প্রতিমাশিল্পী ও বাদ্যযন্ত্রের কারিগরদের ব্যস্ততা

আগামীকাল মহালয়া

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৪:৪৯ পূর্বাহ্ণ

শুভ্র শরতে-মেঘের পালকে সেজেছে প্রকৃতি। তার মাঝে বেজেছে শারদোৎসবের আগমনী ঘণ্টা। শরতের মেঘমেদুর আবহাওয়ায় আগামীকাল শুভ মহালয়া। বলা যায়, শারদীয় দুর্গোৎসবের সূচনা। এবার কৈলাস থেকে দেবী দুর্গা মর্ত্যে আসবেন গজে। শাস্ত্রে আছে-দেবীর গজে আগমনে শস্যপূর্ণা হবে বসুন্ধরা। আর ৫ অক্টোবর বুধবার বিজয়া দশমীর পূজা সমাপনান্তে দেবী নৌকায় কৈলাসে ফিরে যাবেন। শাস্ত্র মতে দেবীর নৌকায় গমনের মধ্য দিয়ে ফল-শস্য বৃদ্ধি ও জল বৃদ্ধি ঘটে। এদিকে শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রধান অনুসঙ্গ হলো ‘শুভক্ষণে ঢাকের কাঠি।’ পুজো শুরু থেকেই প্রতিটি মণ্ডপে মণ্ডপে ঢাক-ঢোলের শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে পূজামণ্ডপগুলো। তাই শারদীয় দুর্গোৎসব যতই ঘনিয়ে আসছে ততই নগরী এবং জেলায় ব্যস্ত সময় পার করতে হয় বাদ্যযন্ত্র তৈরির কারিগরদের।
মূলত আগামীকাল রোববার শুভ মহালয়ায় দেবীপক্ষের শুরু। এর মধ্যদিয়েই দুর্গাপূজার ক্ষণগণনা শুরু হয়ে গেছে। অশুভ শক্তির বিনাশ ও শুভ শক্তি প্রতিষ্ঠায় মর্ত্যে আসবেন দেবী দুর্গা। রোববার ২৫ সেপ্টেম্বর-৮ আশ্বিন ভোরে মহালয়ার ঘট স্থাপন, বিশেষ পূজা আর মন্দিরে মন্দিরে শঙ্খের ধ্বনি ও চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবীকে আবাহন জানানো হয়।
তাই আর মাত্র কয়েকদিন পরেই ঢাকে কাঠি পড়বে। শুরু হবে শারদীয় দুর্গোৎসব। সারা দেশের মতো পুরো চট্টগ্রাম জুড়ে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। দিন-রাত এক করে এখন রং আর তুলির আঁচড়ে শেষ রূপায়নের কাজ করছেন প্রতিমাশিল্পীরা। আগামী ১ অক্টোবর শ্রী শ্রী শারদীয়া দুর্গোৎসবের বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে দশভূজা দেবী দর্শন দেবেন তার অজস্র ভক্তকে। ধূপ, মঙ্গল প্রদীপ আর ঢাকের তালে ক’দিন পরেই মেতে উঠবে নগরীসহ পুরো চট্টগ্রাম। ইতোমধ্যে দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে মন্ডপ সাজানো ও নতুন জামা-কাপড় কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চট্টগ্রামের সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষ।
সনাতন ধর্মাবম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে মন্ডপে মন্ডপে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। সনাতনী সম্প্রদায়ের প্রধান এই ধর্মীয় উৎসব ঘিরে শহর থেকে গ্রামে এখন থেকেই শুরু হয়েছে সাজ সাজ রব। আর মাত্র ৬ দিন বাদেই ঢাক ঢোল ও শাখের তালে মুখর হয়ে উঠবে চট্টগ্রামের ১ হাজার ৯৮৩টি পূজামন্ডপ।
গতকাল নগরীর বেশ কয়েকটি প্রতিমা তৈরির মন্দিরে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিমা শিল্পীর তুলির আঁচড়ে যেন প্রাণ সঞ্চারিত হচ্ছে দেবীর দুর্গা, সরস্বতী, লহ্মী, কার্ত্তিক ও গণেশসহ সকল দেবতাদের। কারিগরদের যেন দম ফেলার সময় নেই।
শহরের প্রতিমা তৈরির প্রধান স্থান দেওয়ানজী পুকুর পাড়, সদরঘাট- বোস গলি, গোয়ালপাড়াসহ বেশ কয়েকটি পূজা মন্ডপ ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে পুরোদমে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। দিন রাত প্রতিমা শিল্পীরা কাজ করছেন।
প্রতিমা কারিগর অরিন্দম পাল ও সৈকত ভট্টাচার্য্য জানান, খড় আর কাঁচামাটি ও রংয়ের কাজ শেষে এখন নানা সাজসজ্জ্বায় দেবী দুর্গা, সরস্বতী, লহ্মী, কার্ত্তিক ও গণেশসহ সকল দেবতাদের বর্ণিল করে তোলার কাজ চলছে। এবার গত দুই বছরের চেয়ে বেশি প্রতিমার অর্ডার হয়েছে। দেড় লাখ থেকে ৪ লাখ টাকার প্রতিমারও অর্ডার হয়েছে বলে জানান শিল্পী অরিন্দম পাল।
এদিকে দেবীর বোধন থেকে প্রতিমা বিসর্জন পর্যন্ত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এই শারদীয়া দুর্গোৎসবকে আনন্দঘন করতে এবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা নেওয়া হবে বলে মহানগর ও জেলা পূজা কমিটির সাথে মতবিনিময় সভায় আশ্বাস দিয়েছেন সিএমপি কমিশনার এবং জেলা পুলিশ সুপার।
চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামল পালিত আজাদীকে বলেন, এবার চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় ২ হাজার ৬২টি মন্ডপে শারদীয়া দুর্গোৎসব উদযাপিত হবে। এর মধ্যে ১৫৮৭টি প্রতিমা পূজা এবং ৪৭৫টি ঘট পূজা হবে। রোববার শুভ মহালয়ার মধ্যদিয়ে দেবীপক্ষের শুভ সূচনা হবে। ইতোমধ্যে প্রশাসনের সাথে আমাদের বৈঠক হয়েছে। কোনো দুস্কৃতিকারী যেন গতবারের মতো কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে সেই উদ্বেগের কথাটি আমরা জানিয়েছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদেরকে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে ১ অক্টোবর দেবীর বোধন-অধিবাসের দিন থেকে ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীর দিন পর্যন্ত প্রতিটি মন্ডপে সার্বিক নিরাপত্তা দেয়া হবে।
প্রতি বছরের মতো এবারও ২৫ সেপ্টেম্বর রোববার শুভ মহালয়া অনুষ্ঠান মেধস মুনির আশ্রমে অনুষ্ঠিত হবে।
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি আশীষ কুমার ভট্টচার্য্য আজাদীকে বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও মহানগরীতে ২৮২টি মন্ডপে উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে দুর্গাপূজা উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়েছে পূজার্থী জনগন। ইতোমধ্যে পুলিশ প্রশাসন, জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে পূজার নিরাপত্তা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা সবখানে আশঙ্কার কথা জানিয়েছি। সুন্দরভাবে পূজা হবে বলে সবাই আমাদের আশ্বস্থ করেছেন। আমরা পূজার নিরাপত্তায় প্রশাসনের সহযোগিতা চাইছি।
পঞ্জিকা অনুসারে ২৫ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। ১ অক্টোবর ষষ্ঠী তিথিতে মণ্ডপে হবে দেবীর অধিষ্ঠান। ২ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ৩ অক্টোবর মহাঅষ্টমী, ৪ অক্টোবর মহানবমী ও ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমী।
মন্ডপে পূজার সময় এবং সন্ধ্যারতিতে প্রয়োজন ঢাক-ঢোল। তাই নগরের পাথরঘাটা সতীশ বাবু লেইনে গড়ে ওঠা দোকানগুলোতে ঢাক-ঢোলের জন্য খোল তৈরি, রং করা, চামড়া লাগানো এবং পুরোনো ঢোল মেরামতের কাজ চলছে পুরোদমে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশীর্ষ ধনী অধিনায়কের তালিকায় দ্বিতীয় সাকিব
পরবর্তী নিবন্ধঅপরাধ কমছে না পুলিশে