প্রত্যয় স্বপ্ন দেখায় আলো ছড়ায়

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৯:১৪ পূর্বাহ্ণ

প্রত্যয় শব্দের অর্থ দৃঢ় বিশ্বাস, আস্থা। এই দৃঢ় বিশ্বাস নিয়েই ‘এসো স্বপ্ন দেখাই, আলো ছড়াই, একসাথে’- স্লোগান নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে প্রত্যয় শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক একাডেমি। পটিয়াতে যে ক’টি সংগঠন শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চা নিয়ে কাজ করছে প্রত্যয় শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক একাডেমি তার মধ্যে অন্যতম। প্রত্যয়ের কার্যক্রমের মাধ্যমে পটিয়ার সাংস্কৃতিক অঙ্গন নতুন করে প্রাণ পেয়েছে।
২০১০ সালে আবদুল্লাহ ফারুক রবির হাত ধরে যাত্রা করা এই সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়েছে একঝাঁক মেধাবী ও সৃজনশীল তরুণ-তরুণী। শুরু থেকেই প্রত্যয়ের সাথে যুক্ত ছিলেন সিরাজুল মোস্তাফা রাজু, এমরান হোসেন রাসেল, তন্ময় চক্রবর্তী, প্রিয়া শীল, নয়ন শীল প্রমুখ। অন্য সংগঠন যেখানে কমিটি নির্ভর প্রত্যয় সেখানে ব্যতিক্রম। প্রত্যয়ের রয়েছে ১০ জন উপদেষ্টা ও ১০ জন নির্বাহী সদস্য। সেই সাথে ৭০ জনেরও বেশী কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সদস্য। আর প্রত্যয়ের প্রতিটা কাজ পরিচালনা করার জন্য রয়েছে একজন করে সমন্বয়ক।
বিগত ১১ বছর ধরে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত বিষয়ে আরো বেশী চর্চা, মেধা ও সৃজনশীলতার বিকাশের জন্য বিভিন্ন শিক্ষা, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও সৃজনশীল কর্মকান্ডের আয়োজন ও অংশগ্রহণ করে চলেছে প্রত্যয়। একাডেমিতে চিত্রাংকন, সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি, বিতর্ক, তবলা, গীটার ও সুন্দর হাতের লেখার প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। প্রত্যয় চায় শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক চর্চার মধ্যে আলোকিত মানুষ, সৃজনশীল নেতৃত্ব গড়ে তুলতে। তাই প্রত্যয়ের কাজগুলোও বৈচিত্র্যময়। পটিয়াতে নিয়মিত আবৃত্তি ও বিতর্কের চর্চা একমাত্র প্রত্যয়ের মাধ্যমে হয়ে থাকে। আবৃত্তি প্রশিক্ষণ সহযোগী হিসেবে আছে চট্টগ্রামের বোধন আবত্তি পরিষদ আর বিতর্কের প্রশিক্ষণ সহযোগী হিসেবে আছে দৃষ্টি চট্টগ্রাম। পটিয়াতে সাংগঠনিক বিতর্ক প্রশিক্ষণ ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা নিয়মিতভাবে প্রত্যয় শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক একাডেমি আয়োজন করে।প্রত্যয় ২০১৪ সাল থেকে প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা বর্ণমালা ও বানান প্রতিযোগিতা আয়োজন করে আসছে। এ পর্যন্ত ৭টি আয়োজনে প্রায় ৩৫০০ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। প্রত্যয়ের আরেকটি আয়োজন হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উৎসব।
২০১৬ সাল থেকে ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উৎসব আয়োজন করে আসছে। বিজয় র‌্যালি, আলোচনা ও কথামালা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের দলীয় পরিবেশনায় মুখর থাকে দিনব্যাপী এ উৎসব। সংগীতঙ্গ আবদুল গফুর হালী শিক্ষা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক স্বর্ণপদক প্রতিযোগিতা প্রত্যয়ের আরেকটি নিয়মিত আয়োজন। এ প্রতিযোগিতায় পটিয়াসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে। প্রত্যয় প্রতিবছর দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে এক বছরের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করে। এ পর্যন্ত ৬০০ জনের অধিক শিক্ষার্থী প্রত্যয়ের শিক্ষা উপকরণ পেয়েছে। মরমী শিল্পী আবদুল গফুর হালীকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রত্যয় গত ৪ বছর ধরে পটিয়াতে আয়োজন করে আসছে হালী উৎসব। প্রত্যয় পটিয়ার অনেক কীর্তিমান সংস্কৃতিসেবী, কবি সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দিয়েছে।
করোনাকালীন সময়ে সাংস্কৃতিক চর্চার মন্দার মধ্যেও মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রত্যয় আয়োজন করেছে অনলাইন মাধ্যমে দেশব্যাপী বঙ্গবন্ধুর কর্ম ও জীবন বিষয়ে রচনা প্রতিযোগিতা। দেশের ১৪৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫৬৪ জন শিক্ষার্থী এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজন করেছে তিন দিন ব্যাপী বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক উৎসব। প্রত্যয় গত ৫ বছর ধরে পটিয়ার দুই কীর্তিমান বীরকন্যা প্রীতিলতা ও আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ স্মরণে অনুষ্ঠান আয়োজন করে।
প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও বিভিন্ন আয়োজন উপলক্ষে এ পর্যন্ত প্রত্যয় ১৩টি প্রকাশনা বের করেছে। প্রত্যয়ের অন্যান্য নিয়মিত আয়োজনগুলো হল রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী, ২৫ মার্চ মুক্তির কথা মুক্তির গান, মাদক ও তামাক বিরোধী জনসচেতনতা, রক্তদান ও রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা, শীত বস্ত্র ও ত্রাণ বিতরণ, স্মরণিকা প্রকাশ, সেরা সংগঠক পুরস্কার, শিক্ষা সফর, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক আড্ডা এবং কর্মজীবনে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজন। প্রত্যয় এই কাজগুলোর মাধ্যমে বেগবান করেছে পটিয়া তথা দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে। তাছাড়া প্রত্যয়ের কার্যালয়ে বই ও পত্রিকা পড়ার জন্য রয়েছে পাঠাগার। প্রত্যয় পরিবারের প্রতিটি সদস্য চায় সমাজ ও দেশের জন্য কিছু করতে। আর এই ‘কিছু’ করার তাড়না-ই প্রত্যয়ের শক্তি। তারা স্বপ্ন দেখাবে, আলো ছড়াবে, সবাইকে নিয়ে, এক সাথে…।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচুয়েটে ‘আইওটি-বেইসড স্মার্ট ক্যাম্পাস’ শীর্ষক সেমিনার
পরবর্তী নিবন্ধভাসমান মানুষ পেল পাবলিক টয়লেট ব্যবহারের এক্সেস কার্ড এটি মহতি উদ্যোগ : মেয়র