প্রতিযোগিতার পরিবেশ কতটা হল?

মোবাইল ব্যাংকিং

| শুক্রবার , ১৩ নভেম্বর, ২০২০ at ৫:৩৭ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে মোবাইলে ফোনে আর্থিক সেবা (এমএফএস) চালুর আট বছরের মাথায় এসে গ্রাহক সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৯ কোটি ৩০ লাখ; প্রতি মাসে লেনদেন হচ্ছে ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি। কিন্তু প্রতিযোগিতার পরিবেশ কি বাজারে তৈরি হয়েছে? বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বছরের পর বছর এ খাতে একচেটিয়া ব্যবসা চলে এলেও এখন কোম্পানিগুলো নতুন প্রযুক্তি এনে কম খরচে সেবা দিতে শুরু করায় প্রতিযোগিতা বাড়ার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। গ্রাহকরা এখন অন্তত সেবা বাছাই করার সুযোগ পাচ্ছেন, যার সুযোগ আগে ছিল না।
আর সেবাগ্রহীতারা বলছেন, এমএফএস সেবাদাতারা অ্যাপ চালু করার পর খরচ কিছুটা কমে এসেছে। তবে খরচ আরও কমানো উচিত, তাতে সাধারণ যেমন মানুষ উপকৃত হবে, গ্রাহকও বাড়বে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনের এ সেবা অনেকাংশে এজেন্ট নির্ভর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, গত আগস্ট মাস শেষে সারা দেশে এমএফএসগুলোর এজেন্ট ছিল ১০ লাখ ৯ হাজারের বেশি। খবর বিডিনিউজের।
গত এক বছরে এ খাতে গ্রাহক বেড়েছে ২৬.৩৫ শতাংশ, আর এজেন্ট বেড়েছে ৬.২১ শতাংশ।
মহামারী শুরু হওয়ার পর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ওপর মানুষের নির্ভরতা বেড়েছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে গ্রাহক। গত মার্চ থেকে আগস্টের মধ্যেই গ্রাহক বেড়েছে এক কোটির বেশি। গত আগস্ট মাসে দেশে এমএফএসগুলোর মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ৪১ হাজার কোটি টাকা, যা গত বছর একই সময়ে ২৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকার মত ছিল।
এ বছর আগস্ট মাসে এমএফএসের মাধ্যমে গ্যাস-বিদ্যুতের মত পরিষেবার বিল বাবদেই ৯০৮ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এছাড়া ১০৪ কোটি টাকা প্রবাসী আয় বিতরণ করা হয়েছে, বেতন-ভাতা পরিশোধ হয়েছে ১ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। ১ হাজার ৬০ কোটি টাকার কেনাকাটা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে এমএফএসের মাধ্যমে প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা লেনদেন হয়; যার ৮০ শতাংশই হয় দেশের সবচেয়ে বড় এমএফএস কোম্পানি বিকাশের মাধ্যমে। ২০১২ সালে বিকাশ এ সেবা চালু করার পর দেশে এখন নগদ, রকেট, ইউক্যাশ, এমক্যাশ, শিওরক্যাশসহ ১৫টির মত কোম্পানি এমএফএস সেবা দিচ্ছে। এর মধ্যে ডাক বিভাগের সেবা ‘নগদ’ এক বছরের কিছু বেশি সময়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এমএফএস-এ পরিণত হয়েছে।
মূলত নগদের প্রসারের কারণেই এ খাতে একচেটিয়া ব্যবসা করে আসা বিকাশ এখন কিছুটা প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হচ্ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সহযোগী অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান আলম। তিনি বলেন, নগদ সরকারি প্রতিষ্ঠান। তাই তাদের লাভের দিকটা বেশি চিন্তা করতে হচ্ছে না। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি টাকাও নগদের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। তাতে নগদের গ্রাহক বাড়ছে। বর্তমান এ খাতে বিকাশ, নগদ ও রকেটের মধ্যে একটা ভালো প্রতিযোগিতা তৈরির লক্ষণ রয়েছে, যা আগে ছিল না।
প্রতিযোগিতা যেখানে : বিকাশ এ খাতে কাজ করছে প্রায় দশ বছর ধরে, ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রতিযোগিতায় তারা এগিয়ে থাকবে। তুলনামূলকভাবে নতুন হলেও নগদের প্রসার এখন দ্রুত হচ্ছে, ফলে পার্থক্যটাও কমে আসছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশকেও এখনও প্রথাগত ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনা যায়নি। অথচ দেশের মানুষের হাতে মোবাইল ফোন রয়েছে ১৬ কোটির বেশি। এ সুবিধা কাজে লাগিয়েই দ্রুত বেড়ে উঠেছে মোবাইল ব্যাংকিং এবং বিকাশ। এ কোম্পানির গ্রাহক সংখ্যা বর্তমানে ৪ কোটি ৮০ লাখ।
অন্যদিকে ডাক বিভাগের আর্থিক লেনদেন সেবা ‘নগদ’ গত বছরের ২৬ মার্চ আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। মিঙড-লেড মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদের গ্রাহক সংখ্যা এখন আড়াই কোটির মত। এছাড়া রূপালী ব্যাংকের শিওরক্যাশের গ্রাহক সংখ্যা ২ কোটি ৩০ লাখ এবং ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের এমএফএস রকেটের গ্রাহক দুই কোটির বেশি। এর বাইরে অন্য এমএফএস- যেমন এম ক্যাশ, ইউ ক্যাশ, টেল ক্যাশ, ওকে, মাই ক্যাশ, স্পার্ট ক্যাশ, মোবাইল মানি, ট্যাপ অ্যান্ড পের মোট গ্রাহক সংখ্যা এ বাজারের এক শতাংশের মত।
এমএফএস খাতে প্রতিযোগিতার পরিবেশ কতটা তৈরি হয়েছে, সেই প্রশ্নে বিকাশের হেড অব কর্পোরেট কমিউনিকেশন্স শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, বিকাশ বরাবরই বিশ্বাস করে এমএফএস খাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড অর্থাৎ সুস্থ প্রতিযোগিতা বজায় থাকা উচিৎ। এক্ষেত্রে সকল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানই যেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা মেনে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে, গ্রাহকদের লেনদেন সক্ষমতা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করে, সেটিই কাম্য।
একই প্রশ্নে নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, আমি তো বলতে চাই নগদের কারণেই এ খাতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে গ্রাহকদের নিরাপত্তাও বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক গুণ। সব মিলে শুধু নগদের কারণেই মোবাইল ফাইনানশিয়াল সার্ভিস ডিজিটাল ফাইনানশিয়াল সার্ভিসে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা যখন যাত্রা করি, তখন দেশের এমএফএস খাতটি ছিল মাসে ৩০ হাজার কোটি টাকার কিছু নিচে। কিন্তু মাত্র দেড় বছরের ব্যবধানে তা দ্বিগুণের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। অবশ্যই এখানে ‘নগদ’ এর একটা বড় ভূমিকা আছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিনামূল্যে আর ছবি মজুদ করবে না গুগল
পরবর্তী নিবন্ধলেনদেন ২৭.৯৬ কোটি টাকা