প্রশাসক অনুমোদন দিয়েছেন এড়ানোর সুযোগ ছিল না

সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী

সিএনএ রিপোর্ট | বুধবার , ১৭ নভেম্বর, ২০২১ at ৫:৪৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, শেরশাহ, তারাগেট ও টেক্সটাইল এলাকায় সড়কের পাশে স্থাপনা নির্মাণের খরব পেয়ে প্রথমে ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে তাদের কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। ওরা মিছিল নিয়ে এসে আমাকে দেখাল তাদের কাছে বরাদ্দপত্র রয়েছে। প্রশাসক অনুমোদনও দিয়ে গেছেন। সাবেক প্রশাসক যেহেতু বরাদ্দপত্র দিয়ে গেছেন তাই এটি কোনভাবেই এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। আমি শুধু সাধারণ সভার মাধ্যমে টাকার অংকটা যোগ করে দিয়েছি। সিএনএ’র সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন।
অতীতে এক মেয়রের আমলের বিলবোর্ডে পুরো শহর ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। পরের মেয়র জনস্বার্থে সেসব উচ্ছেদ করেছেন। আপনিও কি পারতেন না এসব অবৈধ দোকান জনস্বার্থে উচ্ছেদ করতে ও অনুমোদন বাতিল করতে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুইদিন আগে আমি নিজে গিয়ে দোকানগুলো পরিদর্শন করেছি। দোকানগুলো প্রশাসকের আমলে অনুমোদন দেয়ার পর তাদের সাথে চুক্তি হয়েছে। ভাড়া নির্ধারণ, উন্নয়ন চার্জ নির্ধারণ সব করা হয়েছে। এখন অনুমোদিত একটি বিষয় বাতিল করতে গেলে আমাকে আইনি লড়াইয়ের সম্মুখীন হতে হবে। কোন কোন জায়গার বরাদ্দ বাতিল করতে গিয়ে এধরণের বিপত্তির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
সংবাদপত্রে উঠে এসেছে প্রাক্তন প্রশাসক নিজে শেরশাহ ও তারাগেটে উচ্ছেদকৃত জায়গায় আবার দোকান বরাদ্দ দিয়েছেন। প্রশাসক সাহেব দায়িত্ব ছাড়েন ৩১ জানুয়ারি। ঠিক এর ৯ দিন পর ৯ ফেব্রুয়ারি দপ্তরের ভূসম্পত্তি বিভাগ থেকে ইস্যু কার চিঠিতে উচ্ছেদ করা ব্যক্তিদের পুনর্বাসনে দোকান বরাদ্দের কথা উল্লেখ রয়েছে এবং সেটি নাকি প্রশাসক সাহেব দিয়েছেন। কিন্তু প্রশাসক সাহেব কোথাও উল্লেখ করেননি ফুটপাতের উপর আবার পুনর্বাসন করা হোক। এরপর মেয়র হিসাবে এই বেআইনি কাজ আপনি বন্ধ করতে পারতেন এই প্রশ্নের উত্তরে ফাইল নোটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফাইল নোটে আছে, ‘চসিকের প্রকৌশল বিভাগ কর্তৃক জায়গা চিহ্নিতকরণ করা এবং উক্ত চিহ্নিত জায়গা এস্টেট হতে বরাদ্দ দেয়া হবে। ভাড়া আদায় করা হবে। দোকান মালিকরা নিজস্ব অর্থায়নে দোকান নির্মাণ করবেন। আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে তৃতীয় কোন ব্যক্তির মাধ্যমেও নির্মাণ করা যায়। পিপিপি পদ্ধতিতেও লাভ-ক্ষতি বন্টন করা যায়। চসিকের প্রকৌশল বিভাগ কর্তৃক স্থাপনা নির্মাণপূর্বক এস্টেট শাখায় হস্তান্তর। তারপর এস্টেট শাখা হতে বরাদ্দ প্রদান ও ভাড়া আদায়’। এসব সিদ্ধান্ত তিনি দিয়ে গেছেন।
সাবেক প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন বলেছেন তিনি বরাদ্দ দেন নাই। এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, বাস্তবতা হল ফাইলে প্রশাসকের অনুমোদনের স্বাক্ষর রয়েছে। শেরশাহ, তারাগেট, টেক্সটাইল এমনকি হযরত আমানত শাহ (র.) এর মাজার গেটের বিপরীতে যেখানে অত্যন্ত ছোট ফুটপাত রয়েছে সেখানেও তিনি দোকান বরাদ্দ দিয়ে গেছেন। সমস্ত ফাইল নোট এস্টেট শাখায় আছে। সিটি কর্পোরেশনের আরো অনেক জায়গা আছে তিনি লিজ দিয়েছেন। কাজির দেউড়ি ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারের পেছনে একটি খালি জায়গা আছে সেটিও তিনি বরাদ্দ দিয়ে গেছেন। সড়কের পাশেই জায়গাটির অবস্থান। সেখানে বরাদ্দপ্রাপ্ত ওই ব্যক্তি দোকান নির্মাণ করেছেন। স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করছেন এই দোকানের কারণে সেখানে চলাফেরা, পানি নিষ্কাশন ইত্যাদি বিঘ্ন ঘটছে। এস্টেট অফিসার সেখানে গেলে তারা বরাদ্দপত্র নিয়ে হাজির হয়েছে। এসব ভাঙতে গেলে তারা মামলা করবে। আমি কি এসব করব। নাকি সিটি কর্পোরেশনের কাজ করব। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, দায়িত্বগ্রহণের পর থেকে কাউকে কোন সৌন্দর্যবর্ধন কিংবা অন্যকোন কাজে জমি বা ফুটপাত লিজ দিইনি।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, চট্টগ্রাম শহরে ফুটপাতের পাশে জায়গা নেই, যে যেখানে সিটি কর্পোরেশন ইচ্ছে করলে একটু সৌন্দর্যবধন করবে। অতীতে কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা করার অভ্যাস তার নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেহেতু প্রশাসক পত্রিকায় বিবৃতি দিয়েছেন তাই ফাইলের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
দোকান নির্মাণকালে গাছ কেটে বালি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে, যার ছবিও পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে। এর উত্তরে মেয়র বলেন, বিষয়টি সত্য নয়। তিনি বলেন, দোকান নির্মাণের পরও ৩ থেকে ৪ ফুট ফুটপাত আছে। কর্নারে গিয়ে ছোট হয়ে গেছে। সেখানে বড় করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ফুটপাতের দোকানদারদের বক্তব্য হল, শিল্প কারখানার গাড়িগুলো সারাদিন সড়কের উপর পার্কিং করে রাখে। তা নিয়ে কেউ কোন উচ্চবাচ্য করে না। গরীব মানুষগুলোর দোকান নিয়ে সবাই বলছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেওয়ান বাজার ওয়ার্ড ক ইউনিটের সম্মেলন স্থগিত
পরবর্তী নিবন্ধআমি রাস্তার উপর একটি দোকানও বরাদ্দ দেইনি