আগামী জুন মাসে শেষ হচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) বাস–ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ। অথচ এখনো টার্মিনাল নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণ কাজই শেষ হয়নি। এদিকে চলতি অর্থ বছরে প্রকল্পটির এডিপি’তে বরাদ্দ আছে ১৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তি বাবদ চলতি মাসের শুরুতে সাড়ে ৯৭ কোটি টাকা ছাড় করেছে মন্ত্রণালয়। এ অবস্থায় প্রকল্পটির মাঠ পর্যায়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে গেছেন মন্ত্রণালয়ের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
জানা গেছে, প্রতিনিধি দলটি গত শনিবার চট্টগ্রাম আসেন। গতকাল দিনভর কাজের গুণগত মান পরিদর্শন শেষে সন্ধ্যায় ঢাকা ফিরে যান। প্রতিনিধি দলে ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব আল আমিন সরকার (পরিকল্পনা অধি শাখা), উপ সচিব মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়া ( পরিচালক– ১) এবং উপ সচিব পলি কর ( পরিকল্পনা –২)। প্রতিনিধি দলের চট্টগ্রাম আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিটি মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর ‘ম্যাচিং ফান্ড’র শর্ত ছাড়াই বাস–ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণসহ সড়ক উন্নয়নে এক হাজার ২২৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকার প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়। তখন প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত। সর্বশেষ গত বছর প্রকল্প ব্যয় ও মেয়াদ দুটোই বাড়িয়ে সংশোধন করা হয়। সংশোধিত প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ২৬৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। সর্বশেষ আরো এক বছর বৃদ্ধি করে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এ প্রকল্পে ২৯৫ কোটি টাকায় কুলগাঁওয়ে বাস–ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণসহ নগরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়কের উন্নয়ন কাজ অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে সড়কের কাজ শেষ হলেও টার্মিনাল নির্মাণ কাজ শুরুই হয়নি। এ পর্যন্ত প্রকল্পটির কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
মূলত প্রকল্পটির উপ–প্রকল্প হিসেবে কুলগাঁওয়ের বালুছড়ায় ২৯৫ কোটি টাকায় ৮ দশমিক ১০ একর জায়গায় বাস–ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি অর্ন্তভুক্ত। এর মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণে ২৬০ কোটি পাঁচ লাখ পাঁচ হাজার টাকা, ভূমি উন্নয়নে তিন কোটি ৩৭ লাখ টাকা, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ ইয়ার্ড নির্মাণে ২৫ কোটি টাকা এবং সাড়ে সাত কোটি টাকায় টার্মিনালের অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় সেটা আটকে আছে।
জানা গেছে, ২০২০ সালের ২০ জানুযারি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কাছে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সংস্থা নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর ও সিডিএ’র অনাপত্তিপত্রসহ ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ১৩০ কোটি টাকা জমা দেয় চসিক। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়।
তবে ভূমি মালিকদের আপত্তিতে থমকে যায় অধিগ্রহণ কার্যক্রম। ক্ষতিপূরণ দেয়ার সময় ভূমি মালিকরা দাবি করেন, জমিগুলো নাল শ্রেণির। তবে জেলা প্রশাসনের সার্ভেতে নির্ধারণ করা হয় ডোবা বা খাই শ্রেণির। পরবর্তীতে স্থানীয়দের দাবির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়। গত বছর মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, যে অবস্থায় রয়েছে সে আলোকেই ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। অর্থাৎ ডোবা শ্রেণি হিসেবে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক প্রকৌশলী দৈনিক আজাদীকে বলেন, ভূমি অধিগ্রহণে এখন ৮ ধারার নোটিশ জারি করা হবে। নোটিশটি হল ভূমি মালিকদের ক্ষতিপূরণের টাকা বুঝে নেয়ার জন্য। এটি জারি হলে কাজ শুরু করতে আর সমস্যা হবে না।
জানা গেছে, প্রতিদিন শহরে তিন পার্বত্য জেলা, কঙবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কয়েকশ বাস নগরে প্রবেশ করে। এছাড়া বন্দরকেন্দ্রিক আরো আট থেকে ১০ হাজারের বেশি ছোট–বড় ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লরিসহ অন্যান্য পণ্যবাহী গাড়ি আসা–যাওয়া করে। টার্মিনাল না থাকায় যত্রতত্র যানবাহনগুলো দাঁড়িয়ে থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। অথচ পরিবহনের চাপ বাড়লেও গত ২৯ বছরে নগরে কোনো বাস–ট্রাক টার্মিনাল গড়ে উঠেনি। সর্বশেষ ১৯৯৩ সালে শহরে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়। এ অবস্থায় বাস–ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণসহ সড়ক অবকাঠামোগত উন্নয়নে প্রকল্প নেয় চসিক।
জানা গেছে, টার্মিনালের মুখে দ্বিতল একটি ভবন নির্মাণ করা হবে। ভবনটির প্রথম তলায় সিটি বাস টার্মিনাল, আন্তঃনগর বাস টার্মিনালে একটি যাত্রী নামার লেন, ২৫টি যাত্রী উঠার লেন, ১৪টি অতিরিক্ত নামার–অপেক্ষমাণ লেন, ছাদযুক্ত বৃহদাকার খোলা হল রুম এবং তথ্য কেন্দ্র থাকবে। এছাড়া প্রতিটি ফ্লোরে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক পৃথক বৃহদাকার ওয়াশ রুম (টয়লেট), ২২টি টিকেট কাউন্টার, ওয়াইফাই সুবিধাসহ যাত্রীদের বসার জায়গা, লাগেজ রুম, ট্যাঙি বুকিং রুম, প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র থাকবে। এছাড়া রেস্তোরাঁ, এসি বাস যাত্রীদের বসার জায়গা, বাস–ট্রাক মালিকদের অফিস, প্যানোরোমা রেস্টুরেন্ট, বাস কর্মচারীদের আবাসন রুম, কমনরুম ও ওয়াসরুমসহ থাকার ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ৩০টি কার এবং ট্যাঙি পার্ক, পেট্রোলপাম্প, ৬৯টি বাস ডিপো, ১৭টি ওয়ার্কসপ ও সার্ভিসিং সেন্টার, চারটি সার্ভিসিং লাইন, আটটি রক্ষণাবেক্ষণ ওয়ার্কশপ লাইন, সাব স্টেশন এবং অন্যান্য টেকনিক্যাল সাপোর্ট স্টেশন থাকবে।