্থানে গিয়ে পুটলিতে বাঁধা একটি নবজাতক শিশু দেখতে পান।

তারা নবজাতকটিকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু বাচ্চাটির কোনো জন্মপরিচয় না থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে চিকিৎসা দিতে দেরি করে। এ সময় পুলিশি ঝামেলা শেষে শিশুটির চিকিৎসা পেতে প্রায় তিন ঘণ্টা দেরি হয়। পরবর্তীতে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে নিউরোসার্জারি বিভাগে ভর্তি করান। ৩ মাস ১৭ দিন লড়াই করে গত বছর ১১ নভেম্বর শিশুটি হার মানে মৃত্যুর কাছে।

নির্মম এ ঘটনাটি কোনও ব্যতিক্রমী কিংবা একমাত্র ঘটনা নয়। প্রায়শই পাওয়া যাচ্ছে নবজাতকের লাশ। ডাস্টবিন, রাস্তা কিংবা ঝোপঝাড়ে, যেসব অজ্ঞাত শিশুর লাশ পাওয়া যাচ্ছে তাদের ৯৯ ভাগই নবজাতক।

দশ মাস দশ দিন মাতৃগর্ভের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে থাকার পর পৃথিবীর আলো বাতাস যাকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি নেয়ার কথা, সেই নবজাতকের ঠাঁই হয় ডাস্টবিন কিংবা রাস্তার আনাচে কানাচে? জন্মই যদি হয় তার আজন্ম পাপ, তাহলে এর দায় কে নেবে? বাবা, মা নাকি নিষ্ঠুর এ পৃথিবী? প্রশ্ন অনেক। উত্তর নেই কারো কাছে। উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। কেউ একটি বাচ্চার আশায়

জীবনের সব সম্পদ লুটিয়ে দেয়; আবার কেউ অবৈধ সম্পর্কের বদনাম ঘুচাতে নবজাতককে বলি দেয়। জীবিত কিংবা মৃত অবস্থায় নবজাতককে উদ্ধার করা হলেও ঘটনায় জড়িতরা বরাবরই থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

পুলিশ বলছে, এসব ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তথ্য প্রমাণের ঘাটতি থাকে। তাছাড়া বাদীবিবাদী না থাকায় আগ্রহ কম থাকে। তাই জড়িতদের অনেক সময় চিহ্নিত করাও সম্ভব হয় না।

সমাজবিজ্ঞানীরা এ অবস্থাকে সমাজের চরম নৈতিক অবক্ষয় হিসেবে মন্তব্য করেছেন। তারা বলছেন, নারীপুরুষের অবৈধ মেলামেশার ফলে যে সন্তান জন্ম নিচ্ছে তা সমাজ এবং তাদের পরিবার মেনে নেয় না। ফলে জন্মের পরপরই এসব নবজাতকদের ঠাঁই হচ্ছে ডাস্টবিনে। তারা বলছেন, ওদের কি দোষ?

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি নগরীর সিআরবি এলাকা থেকে এক নবজাতকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সিআরবি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) আজাদ হোসেন বিষয়টি সম্পর্কে বলেন, সকালের দিকে অজ্ঞাত কিছু লোক সিআরবি শহীদ মিনারের পাশে নবজাতককে পুঁতে রেখে চলে যায়। কয়েক ঘণ্টা পরে কুকুর মাটি খুঁড়ে নবজাতকের লাশটি তুলে নেয়ার চেষ্টা করে। তিনি আরও বলেন, লোকজন কুকুর তাড়িয়ে তার মুখ থেকে নবজাতকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশকে খবর দেয়।

গত বছর ১৯ ডিসেম্বর হাটহাজারী উপজেলার চৌধুরীহাট থেকে এক নবজাতকের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। হাটহাজারী থানার এসআই নুর এ হাবিব ফয়সাল বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে নবজাতকের লাশটি উদ্ধার করা হয়। পরে ওই নবজাতকের লাশ গাউছিয়া কমিটির মাধ্যমে দাফন করা হয়।

১ ডিসেম্বর বিকেল ৪টার দিকে ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কের মীরসরাই পৌর সদরের লতিফিয়া গেট এলাকায় এক নবজাতকের মরদেহ পাওয়া যায়। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ইব্রাহিম বলেন, সেদিন বিকেলে আছরের নামাজ পড়তে মসজিদে যাওয়ার পথে মহাসড়কের পাশে ফুটপাতে পেপার মোড়ানো একটি বস্তু দেখতে পান। এরপর স্থানীয় কয়েকজন সহ এসে পেপার খুলে দেখতে পান ভেতরে একটি নবজাতকের মরদেহ। শিশুর মাথার একপাশে থেঁতলে গেছে। এরপর থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। মীরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ কবির হোসেন বলেন, বিকেলে স্থানীয় লোকজন খবর দিলে মহাসড়কের পাশ থেকে পেপার মোড়ানো একটি নবজাতকের লাশ উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে কোনও প্রসূতি সদ্য নবজাতককে এখানে ফেলে গেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচূড়ান্ত আপিল শুনানির অপেক্ষা
পরবর্তী নিবন্ধআমার নাম ভাঙিয়ে কেউ অন্যায় করতে পারবে না