পোশাকের বিশ্ববাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে হবে

| রবিবার , ২৪ অক্টোবর, ২০২১ at ৮:৩৩ পূর্বাহ্ণ

তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশ অভাবনীয় অগ্রগতি সাধন করেছে। তৈরি পোশাক খাতই এখন দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত। বলা বাহুল্য, স্বাধীনতার পরের বছর মাত্র ৩৪ কোটি ৮৪ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ। তার মধ্যে ৯০ শতাংশ বা ৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলারের পণ্যই ছিল পাট ও পাটজাত। পাটের পর প্রধান রপ্তানি পণ্যের মধ্যে ছিল চা ও হিমায়িত খাদ্য। যদিও মোট রপ্তানিতে এ পণ্য দুটির অবদান ছিল সোয়া শতাংশের কাছাকাছি। আর ৫০ বছরে এচিত্রের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। ৫০ বছর আগের পণ্য রপ্তানিচিত্রের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির চেহারারও বদলে দিয়েছে তৈরি পোশাক খাত। এটি পাটকে হটিয়ে পণ্য রপ্তানির শীর্ষস্থান দখল করেছে। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, পাঁচ দশকের ব্যবধানে রপ্তানি আয় ৯৬ গুণ বৃদ্ধি, প্রায় ৪০ লাখ গ্রামীণ নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান, নারীর ক্ষমতায়ন, সহযোগী শিল্পের বিকাশসহ অনেক ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে পোশাকশিল্প। পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানার সংখ্যার দিক থেকেও বিশ্বে সবার ওপরে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে তৈরি পোশাক খাত বড় বিস্ময় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শক্ত ভিত গড়েছে বিশ্ববাজারে। কিন্তু মাঝে মাঝে তৈরি পোশাক খাতে নানা রকম প্রতিবন্ধকতা এসে ভর করে। গত ২২ অক্টোবর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘চট্টগ্রাম থেকে এক কন্টেনার তৈরি পোশাক সিঙ্গাপুর হয়ে আমেরিকা পাঠাতে জাহাজ ভাড়া পরিশোধ করতে হতো আড়াই থেকে তিন হাজার ডলার। কিন্তু গত কিছুদিন ধরে চট্টগ্রাম থেকে আমেরিকায় একটি কন্টেনার পাঠাতে খরচ পড়ছে কমপক্ষে দশ হাজার ডলার। অপরদিকে চট্টগ্রাম থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে একটি কন্টেনার পাঠাতে খরচ হতো আঠারশ’ থেকে দুই হাজার ডলার। যা এখন গিয়ে ঠেকেছে কমপক্ষে সাত হাজার ডলারে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপ এবং আমেরিকার জাহাজ ভাড়া হু হু করে বেড়ে যাওয়ায় বিপুল অর্ডার পেয়েও চাপে রয়েছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। শুধু ইউরোপ আমেরিকাই নয়, পুরো পৃথিবীতেই জাহাজ ভাড়া বাড়ছে। এতে শুধু তৈরি পোশাক খাতই নয়, দেশের সার্বিক আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।’
তৈরি পোশাক খাতে সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের মতামত প্রকাশিত হয়েছে উক্ত প্রতিবেদনে। এতে তাঁরা বলছেন, আমাদের আমদানি খরচ বহু বেড়ে গেছে। কস্ট অব বিজনেস বেড়ে যাচ্ছে হু হু করে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ার এটি অনেক বড় একটি কারণ বলেও তারা মন্তব্য করেন। তাঁরা বলেন, জাহাজ ভাড়া অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। আমরা ভীষণ চাপে পড়েছি। অর্ডার প্রচুর আছে। কিন্তু জাহাজ ভাড়া বেড়ে যাওয়ার ধকল সামলাতে গিয়ে সংকটে পড়তে হচ্ছে। তিনি জাহাজ ভাড়া কোন দিকে যাচ্ছে তার উপর শুধু তৈরি পোশাকই নয়, দেশের সার্বিক আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য নির্ভর করবে বলেও মন্তব্য করেন।
তৈরি পোশাকের বিশ্ববাজারে দীর্ঘ সময় ধরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’। যদিও গত দেড় বছরে বাংলাদেশকে ব্যাপক প্রতিযোগিতার মুখে ফেলেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ভিয়েতনাম। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সবশেষ তথ্য পর্যালোচনায় উঠে আসে ২০২০ সালে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশকে টপকে ভিয়েতনাম হয়েছে দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ড. জাইদী সাত্তার বলেছেন, ভিয়েতনামের চেয়ে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে হলে বাংলাদেশকে এখন দুটো কাজ করতে হবে। প্রথম কাজটি হল, নীতিগতভাবে ও বাস্তব পদক্ষেপ হিসেবেও বাংলাদেশকে তার প্রধান উৎপাদন খাত তৈরি পোশাক শিল্পে নিঃশর্তভাবে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রবাহের পথটি সুগম করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ২০২৬ সাল নাগাদ উন্নয়নশীল দেশের (এলডিসি) তকমা ঝেড়ে ফেলার আগেই এদেশকে বেশকিছু মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করে নিতে হবে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের অবস্থান শক্ত করতে বাজারমুখী পরিকল্পনা সাজানোর তাগিদ দিয়েছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। এছাড়া জাহাজের বাড়তি ভাড়ার চাপ যাতে কমিয়ে আনা যায়, সেবিষয়েও ভাবতে হবে। জাহাজের বাড়তি ভাড়ার প্রভাবে কোনো অবস্থাতেই যেন অর্ডার হারাতে না হয়। পোশাকের বিশ্ববাজারে যেন আর জায়গা হারাতে না হয়, সেদিকে নজর দিয়েই কর্মপরিকল্পনা সাজানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে