দেশের সব থেকে জনপ্রিয় সেবা হয়ে উঠেছে বর্তমানে ‘জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯’। যেখানেই ঘটনা সেখানেই ৯৯৯। চট্টগ্রাম তথা দেশের জনগণের কাছে বিশ্বস্ততার একটা স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে এই সেবা। প্রতিদিন প্রায় ৩০ হাজার ফোন আসে এই জাতীয় জরুরি সেবায়।
২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর জাতীয় জরুরি সেবার আওতায় ৯৯৯ সার্ভিস চালু হয়। এখন পর্যন্ত তিন কোটি ১২ লাখ ৫২ হাজার নাগরিক ৯৯৯-এর সেবা পেতে কল করেছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে জরুরি বিবেচনায় ৬৬ লাখ ৭৪ হাজার নাগরিককে সেবা দেওয়া হয়েছে। যা মোট কলের ২১ ভাগ। বাকি কলগুলো ছিল গুরুত্বহীন। সাধারণত পুলিশি সহায়তা, জরুরি পুলিশি সহায়তা, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স-এ চার ধরনের জরুরি সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে। মোট ১০০টি ডেস্কের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়া হয় ৯৯৯-এর মাধ্যমে। জনবল রয়েছে ৫০০। এটির গুরুত্ব বুঝতে একটি উদাহরণই যথেষ্ট। সেটি হলো এ সার্ভিস চালু হওয়ার পর থেকে দেড় হাজারেরও বেশি মানুষকে আত্মহত্যা থেকে বাঁচানো হয়েছে।
জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর মিডিয়া কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার সাত্তার জানান, প্রাথমিকভাবে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্সের জন্য যাত্রা শুরু করে ৯৯৯। কিন্তু এই জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এখন মানুষের কাছে অনেক জনপ্রিয়। সে ক্ষেত্রে যেকোনো ঘটনায় সবার আগে এই সেবার কথা মনে পড়ে।
প্রতিদিন এখানে ৩০ হাজার কল আসে। ৮ ঘণ্টা শিফটিংয়ের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যরা ডিউটি করেন। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-তে কাজ করেন এমন কর্মকর্তারা জানান, অ্যাম্বুলেন্সে দ্রুত রোগী আনা নেওয়া, প্রাণনাশের আশঙ্কা, ধর্ষণ-সংক্রান্ত ঘটনা, গৃহকর্মী নির্যাতন, কাউকে আটকে রাখা, লিফটে আটকে পড়া, অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকা, দুর্ঘটনা, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা, পারিবারিক সমস্যা, শব্দদূষণ, ছিনতাইসহ নানা বিপদ থেকে উদ্ধারে মানুষকে সহযোগিতা করা হচ্ছে ৯৯৯ এ ফোন পাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই। নাগরিকের জরুরি প্রয়োজনে কোনো একটি মুঠোফোন থেকে ৯৯৯-এ বিনা পয়সায় ফোন করতে পারেন। প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে এই সেবা। ৯৯৯ সার্ভিসের প্রশিক্ষিত কর্মীরা সমস্যার ধরন, নাম-পরিচয় ও ঠিকানা জেনে প্রয়োজন অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ বা অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদানকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। যেমন, কেউ পুলিশের সেবার জন্য ফোন করলে তাৎক্ষণিকভাবে ওই এলাকার সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশের সঙ্গে ফোনে ওই ব্যক্তিকে কথা বলিয়ে (টেলি কনফারেন্স) সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়। এই সেবার ওপর সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে যে আস্থা তৈরি হয়েছে, তা ধরে রাখাকেই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন ৯৯৯ সার্ভিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
৯৯৯-এ ফোন করে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে ঝড়ের কবলে পড়া ২০ পর্যটককে পুলিশের সহায়তায় উদ্ধার করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাঙামাটি জেলা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। আটকে পড়া এক পর্যটক বলেন, বিভিন্ন সময় ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশের সহায়তায় বিপদ থেকে উদ্ধারের খবর শুনেছি। হঠাৎ বিষয়টি মাথার আসার সঙ্গে সঙ্গে ৯৯৯-এ ফোন করি। ফোন করার ঘণ্টা খানেকের মধ্যে রাঙামাটি পুলিশ দুটি বোট নিয়ে আমাদের বিপদ থেকে উদ্ধার করে। আমরা রাঙামাটি পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞ।