পোস্টার ব্যানারে সৌন্দর্যহানি

আছে একাধিক কাউন্সিলরের ফেস্টুনও ।। জায়গা নির্দিষ্ট করে দেয়ার পরিকল্পনা চসিকর

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৬ জুলাই, ২০২২ at ৭:৩২ পূর্বাহ্ণ

সারা বছর নগরজুড়ে অসংখ্য পোস্টার ও ব্যানারফেস্টুন চোখে পড়ে, যা সৌন্দর্যহানি করে। বিশেষ কোনো উপলক্ষ এলে ব্যানারফেস্টুনের সংখ্যা রাতারাতি কয়েক গুণ বেড়ে যায়। যেমন রাষ্ট্রীয় কোনো দিবস, রাজনৈতিক কর্মসূচি বা ধর্মীয় উৎসব। বিশেষ উপলক্ষের ব্যানারফেস্টুনের বেশিরভাগই স্থাপন করেন রাজনৈতিক কর্মীরা। আইন অনুযায়ী, শহরে ব্যানার ফেস্টুন লাগানোর জন্য নির্দিষ্ট ফি দিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) অনুমতি নিতে হয়। তবে শহরে স্থাপিত বেশিরভাগ ব্যানারফেস্টুন আইন মেনে লাগানো হয় না। আইন না মানলেও উপলক্ষ বিবেচনায় কর্পোরেশন চুপ থাকে। উপলক্ষ শেষ হলে ব্যানারফেস্টুন অপসারণ করে।

উপলক্ষ শেষ হয়ে গেলেও অপসারণ না করা ফেস্টুন নগরের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দেখা গেছে। আবার ওইসব ফেস্টুনের বেশ কয়েকটি স্থাপন করেছেন খোদ চসিকের একাধিক কাউন্সিলর। কায়সার নামে এক পথচারী মন্তব্য করেছেন, শহরের সৌন্দর্যবর্ধনের দায়িত্ব যাদের হাতে তারাই সৌন্দর্যহানি ঘটাচ্ছে!

জানা গেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছিল গত ২৩ জুন। এ উপলক্ষে নগরের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ব্যানার ও ফেস্টুন লাগিয়েছিলেন দলটির নেতাকর্মীরা। এরপর ২৫ জুন উদ্বোধন হয় পদ্মা সেতু। এ উপলক্ষে মোড়ে মোড়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারিবেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও ব্যানারফেস্টুন লাগানো হয়। এর আগে ৩০ মে অনুষ্ঠিত যুবলীগের সম্মেলন উপলক্ষে লাগানো ব্যানার ও ফেস্টুনে ছেয়ে যায় নগরী। তবে এসব উপলক্ষ শেষ হয়ে গেলেও অনেক জায়গায় গতকালও ব্যানারফেস্টুন দেখা গেছে।

এদিকে ঘনিয়ে আসছে ঈদুল আজহা। নগরবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে অনেকে ব্যানার লাগানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর আগে ঈদুল ফিতরের সময়ও শুভেচ্ছা সম্বলিত পোস্টার, ব্যানার দেখা গেছে। চকবাজার মোড়ে এখনো রয়ে গেছে ওইসব ব্যানার।

নগরের বিভিন্ন স্পট ঘুরে অলিগলিতে অসংখ্য পোস্টারব্যানার দেখা গেছে। দেওয়ানহাট থেকে শেখ মুিজব রোড হয়ে জাম্বুরী ফিল্ড এবং সিডিএ আবাসিক এলাকা, আন্দরকিল্লা, টেরীবাজার, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, শুলকবহর, আগ্রাবাদ, নিউ মার্কেট, স্টেশন রোড, রাস্তার মাথা, জিইসি, পাঁচলাইশ, ফয়’স লেক, চকবাজার ও হালিশহরসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যানারফেস্টুন দেখা গেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ ছিল রাজনৈতিক। এদিকে জামালখান মোড়ে ২১ নং জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নামে লাগানো দুটি ফেস্টুন দেখা গেছে। আন্দরকিল্লা ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক চত্বরের ম্যুরালটি ঢেকে ফেলা হয় শৈবাল দাশ সুমন ও ৩৩ নং ওয়ার্ড ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লবের ফেস্টুনে। গণি বেকারি মোড়েও শৈবাল দাশ সুমনের ফেস্টুন দেখা গেছে।

নিমতলা মোড়ে ফেস্টুনে আড়াল হয়ে গেছে ক্রিকেটারদের ম্যুরাল। এছাড়া জিইসি মোড়, প্রবর্তক মোড়ে রূপালী গিটারের পাশে, রেডিসনের সামনে শিখা অনির্বাণ, কাজীর দেউড়ি মোড়, রাস্তার মাথা মোড়ে ব্যানারফেস্টুন দেখা গেছে।

জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন আজাদীকে বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে যেগুলো লাগিয়েছি সেগুলো তুলে ফেলেছি। সামনে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে লাগানো হবে। আবার ঈদুল আজহা শেষ হওয়া মাত্র সেগুলো তুলে ফেলব। তিনি বলেন, কোনো উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে ফেস্টুন লাগানো হলেও উপলক্ষ শেষ হওয়ার পর তা তুলে ফেলি।

তিনি আরো বলেন, আমার ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্ন বিভাগকে স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া আছে, উপলক্ষ শেষ হওয়া মাত্রই যেন ব্যানারফেস্টুন তুলে ফেলে। সেটা আমার হোক বা অন্য কারো। উপলক্ষ যেদিন থাকে তার আগ পর্যন্ত লাগালে সমস্যা নেই। তবে এরপর যেন না থাকে। সাধারণত পলিটিক্যাল লিডার যারা তাদের ব্যানার ফেস্টুন লাগানোর জন্য তারা কাউকে টাকা দিয়ে দেন। এরপর সেগুলো তুলে ফেলার বিষয়ে তাদের আর মাথাব্যথা থাকে না। কিন্তু জনপ্রতিনিধি হিসেবে উপলক্ষ শেষ হওয়ার পর আমাদেরকেই সেগুলো তুলে ফেলার দিকে খেয়াল রাখতে হয়। আমার ওয়ার্ডে অন্তত আমি সেটা করি।

৩৩ নং ওয়ার্ড ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব আজাদীকে বলেন, সাধারণত উৎসব বা উপলক্ষ শেষ হয়ে গেলে ব্যানারফেস্টুনগুলো সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগ সরিয়ে ফেলে। কিন্তু পদ্মা সেতুর আমেজটা এখনো থাকায় হয়তো কয়েক জায়গায় ব্যানারফেস্টুন থেকে গেছে। এটা তো সত্যি, পদ্মা সেতু আমাদের জন্য বিশাল পাওনা।

সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম আজাদীকে বলেন, আমরা নিয়মিত ব্যানারফেস্টুন অপসারণ করি। নতুন করে যেগুলো লাগানো হয়েছে সেগুলো অপসারণের জন্য অভিযান চালানো হবে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি উপলক্ষে লাগানো ব্যানারফেস্টুন এখনো থেকে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পলিটিক্যাল বিষয়গুলোতে আমরা হস্তক্ষেপ করি না। তবে যুবলীগের সম্মেলনের সময় প্রচুর ব্যানারফেস্টুন লাগানো হয়েছিল। সম্মেলন শেষ হওয়ার পর সেগুলো আমরা তুলে ফেলেছি। সামগ্রিকভাবে সামনে থেকে যত্রতত্র ব্যানারফেস্টুন লাগানো রোধে জায়গা নির্দিষ্ট করে দেয়ার পরিকল্পনা আছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের জন্মশতবার্ষিকী আজ
পরবর্তী নিবন্ধপ্রদীপ-চুমকির পক্ষে আংশিক যুক্তিতর্ক উপস্থাপন