প্রজননের জন্য এসে দিচ্ছে প্রাণ

পাঁচবছর পর সেন্টমার্টিনে দেখা গেল মৃত হক্সবিল কাছিম রেজু সৈকতে ভেসে আসছে মৃত ও মুমূর্ষু রাজকাঁকড়া

কক্সবাজার প্রতিনিধি | বুধবার , ১৮ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ

সৈকতে ডিম পাড়ার জন্য অসংখ্য মূল্যবান প্রাণী এখন উপকূলমুখী। আর তাদের মধ্যে রয়েছে আইনিভাবে সুরক্ষিত বঙ্গোপসাগরের ‘লিভিং ফসিল’ নামে পরিচিত রাজকাঁকড়া এবং ‘সাগরের ঝাড়ুদার’ হিসেবে পরিচিত সামুদ্রিক কাছিমও। কিন্তু প্রজননের জন্য উপকূলে আসার পথে কক্সবাজারে প্রতিদিন বেঘোরে মারা পড়ছে কোটি কোটি টাকার রাজকাঁকড়াসহ বহু মূল্যবান সামুদ্রিক প্রাণী।

হর্সশো ক্র্যাব বা রাজকাঁকড়া স্থানীয়ভাবে ‘দিও কিঁয়ারা’ নামে পরিচিত। নীল রক্তের এ প্রাণিটির রক্ত যাদুকরী ওষুধী গুণ সম্পন্ন হওয়ায় একটি রাজকাঁকড়ার অর্থনৈতিক মূল্য প্রায় ২০ লাখ টাকা এবং পরিবেশগত অর্থনৈতিক মূল্য আরো কয়েক গুণ ধরা হয়। অন্যদিকে সামুদ্রিক কাছিমকে সাগরের পরিবেশতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই প্রাণী দুটি দেশের সংরক্ষিত বন্যপ্রাণীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত বা আইনিভাবে সুরক্ষিত। অথচ কক্সবাজারের বিভিন্ন সৈকতে প্রায় প্রতিদিনই পড়ে থাকতে দেখা যায় মৃত ও মুমূর্ষু রাজকাঁকড়া ও কাছিমসহ বিভিন্ন মূল্যবান সামুদ্রিক প্রাণীর মৃতদেহ। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের একদল বিজ্ঞানী রেজু সৈকত পরিদর্শনে গিয়ে একটি মুমূর্ষু রাজকাঁকড়া উদ্ধার করেন বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ও সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর। আহত ওই রাজকাঁকড়াটিকে গবেষণাগারে রাখা হয়েছে এবং সেটি এখনও সুস্থ আছে জানিয়ে সোমবার রাত ৯টার দিকে জানান, এর আগে পেঁচারদ্বীপ সৈকত থেকেও একাধিকবার মৃত রাজকাঁকড়া উদ্ধার করা হয়।

এদিকে দেশে প্রায় ৫ বছর পর গত শনিবার সেন্টমার্টিনে দেখা মিলেছে হক্সবিল টার্টল বা ভূত কাছিমের। বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের একদল গবেষক সেন্টমার্টিন দ্বীপের উত্তর পাড়া সৈকত পরিদর্শনকালে একটি মৃতঅর্ধগলিত হক্সবিল টার্টল বা ভূত কাছিম পড়ে থাকতে দেখেন। কাছিমটি তারও ৪/৫ দিন আগে মারা যায় বলে ধারণা প্রতিষ্ঠানটির গবেষকদের। কিন্তু কীভাবে বিলুপ্ত প্রায় কাছিমটি মারা গেল তা উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর। তিনি বলেন, আহত কাছিমটির মাথায় আঘাতের প্রকৃতি দেখে সেটি আক্রমণে মারা গেছে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের। এরআগে গত ১০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের একদল শিক্ষার্থী দুবলার চরে শিক্ষা সফরে গিয়ে একটি হক্সবিল কাছিমের গলিত মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন এবং তারা ছবিও তুলেন।

হক্সবিল টার্টল রঙিন খোলসের কারণে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সামুদ্রিক কচ্ছপ হিসেবে বিবেচিত। এটি প্রবাল প্রাচীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাসিন্দা এবং এদের প্রধান খাদ্য স্পঞ্জ। প্রবাল প্রাচীরের মধ্যে থাকা স্পঞ্জ খেয়ে এরা প্রবাল প্রাচীরগুলিকে বাড়তে সাহায্য করে। প্রবাল প্রাচীরে নানা প্রজাতির জীবন নিয়ে এক অসাধারণ জীববৈচিত্র্য গড়ে তোলার একটি জৈব কারিগর হিসেবে বিবেচিত হক্সবিল টার্টল এর অভাবে সমুদ্রে ক্ষতিকর স্পঞ্জ এর বৃদ্ধি খুব বেশি বেড়ে পেতে পারে এবং এর ফলে ধীরে ধীরে প্রবালের শ্বাসরোধ করতে পারে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা আইইউসিএন এর তালিকায় হক্সবিল টার্টল এর অবস্থান রেডলিস্টে।

অপরদিকে সেন্টমার্টিনে ৫ বছর পর হারিয়ে যাওয়া হক্সবিলের মৃতদেহের দেখা মিললেও ২ বছর ধরে হারিয়ে যাওয়া গ্রিন টার্টল বা সবুজ কচ্ছপের দেখা এখনও মিলেনি। একটি স্বাস্থ্যকর সমুদ্রের প্রয়োজনীয় অঙ্গ হিসেবে বিবেচিত সামুদ্রিক কচ্ছপ। এরা সমুদ্রের পঁচাগলা বস্তু খেয়ে দূষণ পরিষ্কার করে। এটি পরিবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বা ‘কিস্টোন প্রজাতি’ হিসেবেও বিবেচিত। পরিবেশে এই ধরনের প্রজাতির বেঁচে থাকার উপর নির্ভর করে আরো বহু প্রজাতির প্রাণীর অস্তিত্ব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাজারী গলিতে ৪০ লাখ টাকার ওষুধ জব্দ
পরবর্তী নিবন্ধলেজার রশ্মির সাহায্যে সরানো হলো বজ্রপাত