প্রকৃতির কোল ঘেঁষে সম্ভাবনার এক সড়ক

ইয়াংছা-মানিকপুর-শান্তিবাজার আজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

চকরিয়া প্রতিনিধি | বুধবার , ২১ ডিসেম্বর, ২০২২ at ১০:১২ পূর্বাহ্ণ

ইয়াংছা-মানিকপুর-শান্তিবাজার দীর্ঘ ১৯ কিলোমিটার উন্নয়নকৃত জেলা মহাসড়কটি কক্সবাজারের চকরিয়া ও বান্দরবানের লামা উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। সড়কটির উন্নয়নের ফলে কয়েকটি উপজেলার সাথে দুই জেলার মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ যেমন নিশ্চিত হয়েছে তেমনি খুলেছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনার দ্বার, পাল্টে গেছে অর্থনীতির চাকা। ৫৫ কোটি ২২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা ব্যয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ এই সড়কটি নির্মাণ করে। বহুল প্রতীক্ষিত সড়কটি আজ বুধবার ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন সারাদেশে একযোগে ২ হাজার কিলোমিটার উন্নয়নকৃত মহাসড়ক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এই সড়ক নির্মাণের আগে চকরিয়া সদর থেকে বান্দরবানের লামায় যাতায়াতে ব্যবহার করতে হতো পুরনো সড়কটি। এতে চরম মৃত্যুঝুঁকি ছাড়াও সময়ের অপচয় হতো বেশি। এই অবস্থায় ইয়াংছা-মানিকপুর-শান্তিবাজার সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ায় যানবাহনে মাত্র আধঘণ্টার মধ্যেই লামা সদরে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে। শুধু তাই নয়, মানিকপুরের পাহাড়ের ভেতর ও পাদদেশ হয়ে সড়কটি নির্মাণ হওয়ায় পর্যটনেরও অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

বিশেষ করে চকরিয়ার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের মানিকপুর অংশে সেগুন বাগানের ভেতর দিয়ে যখন সড়কটি পার হয় তখন অন্যরকম অনুভূতি দেখা দেয় মানুষের মাঝে। প্রায় একবছর ধরে সড়কটির মানিকপুর অংশে অসংখ্য দেশি-বিদেশি পর্যটকও ভ্রমণ করেছেন। ইউনিয়নের আরেক পর্যটন স্পট সুরাজপুরের নিভৃতে-নিসর্গ পার্ক দেখতে গেলেই সড়কটির মানিকপুর অংশ চোখে পড়ে। তখন এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশে বিমোহিত হয়ে উঠেন পর্যটকেরা। সেই স্পটে প্রকৃতির সাথে মিতালী করে ফটোসেশনেও অংশ নেন তারা।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানায়, সড়কটির দৈর্ঘ্য ১৯ কিলোমিটার (চকরিয়া অংশে ১৭ দশমিক ৬০ ও লামা অংশে ১ দশমিক ৪০ কিলোমিটার) এবং প্রস্থ ৫ দশমিক ৫০ মিটার। পুরনো এই সড়কটিতে নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫০ কিলোমিটার। ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট প্রশস্তকরণ করা হয়েছে ১১ দশমিক ৫০ কিলোমিটার, রিজিড পেভমেন্ট করা হয়েছে ৩০০ মিটার এবং আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে ১১টি (২৭ মিটার)। ২০১৮ সালের পহেলা জুলাই কাজ শুরুর পর এটির নির্মাণ শেষ হয় ২০২২ সালের ৩০ জুন। সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরএবিআরসি লিমিটেড।

চকরিয়ার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম দৈনিক আজাদীকে বলেন, দৃষ্টিনন্দন এই সড়কটি নির্মাণের মধ্য দিয়ে আমার ইউনিয়নের মানুষের ভাগ্যের আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এখানকার জমির দামও অনেকগুণ বেড়ে গেছে। টেকসই সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ায় এখানকার রকমারি সবজি, তামাকসহ বিভিন্ন পণ্য নির্বিঘ্নে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে স্বল্প খরচে পৌঁছাতে পারছেন। চেয়ারম্যান বলেন, সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে এই সড়কটি চকরিয়ার সাথে বান্দরবানের লামার সংযোগ স্থাপন হওয়ায় খুব অল্প সময়েই যাতায়াত করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি সড়কটি ঘিরে মানিকপুরের সেগুন বাগান এলাকায় পর্যটনের অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সুরাজপুরের নিভৃতে-নিসর্গ পর্যটন স্পট এবং এই সড়কটিকে ঘিরে প্রতিদিন প্রচুর দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমন ঘটছে। যা স্থানীয় অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখছে।

লামা উপজেলার বাসিন্দা ও লামা প্রেস ক্লাবের সভাপতি প্রিয়দর্শী বড়ুয়া বলেন, ইয়াংছা-মানিকপুর-শান্তিবাজার সড়কটি দিয়ে চলাচল করতে মন জুড়িয়ে যায়। তাই নতুন এই সড়ক দিয়ে চকরিয়া পৌরশহর চিরিঙ্গা হয়ে জেলা সদর বান্দরবানেও আমরা যাতায়াত করি। এতে অতীতের মতো আর সময়েরও অপচয় হয় না। তাছাড়া লামার উৎপাদিত কৃষিপণ্যও নির্বিঘ্নে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে দ্রুতই।

চকরিয়া সড়ক উপ-বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ দিদারুল ইসলাম বলেন, সড়কটির উন্নয়নের ফলে চকরিয়া থেকে লামা, আলীকদম উপজেলার সাথে দূরত্ব কমার পাশাপাশি চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী, সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল ও বরইতলী ইউনিয়ন সমূহের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। এছাড়া এসব জনপদে উৎপাদিত কৃষিপণ্য সহজেই দেশের বিভিন্ন জেলায় পৌঁছানো যাচ্ছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহে আরেফিন বলেন, সড়কটির উন্নয়নের ফলে কয়েকটি উপজেলার সাথে দুই জেলার মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত হয়েছে।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম বলেন, সড়কটির প্রশস্ততা বাড়াতে গিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং সওজ কর্তৃপক্ষকে বার বার বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। পরে আমি নিজেই উপস্থিত থেকে বুলডোজার দিয়ে অনেক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করি। আবার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে বিপুল অর্থও দিয়েছি। যাতে সিডিউল অনুযায়ী নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়া ছাড়াও সড়কটি দেখতে দৃষ্টিনন্দন লাগে। অবশেষে সেই সড়কটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন আগামীকাল (আজ)। এজন্য তাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলমের ইন্তেকাল
পরবর্তী নিবন্ধবিএনপি হচ্ছে ‘ফিনিক্স পাখি’, এখন আরও ‘শক্তিশালী’: মোশাররফ