প্রতিবন্ধকতা দূর করলেই লক্ষ্যপূরণ

পোশাক শিল্পের উন্নয়নে আলাদা মন্ত্রণালয়, সমন্বিত পরিকল্পনা, ওয়ান স্টপ সেল গঠন ও অটোমেশন চান বিজিএমইএ নেতারা

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:১৭ পূর্বাহ্ণ

তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন সময়ের দাবি মন্তব্য করে বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেছেন, চীন, ভিয়েতনাম এবং মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ নানা সংকটের কারণে প্রচুর ক্রেতা আসছে বাংলাদেশে। আসছে প্রচুর অর্ডার। এই ধারা ধরে রাখতে হলে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করাসহ ব্যবসা-বাণিজ্যকে সহজীকরণ করতে হবে। আমলতান্ত্রিক জটিলতা কিংবা পদে পদে হয়রানি করে পঞ্চাশ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না। শুধু ‘ইজি অব ডুয়িং বিজনেস’ বাস্তবায়ন করা গেলে ১শ কোটি বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি সম্ভব।
গতকাল শনিবার নগরীর খুলশী বিজিএমইএ ভবনের সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রামে কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, মীরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর ও আনোয়ারা ইকোনমিক জোনে পোশাক শিল্পের কারখানা স্থাপনে স্বল্পমূল্যে ভূমি বরাদ্দ, সহজ ও স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ দেওয়া, চট্টগ্রামে কিছু ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় স্থাপন, চট্টগ্রামস্থ আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের দফতর, বস্ত্র অধিদফতর, ইপিবি, বিনিয়োগ বোর্ড, জয়েন্ট স্টক কোম্পানিকে সমস্যা সমাধানে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ক্ষমতায়ন, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাধ্যমে কানেকটিভিটি বৃদ্ধি করার ওপর জোর দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, করোনা মহামারির কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় বাংলাদেশের পোশাক শিল্প এক কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। আশির দশকে চট্টগ্রাম থেকে পোশাক শিল্পের যাত্রা শুরু হয়ে এক দশক পূর্বেও জাতীয় রপ্তানি ও প্রবৃদ্ধিতে চট্টগ্রামের পোশাক শিল্পের যে অবদান ছিল তা আজ ক্রমান্বয়ে নিম্নমুখী। চট্টগ্রামে বন্দর ও কাস্টমসের বিশেষ সুবিধা থাকার পরেও পোশাক শিল্পসহ অন্যান্য সেক্টরে কেন বিনিয়োগ বাড়ছে না তা গভীর পর্যালোচনার দাবি রাখে।
চট্টগ্রামের উন্নয়ন মানে বাংলাদেশেরই উন্নয়ন, চট্টগ্রামকে বাদ দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয় মন্তব্য করে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, সত্যিকার অর্থে বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে চট্টগ্রামকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যে বিরাজমান প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করে সর্বক্ষেত্রে অটোমেশন চালু করতে হবে। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সহজ করার ওপর জোর দিতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট সেবাকে অত্যাবশ্যকীয় ও জরুরি সেবা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করারও আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছা ও আন্তরিকতায় বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ চট্টগ্রামকে প্রকৃত অর্থে বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ, বিমানবন্দর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণ, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বে-টার্মিনাল নির্মাণ, কঙবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ, সমুদ্র পাড় ঘেঁষে আউটার রিং রোড নির্মাণ, শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন, মীরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্প অঞ্চল ও আনোয়ারায় অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চলমান রয়েছে। প্রকল্পগুলো যথাসময়ে বাস্তবায়ন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণে ইজি অব ডুয়িং বিজনেসের ফ্যাক্টরসমূহ নিশ্চিত করা হলে চট্টগ্রাম আক্ষরিক অর্থেই বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে গড়ে উঠবে। আর এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম অঞ্চল আবারো দেশের অর্থনৈতিক হাব হিসেবে অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
তিনি বলেন, ব্রান্ডিং ছাড়া পোশাক শিল্পকে টিকিয়ে রাখা যাবে না। পৃথিবীর বহু দেশে তৈরি পোশাক শিল্প করোনাকালে বন্ধ হয়ে যায়। ভিয়েতনামেও বন্ধ। ওইসব দেশের অর্ডারগুলো বাংলাদেশে আসছে। এই আসার সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে হবে।
বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট বলেন, প্রণোদনা নিয়ে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে। অনেকে প্রণোদনাটাকে অনুদান মনে করছেন। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রল করেছেন। প্রণোদনা আসলে ঋণ। এই ঋণের টাকায় আমরা শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করেছি। কারখানা বন্ধ থাকলেও শ্রমিকদের বেতন দিয়েছি। এখন সেই ঋণ পরিশোধ করা হচ্ছে। গার্মেন্টস মালিকেরা প্রণোদনার টাকা পরিশোধ শুরু করেছেন।
লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত ৪ হাজার ৭০০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২ হাজার ৭৩৪টি বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি ১ হাজার ৯৬৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১ হাজার ৬০০টি আমদানি-রপ্তানি কাজে নিয়োজিত আছে। চট্টগ্রামে ৬৭৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বন্ধ ৩৯৮টি, আমদানি-রপ্তানি কাজে নিয়োজিত আছে ১৯০টি। করোনা পরিস্থিতিতে গত মার্চ থেকে আগস্টের মধ্যে ঢাকায় ২৮১টি ও চট্টগ্রামে ৩০টি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। এক দশক আগে তৈরি পোশাক রফতানিতে চট্টগ্রামের ৪৯ শতাংশ অংশগ্রহণ থাকলেও গ্যাস, বিদ্যুৎ সংকট অবকাঠামোগত বিভিন্ন সমস্যার কারণে ১৪ শতাংশে নেমে এসেছে।
বিজিএমইএর সহসভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামে নতুন কারখানা স্থাপনসহ কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে নতুন বিনিয়োগে সহজ ও স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানে ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।
বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিন চৌধুরী জটিলতামুক্ত ব্যবসায়িক পরিবেশ গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, প্রতি বছর দুই থেকে আড়াই লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে এই শিল্পের মাধ্যমে। দুই থেকে আড়াই কোটি পরিবার এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। তাই এই শিল্পের উন্নয়নে ওয়ান স্টপ সেল গঠনের আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, ভিয়েতনাম ও চীন অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আমাদেরকেও আরো অনেক পথ যেতে হবে। পাঁচ বছর পর এই শিল্পকে আমরা কোথায় নিয়ে যেতে চাই, আমরা কোথায় যেতে চাই সেজন্য একটি সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার।
বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি এসএম আবু তৈয়ব অটোমেশানের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমরা দুর্নীতি করতে চাই না। দুর্নীতির শিকারও হতে চাই না।
এমএ সালাম বলেন, সরকার প্রণোদনা দেওয়ায় করোনাকালে আমরা শ্রমিকদের বেতন দিতে পেরেছি। ভিয়েতনাম, ভারতের চেয়ে আমাদের সরকার পোশাকশিল্প নিয়ে অনেক দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর, বে-টার্মিনাল হলে তৈরি পোশাক শিল্পে বিপ্লব ঘটাবে।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন বিজিএমইএর পরিচালক ও বিজিএমইএর প্রাক্তন প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ আবদুস সালাম, পরিচালক এমডি.এম. মহিউদ্দিন চৌধুরী, প্রাক্তন প্রথম সহসভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ ও মঈনউদ্দিন আহমেদ মিন্টু। উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর তানভীর হাবিব, এএম শফিউল করিম খোকন, মো. হাসান জ্যাকী, এম এহসানুল হক ও মিরাজ-ই-মোস্তফা কায়সার, প্রাক্তন সহ-সভাপতি মোহাম্মদ ফেরদৌস, এএম চৌধুরী সেলিম প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউপজেলা ও পৌরসভাগুলোকে শক্তিশালী করতে সরকার কাজ করছে
পরবর্তী নিবন্ধএসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হবে না