প্রমথনাথ বিশী (১৯০১–১৯৮৫)। সাহিত্যিক, গবেষক। একজন সৃজনশীল লেখক ও মননশীল গবেষক হিসেবে প্রমথনাথ বিশীর সমান খ্যাতি রয়েছে। তিনি ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই জুন নাটোরের জোয়াড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম নলিনীনাথ বিশী। প্রমথনাথ বিশীর শিক্ষাজীবন শুরু ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মবিদ্যালয়ে। সেখানে তিনি রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথের নিকট তিনি অভিনয় শেখেন এবং পরে তাঁর লেখা কয়েকটি যাত্রাপালা শান্তিনিকেতনে অভিনীতও হয়। তিনি ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে শান্তিনিকেতন থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে আইএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি রাজশাহী কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ বি.এ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে বাংলায় এমএ (১৯৩২) ডিগ্রি লাভ করেন। রামতনু লাহিড়ী গবেষণা বৃত্তি নিয়ে গবেষণা করার পর ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি রিপন কলেজে অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে যোগদান করেন এবং রবীন্দ্র অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হয়ে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে অবসর গ্রহণ করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি আনন্দবাজার পত্রিকার সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। গবেষণার ক্ষেত্রে প্রধানত রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। এক্ষেত্রে রবীন্দ্র কাব্যপ্রবাহ, রবীন্দ্র বিচিত্রা, রবীন্দ্র নাট্যপ্রবাহ, রবীন্দ্র সরণী, প্রভৃতি গবেষণাগ্রন্থ তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান। তিনি মধুসূদন ও বঙ্কিম সাহিত্যেরও একজন দক্ষ সমালোচক ছিলেন। মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বঙ্কিম সরণী ও মধুসূদন থেকে রবীন্দ্রনাথ তাঁর এ বিষয়ক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। গবেষণাগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, কবিতা এবং ব্যঙ্গ রচনার ক্ষেত্রেও প্রমথনাথ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। কমলাকান্ত, বিষ্ণুশর্মা, অমিত রায়, মাধব্য ও স্কট টমসন ছদ্মনামে তিনি লিখতেন। তাঁর রচিত উপন্যাস ও গল্পের মধ্যে কয়েকখানি প্রধান গ্রন্থ হলো: জোড়াদিঘির চৌধুরী পরিবার, কেশবতী, গল্পের মতো গল্প, ডাকিনী, ব্রহ্মার হাসি, সিন্ধুদেশের প্রহরী, চলন বিল, অলৌকিক, কেরী সাহেবের মুন্সী, স্বনির্বাচিত গল্প, লালকেল্লা ইত্যাদি। দেওয়ালী তাঁর প্রথম কবিতার গ্রন্থ। এছাড়া আছে বসন্তসেনা ও অন্যান্য কবিতা, হংসমিথুন, উত্তরমেঘ, শ্রেষ্ঠ কবিতা ইত্যাদি। ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্ব, বিচিত্র উপল তাঁর প্রবন্ধগ্রন্থ। সাহিত্যচর্চা এবং গবেষণায় কৃতিত্বের জন্য প্রমথনাথ রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৬০), বিদ্যাসাগর স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮২) ও জগত্তারিণী পুরস্কার (১৯৮৩) লাভ করেন। ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।