প্রতারককে কৌশলে ডেকে এনে পুলিশে দিলেন ভুক্তভোগী

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১ মার্চ, ২০২১ at ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ

নিজেকে তিনি চট্টগ্রাম বিমানবন্দর সিভিল এ্যাভিয়েয়েশনের সিনিয়র অডিট অফিসার হিসেবে পরিচয় দেন। নিলামে গাড়ি কিনে দেওয়ার কথা বলে ছয় লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তাকে মামলার বাদী ও তার সঙ্গীরা কৌশলে ডেকে এনে পুলিশে দেন। তার নাম জাবেদ হোসেন চৌধুরী ওরফে জাহিন চৌধুরী (৩৭)। তিনি ফেনীর দাগনভূঞা চৌধুরী বাড়ির জাহিদ চৌধুরীর ছেলে। পরে পুলিশ তার নগরীর ভাড়া বাসা পাহাড়তলী থানাধীন সরাইপাড়া বড় মসজিদ মেট্রো আমিন ভবনের ৬ষ্ঠ তলায় অভিযান চালিয়ে AUTHORITY BANGLADESH (CAAB) এর নিজের নামে ২ টি কার্ড (প্রত্যেকটি কার্ডের গায়ে হযরত শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, কুর্মিটোলা, ঢাকা বাংলাদেশ লেখা আছে), বিভিন্ন ব্যাংকের ৮ টি এটিএম কার্ড ও নগদ ৮,৫০০ টাকা জব্দ করে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, জাহিন চৌধুরী একজন বড় প্রতারক। তিনি বিভিন্ন জন থেকে প্রলোভন দেখিয়ে টাকা নিয়ে পরে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ আছে বলে আমরা শুনেছি। এসব বিষয়েরও তদন্ত চলছে।
মামলার বাদী আকতার আজাদীকে জানান, তিনি একজন ড্রাইভার। তার বন্ধু সিএনজি টেঙি চালক সোহেলের মাধ্যমে আসামি জাহিন চৌধুরীর সাথে তার পরিচয়। আকতার তাকে নিয়ে কঙবাজার যান। যাওয়া আসার পথে আসামি তাকে জানান যে, তিনি চট্টগ্রাম এয়ারপোর্টের সিভিল এ্যাভিয়েশনের সিনিয়র অডিট অফিসার হিসেবে চাকরি করেন। এরপর থেকে তাকে নিয়ে প্রায়শই ভাড়ায় যেতেন আকতার। একদিন আসামি আকতারকে বলেন- তিনি এয়ারপোর্ট থেকে নিলামে গাড়ি নিয়ে দিতে পারেন। আকতার জাহিনের কথায় রাজি হয়ে একটি এলিয়ন গাড়ি, মডেল নং-২০০৮, ৯ লাখ টাকায় কিনে দিতে বলেন।
আকতার বলেন, গত ২১ জানুয়ারি বেলা দুইটার দিকে হালিশহর থানাধীন পশ্চিম রামপুর, নয়াবাজার মোড়, পূবালী ব্যাংকের সামনে তার হাতে দুই লাখ টাকা এবং আমার ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফটোকপি, এনআইডির ফটোকপি দিই। গত ৭ ফেব্রুয়ারি সকাল দশটার দিকে আসামি আমাকে ফোন করে জানান, গাড়ির কাগজপত্র ঠিক করা হয়েছে এবং সেদিনই তাকে চার লাখ টাকা দিতে হবে। আমি সেদিন তার এ্যাকাউন্ট নম্বরে এক লাখ টাকা জমা করি। আসামি বাকি তিন লাখ টাকা চাইলে আকতার ১১ ফেব্রুয়ারি তার সাথে দেখা করে তিন লাখ টাকা দেন। অবশিষ্ট ৩ লাখ টাকা দিলে গাড়ি বুঝিয়ে দেবেন বলেও জানান জাহিন চৌধুরী।
ঘটনাস্থলে আসামি জাহিন চৌধুরী বাদী আকতারের বন্ধু জসিমকে বলেন ২০১৭ মডেলের এঙ নোহা মাইক্রোবাস ২৪ লাখ টাকায় দিতে পারবেন। জসিম রাজি হন। কথা হয় পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে জসিম নোহার অগ্রিম বাবদ ১০ লাখ দেবেন। বাকি ১৪ লাখ টাকা গাড়ি বুঝিয়ে দিলে দেবেন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বাদী আকতার গাড়ির অবশিষ্ট ৩ লাখ টাকা জোগাড় করে জাহিন চৌধুরীকে ফোন দিলে তিনি কালক্ষেপণ করতে থাকেন। আকতারের সন্দেহ হলে তিনি চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, সেখানে এই নামে কেউ চাকরি করেন না এবং সেখান থেকে গাড়িও নিলাম হয় না।
আকতার প্রতারকের ফাঁদে পড়েছেন বুঝতে পেরে বন্ধু জসিমের সাথে পরামর্শ করে তাকে ২৭ ফেব্রুয়ারি ফোন দেন নোহা মাইক্রোবাসের অগ্রিম ১০ লাখ টাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে জাহিন চৌধুরী হালিশহর থানাধীন জি ব্লকে ওয়াপদা মোড়ে এলে তাকে ধরে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ তাকে নিয়ে তার বাসা তল্লাশি করে, বিভিন্ন ব্যক্তির কয়েকটি বায়োডাটা, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, চেকবই, এটিএম কার্ড এবং পাসপোর্ট উদ্ধার করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঢাকায় পুলিশের লাঠিপেটায় পণ্ড ছাত্রদলের সমাবেশ
পরবর্তী নিবন্ধপ্রকাশিত সংবাদ প্রসঙ্গে শৈবাল দাশ সুমনের বক্তব্য