প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে পাতানো ম্যাচ খেলার প্রস্তাব খোদ রেফারি সমিতির সাধারণ সম্পাদকের

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ১০ নভেম্বর, ২০২২ at ১০:৩৩ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ম্যাচ ফিক্সিং কিংবা পাতানো ম্যাচ জঘন্য এক অপরাধ। কিছুদিন আগেও ঢাকায় একাধিক দল এবং খেলোয়াড় কোচকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে। চট্টগ্রামের প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগেও উঠেছে ভয়ানক এক ম্যাচ পাতানোর প্রচেষ্টার অভিযোগ। আর অভিযোগ উঠেছে খোদ রেফারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হান্নান মিরনের বিপক্ষে। গত মঙ্গলবার ছিল প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে বাকলিয়া একাদশ এবং চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ দলের মধ্যকার ম্যাচ। বাকলিয়া একাদশের কোচ মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ শামীম জানান ম্যাচের দুই দিন আগে থেকে রেফারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হান্নান মিরন তাকে এক পয়েন্টের জন্য খেলতে অনুরোধ করেন। শামীম তাকে জানিয়েছেন সেটা সম্ভব না। পরে মিরন নাকি হুমকি দিয়ে বলে এক পয়েন্টের জন্য না খেললে রেফারী দিয়ে তাকে হারিয়ে দেওয়া হবে। মাঠে খেলা চালাকালীন সময়েও বার বার মোবাইলে আবদুল মিরন চাপ দিতে থাকে শামীমকে। যাতে এক পয়েন্টের জন্য খেলা হয়। কিন্তু শামীম সেটা মানেনি বলে তার দলকে অফসাইডে গোল করিয়ে বাকলিয়া একাদশকে হারিয়ে দেওয়া হয়। তেমনই অভিযোগ করেছেন বাকলিয়া একাদশের কোচ শামীম। তিনি জানান বিষয়টি তিনি তার ক্লাবের কর্মকর্তা এবং সিজেকেএস যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলামকে। তবে জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম শহীদুল ইসলাম জানান তাদের কাছে সেরকম কোন অভিযোগ কেউই করেনি। জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সহ সভাপতি তাহের উল আলম চৌধুরী স্বপনও জানিয়েছেন তিনিও এরকম একটি অভিযোগ পেয়েছেন। তবে সেটা লিখিত কোন কিছু পাননি। যে কারনে জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছেনা। এদিকে রেফারী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের বিপক্ষে অভিযোগের যেন অন্ত নেই। প্রতিনিয়তই তার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমছে।

কিন্তু কোন কিছুই যেন তাকে স্পর্শ করতে পারেনা। কদিন আগে কোন অপরাধ না করেও জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এবং আগ্রাবাদ নওজোয়ান ক্লাবের কর্মকর্তা ওয়াহিদ দুলালকে সাসপেন্ড করার রিপোর্ট প্রদান করে। কল্লোল সংঘের সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন জাহেদের বিপক্ষে শাস্তি দেওয়ার রিপোর্ট প্রদান করে। যার ভিত্তিতে তাকে তিন ম্যাচ সাসপেন্ড করা হয়। তিনি আবার একই অঙ্গে অনেক রূপ। তিনি কখনো রেফারী এসেসর, কখনো কোন ক্লাবের কোচ, আবার কখনো কখনো একসাথে দুই দলকেই পরামর্শ দিতে দেখা গেছে। সবশেষ নিজেকে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ দলের কর্মকর্তা দাবি করে প্রতিপক্ষ দলকে পাতানো ম্যাচ খেলার প্রস্তাব প্রদান করে। তবে প্রস্তাব গ্রহণ না করায় বাকলিয়া একাদশকে রেফারী দিয়ে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির কোচ শামীম। এদিকে রেফারী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের বিপক্ষে অভিযোগের পাহাড় জমলেও তাকে কোন শাস্তি ভোগ করতে হয় না। বরং তার প্রমোশন হয়। যদিও মঙ্গলবার রাতে সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক তাকে আর খেলায় প্রবেশ না করার জন্য একটি চিঠি ইস্যু করেছেন বলে জানা গেছে। তবে কি কারণে তাকে মাঠে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে সে বিষয়টি জানা যায়নি। চিঠিতে বলা হয়েছে খেলার সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য তাকে মাঠে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে।

স্টেডিয়াম এলাকায় জুয়ার আসর বসিয়ে আলোচনায় আসা রেফারী সমিতির কার্যালয়ে পুলিশ হানা দিয়েছিল। বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ, ২৪ জনের মত জুয়াড়ি এবং বেশ কিছু জুয়ার সামগ্রী উদ্ধার করেছিল সেদিন পুলিশ। পরে এ নিয়ে তদন্ত কমিটি সহ নানা কিছু হয়েছে। তবে শাস্তির তো কিছুই হয়নি। উল্টো পুরস্কৃত করা হয়েছে তাকে। এরই সমিতির একাংশ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে সমিতির সদস্যদের কল্যাণ তহবিলের টাকা আত্মসাতের। আর সে বিষয়টি এখনো তদন্ত চলছে বলে জানা গেছে। রেফারী সমিতির একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে কল্যাণ তহবিলের টাকার কোন হিসেব পাওয়া যাচ্ছে না। কখন কিভাবে সে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে তা কেউ বলতে পারছেনা। গতকাল চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন জুয়া কান্ডের পর আবদুল হান্নান মিরন যখন পালিয়ে ছিলেন তখনও প্রিমিয়ার লিগের খেলা হয়েছে। কিন্তু কোন ম্যাচেই কোন ধরনের গন্ডগোল কিংবা রেফারীর বিপক্ষে তেমন কোন অভিযোগই উঠেনি। কিন্তু তিনি ফিরে আসার পর প্রায় প্রতিটা দলই কোন না কোন দিন তার বিরুদ্ধে কোন না কোন অভিযোগ করছেন। ঐ কর্মকর্তা বলেন এতেই বুঝা যাচ্ছে সমস্যাটার নাম সেই আবদুল হান্নান মিরন।

অধিকাংশ ক্লাব কর্মকর্তাদের অভিযোগ যে সব রেফারী তার পছন্দ না তারা যদি কোন ম্যাচে ভুল ভ্রান্তি করে থাকে তাহলে সেটা জনসমক্ষে প্রচার করে। সে রেফারী যাতে পরে আর কোন ম্যাচ না পায় সে জন্য নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করে। তবে তার পছন্দের রেফারীরা শত ভুল করলেও তা যেন সাত খুন মাফ। আর এভাবেই অপরিপক্ক, অনভিজ্ঞ এবং আনকোরা রেফারী দের দিয়ে ম্যাচ পরিচালনা করা হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। ক্লাব কর্মকর্তাদের অভিযোগ তার কোন আবদার পুরন না করলে প্রকাশ্যেই হুমকি দেওয়া হয় মাঠে তার দলকে হারিয়ে দেওয়ার। এবং সেটাও অনেক সময় হয় বলে অভিযোগ ক্লাব কর্মকর্তাদের।

নানা সময় নানা অভিযোগ উঠলেও তার কখনো কোন বিচার হয়নি। সব সময় পার পেয়ে গেছে। আর সে সুযোগেই কিনা এবার সরাসরি ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব দিয়ে বসলেন রেফারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হান্নান মিরন। নিশ্চয়ই এবারেও কোন বিচার হবেনা। কারণ বিচারহীনতার সংস্কৃতির এই যুগে পাতানো ম্যাচ কেন আরো বড় অপরাধ করলেও খুঁটির জোরে বেঁেচ যাওয়া যায়। যেমনটি বারবার বেঁচে গেছেন মিরন সেই খুঁটির জোরে। এবারেও কোন বিচার হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ যে দলের কর্মকর্তাকে তার কোচ সরাসরি বলে দিয়েছেন রেফারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাকে পাতানো ম্যাচ খেলার প্রস্তাব দিয়েছেন, ক্রমাগত চাপ দিয়ে যাচ্ছেন, সেই ক্লাবের কর্মকর্তা তা জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনকে জানানোর প্রয়োজনও বোধ করেনি। সেখানে বিচার হবেই বা কোথা থেকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভুটানকে এক গোলে হারালো নেপাল
পরবর্তী নিবন্ধসিএসইতে লেনদেন ১৬.৭৬ কোটি টাকা