প্রবোধচন্দ্র সেন : ছন্দবিশারদ ও রবীন্দ্রগবেষক

| মঙ্গলবার , ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৫:৩১ পূর্বাহ্ণ

প্রবোধচন্দ্র সেন। ছন্দবিশারদ, ঐতিহাসিক, রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছান্দসিক হিসেবে খ্যাতিমান। ইতিহাস ও রবীন্দ্রচর্চায় তাঁর অবদানও বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য। বাংলা সাহিত্যে ‘ছন্দ’ নিয়ে তিনি প্রচুর গবেষণা করেছেন। ছন্দ বিষয়ে রয়েছে তাঁর একাধিক গ্রন্থ। প্রবোধচন্দ্র সেনের জন্ম কুমিল্লার মনিয়ন্দ গ্রামে ২৭ এপ্রিল ১৯৯৭। আদিনিবাস ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার সরাইলের চুন্টা গ্রামে। পিতা হরদাস সেন, মাতা স্বর্ণময়ী সেন। ১৮৯৭ সালের ২৭ এপ্রিল কুমিল্লার মনিয়ন্দ গ্রামে। কুমিল্লা জেলা স্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে মাধ্যমিক এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে সিলেটের মুরারিচাঁদ কলেজ থেকে ইতিহাসে বি.এ (অনার্স) পাশ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে ১৯২৭ সালে এম.এ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯৩২ সালে প্রবোধচন্দ্র সেন কর্মজীবন শুরু করেন খুলনার হিন্দু একাডেমী (বর্তমানে দৌলতপুর কলেজে) ইতিহাস ও বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপনা দিয়ে। দীর্ঘ দশ বৎসর অধ্যাপনার শেষে ১৯৪২ সালে তিনি কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আহ্‌বানে বিশ্বভারতী বিদ্যাভবনে রবীন্দ্র-অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। ১৯৫১ সালে বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হলে তিনি বাংলা বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালে রবীন্দ্রজন্মশতবার্ষিক উৎসবকালে রবীন্দ্রভবনের প্রথম রবীন্দ্র-অধ্যাপক ও অধ্যক্ষ হন। ১৯৬৫ সালে অবসরগ্রহণ করার পর বিশ্বভারতীর সম্মানসূচক এমেরিটাস অধ্যাপক হন। ছাত্রাবস্থায় প্রবোধচন্দ্র সেনের ছন্দবিষয়ক এ প্রবন্ধ পড়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং ‘ছান্দসিক’ বলে অভিহিত করেন। পরে এ বিষয়ে প্রবোধচন্দ্র চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, মোহিতলাল মজুমদার, কুমুদরঞ্জন মল্লিক, কালিদাস রায়, যতীন্দ্রপ্রসাদ ভট্টাচার্য, কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখের স্বীকৃতি লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথের ‘ছন্দ’ গ্রন্থের সম্পাদনা করেছেন তিনি। এ ছাড়া সমাজ, ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়েও তাঁর গভীর প্রজ্ঞার পরিচয় মেলে তাঁর রচিত ধর্মজয়ী অশোক, রামায়ণ ও ভারত সংস্কৃতি, ভারত-পথিক রবীন্দ্রনাথ, ভারতাত্মা কবি কালিদাস, ভারতবর্ষের জাতীয় সঙ্গীত ইত্যাদি গ্রন্থে। ছন্দ নিয়ে রচিত তাঁর গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ছন্দ-পরিক্রমা, ছন্দ-জিজ্ঞাসা, বাংলা ছন্দে রবীন্দ্রনাথের দান, বাংলা ছন্দ-চিন্তার ক্রমবিকাশ, নতুন ছন্দ-পরিক্রমা প্রভৃতি। ব্যক্তি জীবনে উদার, অসাম্প্রদায়িক প্রবোধ মানুষের নৈতিকতায় বিশ্বাসী ছিলেন। জীবনযাপনে ছিলেন সুশৃঙ্খল। রচনাকর্মেও এর ছাপ সুস্পষ্ট। ১৯৮৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বর প্রবোধচন্দ্র সেন মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশ্বশান্তি দিবস
পরবর্তী নিবন্ধসিডিএ’র অননুমোদিত ভবন শনাক্তকরণে সাঁড়াশি অভিযান চাই