করোনা পরিস্থিতির উন্নতির সাথে সাথে অর্ডারের দুরবস্থা কাটিয়ে উঠেছিল তৈরি পোশাক খাত। বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকার যেসব প্রতিষ্ঠান অর্ডার বাতিল করেছিল, সেগুলো পরবর্তীতে তারা বহাল রাখে। ফলে অনাকাঙ্খিত একটি বিপর্যয় থেকে রক্ষা পান পোশাক শিল্প মালিকরা। তবে সেই দুরাবস্থা কাটানোর বছর না ঘুরতেই নতুন আরেকটি সংকটের মুখে পড়েছেন পোশাক খাত সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে গেছে। ফলে ইউরোপ-আমেরিকাতে পোশাক বিক্রির কোনো শো-রুম কিংবা আউটলেট বন্ধ না হলেও অস্বাভাবিকভাবে বিক্রি কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে তৈরি পোশাক খাতে। বর্তমানে গত বছরের এই সময়ের তুলনায় পোশাক রপ্তানি অর্ডার কমে গেছে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। এছাড়া চীনের সাংহাইয়ে লকডাউনের জেরে কাঁচামালের সাপ্লাই চেনেও নেমেছে ধস। এছাড়া কাঁচামালের দামও বেড়েছে। ফলে কারখানা চালু রাখাটাই অনেকের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ। একইসাথে অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, গত ২০০৫ সালে চট্টগ্রামে নিবন্ধিত পোশাক কারখানা ছিল ৬৯৯টি, চালু ছিল ৬১০টি। বাকি ৮৯টি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। সে বছর রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ৩৯ শতাংশ। ২০১৫ সালে নিবন্ধিত পোশাক কারখানা ছিল ৭৫৬টি, চালু ছিল ৪৫৫টি। বাকি ৩১০টি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয় ১৪ শতাংশ। গত ২০২০ সালে নিবন্ধিত পোশাক কারখানা ছিল ৬৯৩টি, চালু ছিল ২৯৩টি। বাকি ৪০০টি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া সে বছর রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ শতাংশ। অন্যদিকে গত ২০২১ সালে চট্টগ্রামে নিবন্ধিত পোশাক কারখানা ছিল ৬৯৮টি, চালু ছিল ৩০৯টি। বাকি ৩৮৯টি কারখান বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ শতাংশ।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেছেন, পোশাক শিল্প খাতে এখন অর্ডারের সংকট চলছে। ইউরোপ-আমেরিকা পোশাক বিক্রির আউলেটগুলোতে বেচাবিক্রি কমে গেছে। তাই ক্রেতারা আমাদের দেশে অর্ডার কমিয়ে দিয়েছেন। এটি ছাড়াও বড় সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে পোশাক শিল্পের কাঁচামালের অব্যাহত মূল্য বৃদ্ধি। আমাদের পোশাক শিল্পের ফ্রেব্রিঙের ৭০ শতাংশ এবং অ্যাকসেসরিজের ৫০ শতাংশ আসে চীন থেকে। কিন্তু চীনের সাংহাইয়ে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ায় কঠোর লকডাউনে কাঁচামাল আমদানিতে ভাটা পড়ে। সঠিক সময়ে কাঁচামাল আমদানি করতে না পারার কারণে অনেকে লিড টাইম (ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছানো) ফেল করেছেন। এখনো চট্টগ্রাম বন্দরে অনেক কাঁচামাল এসে আটকে আছে। কিন্তু চীন থেকে রপ্তাানিকারক ডকুমেন্টস পাঠাতে ব্যর্থ হওয়ায় সেসব কাঁচামাল খালাস করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ লকডাউনের কারণে চীনের অনেক কুরিয়ার প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। তাই আমাদের পোশাক রপ্তানিতেও সমস্যা হচ্ছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, অর্ডার না আসলে সামনের দিনগুলোতে আমরা কি করবো সেটি বুঝতে পারছি না। এখন আবার দিন দিন ডলারের মূল্য বৃদ্ধি হচ্ছে। আমাদের বেশিরভাগ কাঁচামাল আমদানি নির্ভর হওয়ায় ডলারের মূল্যবৃদ্ধির সুফলটা পোশাক মালিকরা সেভাবে পাচ্ছেন না। কারণ দেশীয় যেসব টেঙটাইল কিংবা অ্যাকসরিজ কারখানা রয়েছে তাদেরও অনেক পণ্য আমদানি নির্ভর।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ইউরোপের দেশগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে গেছে। সেইসব দেশের লোকজন কিছুটা আর্থিক সমস্যায়ও পড়েছে শুনেছি। তাই তাদের পুরো মনোযোগ এখন ব্যয় সংকোচনের দিকে। এর ফলে বিশেষ করে বিভিন্ন আউটলেটে পোশাকের বেচাবিক্রিতে ভাটা পড়েছে। এখন ক্রেতারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আছেন মনে হচ্ছে। কারণ তারা অর্ডারের জন্য ইনকুয়ারি পাঠাচ্ছেন। কিন্তু ফাইনালি অর্ডার প্লেস করছেন না। অপরদিকে চীনের সাংহাইয়ে লকডাউনের প্রভাবও পড়েছে আমাদের গার্মেন্টস খাতে।