প্রধানমন্ত্রীর আগমন এবং চট্টগ্রামবাসীর প্রত্যাশা

রতন কুমার তুরী | রবিবার , ৪ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৬:১৫ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের মাননীয় প্রাধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে আসছেন। মূলত বিজয়ের মাস ডিসেম্বরকে সামনে রেখেই বাংলাদেশের পূণ্যভূমি এবং বার আউলিয়ার দেশ নামে খ্যাত চট্টগ্রামে আসছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুরো শহরজুড়ে এখন সাজসাজ রব ওঠেছে মাননীয় প্রাধানমন্ত্রীকে বরণের জন্য।

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনগুলো চট্টগ্রামের প্রতিটি উপজেলায় ওয়ার্ড ভিত্তিক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে প্রাধানমন্ত্রীর আগমন বিষয়ে। আশা করা যায় বিপুল মানুষের উপস্থিতিতে খুব ভালো এবং সফল একটা সমাবেশ হবে চট্টগ্রামের মাটিতে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা বিভিন্ন দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলেও বাংলাদোশের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত চট্টগ্রামও ঢাকার চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমেই বাংলাদেশের সাথে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সিংহভাগ সম্পাদিত হয় এবং এই বন্দরের মাধ্যমে দেশের পণ্য সমূহের বেশিরভাগ আমদানি রপ্তানি করা হয়। প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বন্দরে দিনরাত্রি জাহাজ থেকে পণ্য সামগ্রী ওঠানামার কাজ চলে। ১৯২৬ সালে বন্দরটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই এটি আধুনিকতার ছোঁয়া তেমন একটা পায়নি।

বন্দরটিতে মূলত জোয়ার ভাটার হিসেবেই জাহাজ আসা যাওয়া এবং খালাসের কাজ চলে কিন্তু পৃথিবীতে অন্যান্য বন্দর সমূহে দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা জাহাজ চলাচলসহ পণ্য ওঠানামার কাজ চলে। তবে চট্টগ্রাম বন্দরের একটি সুবিধা হলো এটিতে বন্দর থেকে কিছুটা দূরে গভীর পোতাশ্রয়ে জাহাজ নোঙ্গর করা যায়। তাছাড়া এটির কিছু অসুবিধা হলো, এই বন্দরে বহির্নোঙরে বড় জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের জন্য লাইটার জাহাজের সংখ্যা অনেক কম। লাইটার জাহাজের সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে এবং পণ্য খালাসের যন্ত্রপাতি ও ঘাটের আধুনিকায়ন করতে হবে।

বন্দরটির বিভিন্ন কার্যাবলী যুগোপযোগী করার জন্য এটিকে আরো আধুনিকায়ন করা জরুরি।এতে করে বন্দরটি অধিক কন্টেইনার ডেলিভারি দিতে পারবে এবং কাজের গতিও বাড়বে ও দেশের অর্থনীতিতে আরো অবদান রাখতে পারবে। চট্টগ্রামের বন্দরের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির প্রতি আশা করি মাননীয় প্রাধানমন্ত্রী নজর দেবেন।

প্রকৃতপক্ষে চট্টগ্রাম বন্দরের কারণে চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধাণী বলা হলেও সত্য কথা বলতে কী বন্দরসহ চটগ্রামের উন্নয়ন সেভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে না। এটি শুধু বর্তমান সরকারের আমলে নয় এর পূর্ববর্তী সরকারগুলোর সময়ও একই অবস্থা বিদ্যমান ছিল। এই ধারাবাহিক অবস্থা থেকে সরকারকে বের হয়ে আসতে হবে।

যেহেতু এই বন্দর দিয়েই দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের সিংহভাগ নিয়ন্ত্রিত হয় সেহেতু এই বন্দরের উন্নয়ন করা যে কোনো সরকারের গুরু দায়িত্ব বলেই আমরা মনে করি। মাননীয় প্রাধানমন্ত্রী চাইলে বন্দর আধুনিকায়নসহ বন্দরের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার জন্য বুয়েট থেকে একদল বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় বিশেষজ্ঞ টিমের মতামত গ্রহণ করা। তাছাড়া চট্টগ্রামের মীরসরাইতে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরীও দেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখে চলেছে। বর্তমানে উক্ত শিল্পজোনে দেশি বিদেশী ১০ থেকে ১৫ টি কোম্পানি তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে ভবিষ্যতে এই জোনটিতে ১০০-এরও বেশি কোম্পানি তাদের কার্যক্রম শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই শিল্পনগরী যাতে পুরোদমে তাদের কার্যক্রম শুরু করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সফলভাবে অবদান রাখতে পারে সে বিষয়ে নিশ্চয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেখভাল করবেন। প্রকৃতপক্ষে মীরসরাই শিল্পজোনের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরীতে পুরোদমে কাজ শুরু হলে চট্টগ্রামসহ পুরো দেশের বেকার সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান হবে। এই শিল্পনগরিতে ২০ থেকে ২২ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে শিল্প বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম শহরের অন্যতম সমস্যা হলো জলাবদ্ধতা। এই জলাবদ্ধ মাঝেমাঝে এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায় পুরো চট্টগ্রাম শহর কয়েকদিন পানিতে ডুবে থাকে এতে করে জনগণের চরম দুর্ভোগের শিকার। জলাবদ্ধতার জন্য এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিটিকর্পোরেশনের সব মেয়রই নির্বাচনী ওয়াদা দিয়েছেন এবং কিছুক্ষেত্রে জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজও করেছেন কিন্তু তারপরও কেনো জানি চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনই হচ্ছে না। এ বিষয় চট্টগ্রাম সিটিকর্পোরেশনের বর্তমান বেশকিছু পদক্ষেপ নিলেও তাতেও কাজ হচ্ছে না।

বর্তমান মেয়রের কিছু কাজ এখনও চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে চাইলে মাননীয় প্রাধানমন্ত্রী বর্তমান মেয়রকে সহায়তা করতে পারেন কিংবা এই বিষয়ে কোনো উপদেশ বা পরামর্শ থাকলে মাননীয় প্রাধানমন্ত্রী রাখতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন করা এখন চটগ্রামের প্রতিটি মানুষের প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে বিধায় এই বিষয়টি মাননীয় প্রাধানমন্ত্রী দেখভাল করলে চট্টগ্রামের মানুষের জন্য বড়ই উপকার হবে।

বর্তমানে চট্টগ্রাম শহরে শিশুদের জন্য বেড়ানো বা খেলার জন্য কোনো শিশুপার্ক নেই বললেই চলে। চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসের পাশে একটি ছোট্ট শিশু পার্ক থাকলেও তাতে খেলার তেমন ইভেন্ট নেই।

পার্কটি একেবারে ছোট পরিসরে হওয়ায় শিশুরা এতে পাঁচ মিনিটেই ঘোরা শেষ করে ফেলে ফলে তেমন আনন্দ পায় না। পার্কটি আরো যুগোপযোগী করার প্রয়োজন থাকলেও কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগই নিচ্ছে না। আমরা প্রত্যাশা করবো চট্টগ্রামে এই বিষয়ে শুধু শিশুদের জন্য আধুনিক সুবিধা সম্বলিত একটি শিশুপার্ক করা যায় কী না মাননীয় প্রাধানমন্ত্রী ভেবে দেখে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেবেন। মূলত মাননীয় প্রাধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে আসলেই চট্টগ্রামের মানুষ আবেগে আপ্লুত হয়ে পরেন বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষজন মাননীয় প্রাধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের বিভিন্ন দামী ধাতুতে তৈরী নির্বাচনী প্রতিক নৌকা উপহার দেন এবারও হয়ত তার ব্যতিক্রম হবেনা তবে অন্যান্য বারের চাইতে এবার চট্টগ্রামের মানুষের মাননীয় প্রাধানমন্ত্রীর কাছে প্রত্যাশা থাকবে অনেক বেশি। কারণ সামনে নির্বাচন এবং আগামী দুটি বাজেটই হবে জনউন্নয়নমুখী ফলে বাজেট সমূহে চট্টগ্রামের জন্য যেকোনো বরাদ্দ রাখা অপেক্ষাকৃত সহজ –

আগামী দুটি বাজেটই হবে জনউন্নয়নমুখী ফলে বাজেট সমূহে চট্টগ্রামের জন্য যেকোনো বরাদ্দ রাখা অপেক্ষাকৃত সহজ হবে। আমরা প্রত্যাশা করছি মাননীয় প্রাধানমন্ত্রীর এবার চট্টগ্রামের সফর অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে। চট্টগ্রামের মানুষের আন্তরিকতা এবং মায়ামমতায় মুগ্ধ হবেন তিনি। সাথে সাথে এই সফরে মাননীয় প্রাধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের মানুষের আশা আকাঙ্খাকার প্রতিফলন ঘটাবেন।

লেখক : কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশ্বকাপ ফুটবল খেলার সময় পতাকা ওড়ানো নিয়ে ভাবনা
পরবর্তী নিবন্ধআওয়ামী রাজনীতিতে চট্টগ্রামের ভূমিকা : বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা