প্রবাহ

আহমদুল ইসলাম চৌধুরী | বুধবার , ২৮ এপ্রিল, ২০২১ at ৭:৩৮ পূর্বাহ্ণ

সমাজকল্যাণে নিবেদিত প্রাণ মুহাম্মদ আবদুর রহমান
সমাজে জনগণের কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ আলহাজ্ব মুহাম্মদ আবদুর রহমান। শিক্ষকতা, সমাজসেবা, ধর্মীয় কর্মকাণ্ড নিয়ে ছিল তার জীবন। ১৯৪২ সালে পটিয়া পৌরসভায় তাঁর জন্ম। ম্যাট্রিক পাস করেই নিকটে মাইজপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। কিছুদিনের ব্যবধানে মোহসেনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলে আসেন; এ বিদ্যালয়ে পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক হন। এই বিদ্যালয়ে দায়িত্বরত অবস্থায় শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি সমাজের কল্যাণে সময় অতিবাহিত করেন। এলাকার মসজিদ, কেন্দ্রীয় ঈদ জামাতসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান সংগঠনের সভাপতির দায়িত্বপালন করেন। সাথে সাথে চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি হন। এতে তাঁর কর্ম তৎপরতা বহুগুণ বেড়ে যায়। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন ধার্মিক, পাঁচওয়াক্ত নামাজী। ফলে গারাংগিয়া হযরত বড় হুজুর (রহ.)’র হাতে তরিকতে দাখিল হন। সেই সুবাদে পটিয়া গারাংগিয়া খানকাহ, মসজিদ, এতিমখানা তথা গারাংগিয়া ধর্মীয় কমপ্লেঙের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকেন। দীর্ঘদিন এখানকার সেক্রেটারী ছিলেন। ২০১৭ সাল থেকে সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
তিনি ১৯৯৯ সালে হজ্বব্রত পালন করেন। পরবর্তীতে পবিত্র মাহে রমজানকে সামনে রেখে পর পর ৩ বার সৌদি আরব গমন করেন ওমরাহ ও যেয়ারতের নিয়তে। তিনি ৪ পুত্র ৩ কন্যার জনক। তৎমধ্যে ২ পুত্র আমেরিকায় এবং ১ পুত্র অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত। ২ পুত্রকে দেখতে সস্ত্রীক আমেরিকা গমন করেন। সস্ত্রীক ভারতেও গমন করেছিলেন। ২০০৩ সাল থেকে তাঁর সাথে আমার সম্পর্ক, যেহেতু উভয়ে গারাংগিয়া তরিকত কেন্ত্রীক মুরিদ। গারাংগিয়া হযরত বড় হুজুর (রহ.)’র জীবনীগ্রন্থ রচনাকালে তিনি নানাভাবে সহযোগিতার হাত বাড়ান। রমজানকে সামনে রেখে ওমরাহ ও যেয়ারতে গমনকালে উভয়ের মধ্যে আলাপ হত কোন তারিখ, কোন ফ্লাইটে গেলে ভাল হবে ইত্যাদি। চট্টগ্রাম শহরেও নিয়মিত উভয়ের মধ্যে যোগাযোগ থাকত, যাওয়া আসা হত। পটিয়া গারাংগিয়া তরিকতের ইসলামিক কমপ্লেক্সের বার্ষিক মাহফিলে তাঁর দাওয়াত রক্ষার্থে আমার একাধিক বার যাওয়া হয়। পটিয়া বাদেও তিনি গারাংগিয়া ও চট্টগ্রাম শহরে তরিকতের বিভিন্ন কর্মকান্ডে সংশ্লিষ্ট থাকতেন, অবদান রাখতেন। তিনি সমাজসেবার পাশাপাশি যে কোন ধর্মীয় কর্মকান্ডে জড়িত থাকতেন। চট্টগ্রামের অরাজনৈতিক সংগঠন মুসলিম মনীষা স্মৃতি পরিষদ ও হজ্বযাত্রী কল্যাণ পরিষদসহ আরও একাধিক সংগঠন/প্রতিষ্ঠানের আজীবন সদস্য ছিলেন।
বস্তুত আলহাজ্ব মুহাম্মদ আবদুর রহমান সাহেবের জীবনটা ছিল ধর্মপালনের সাথে সাথে জনকল্যাণে নিবেদিত। তিনি অলস ছিলেন না, কর্মতৎপর থাকা ছিল তার স্বভাব। নিজেকে কর্মতৎপর রাখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। সকলের কাছে শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব ছিলেন। সাধারণ লোকজন তাকে সমীহ করতেন।
তাঁর জীবনে সততাই তাকে জনগণের মাঝে সম্মানিত করে। সাথে ছিল তাঁর নীতি নৈতিকতা, নিয়ম-শৃংখলা। তার নিরলস কর্ম তৎপরতায় জনগণের মাঝে তাকে সম্মানিত করে।
সততা ন্যায় নীতিবান তথা নিজের ব্যক্তিত্ব রক্ষা করে চলায় পটিয়ার শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, রাজনীতিবিদ এক কথায় সকলে তাকে সমীহ করতেন। আলহাজ্ব মুহাম্মদ আবদুর রহমান ১৬ এপ্রিল শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম মহানগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন)। পটিয়ায় বাদ জুমা জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। রমজানের শুক্রবার ইন্তেকাল এবং জানাজা, দাফন পাওয়া তাঁর সৌভাগ্য। মহান আল্লাহ পাক আলহাজ্ব মুহাম্মদ আবদুর রহমানকে পরকালে কল্যাণ দান করুন। আমিন॥
লেখক : গবেষক, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট

পূর্ববর্তী নিবন্ধদারিদ্র ও বেকারত্ব নিরসনে আত্মকর্মসংস্থান
পরবর্তী নিবন্ধগীতিকার ওসমান শওকতের জীবনাবসান