পাহাড়জুড়ে অদ্ভুত সব আকৃতি। কোনোটি দেখতে ঘরবাড়ির মতো, কোনোটি দেখে আবার মনে হয় মানুষের মূর্তি। তবে পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা একটি গোলাপি দরজা ঘিরেই রয়েছে যত রহস্য! রয়েছে নানা লোকগাথাও। পেরুর টিটিকাকা হ্রদের তীরে পাঁচশো বছরেরও বেশি পুরোনো ওই দরজাই নাকি স্বর্গের পথ খুলে দেয়।
পেরুর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে ইনকা সভ্যতার নিদর্শন। সেগুলো ঘিরে গল্পকথাও কম নয়। দুনিয়ার সব প্রান্ত থেকেই এসব পর্যটনস্থলে ভিড় জমান মানুষজন। হায়ু মারকা পাহাড়ে আরামু মারুর দরজা ঘিরে যে রহস্য রয়েছে, তার ধারেকাছেও নাকি পেরুর কোনো পর্যটনকেন্দ্র আসে না। এটিই ‘স্বর্গের দরজা’ বলে পরিচিত।
জনশ্রুতি রয়েছে- সে দরজা পেরোলে নাকি অমরত্বের রাস্তায় হাঁটা যায়! দক্ষিণ পেরুর পাহাড়ে ওই গোলাপি পাথরের দরজাটি ‘গেট অব দ্য গডস’ বলেও পরিচিত। পাঁচশো বছরের পুরোনো ওই দরজা নিয়ে কৌতূহলের অন্ত নেই। হায়ু মারুতে ওই পাথরটি উচ্চতায় ২৩ ফুট। চওড়ায়ও একই মাপ। পাথরের নিচের দিকে রয়েছে একটি কুঠুরির মতো অংশ খোদাই করা। যেন ইংরেজি হরফের ‘টি’ আকৃতির একটি খাঁজ। তা ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি উঁচু।
১৯৯৬ সালে হোসে লুই দেলগাদো মামানি নামে এক ব্যক্তি এই স্বর্গের খোঁজ পেয়েছিলেন। সে সময় গাইডের কাজ পেয়েছিলেন তিনি। ফলে সে কাজ শুরুর আগে পেরুর ওই এলাকাটি ঘুরে দেখতে যান। আচমকাই চোখে পড়ে, পাথরের গায়ের একটি অংশ দরজার মতো খোদাই করা। এর পর সংবাদমাধ্যমের নানান সময়ে নানা অদ্ভুত দাবি করেছিলেন মামানি।
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ইনকা যুগের অবসান করে পেরু এবং চিলিতে সাম্রাজ্য গড়েছিলেন স্পেনীয় শাসকেরা। লাতিন আমেরিকার ইতিহাসের অন্যতম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছিলেন কয়েক লাখ মানুষ। সেই সঙ্গে ছিল গুটিবসন্তের মতো রোগের হামলা। নতুন করে বসতি গড়তে গিয়েও প্রাণ গিয়েছিল অনেকের।
পেরুর লোকগাথায় বলে, স্পেনীয়দের হামলা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন আমারু মারু নামে এক পুরোহিত। সাতরশ্মির মন্দিরের ওই পুরোহিতের কাছে নাকি আকাশ থেকে একটি সোনার চাকতি এসে পড়েছিল। তা নিয়ে তিনি নিজের মাথা বাঁচাতে ছুটে গিয়েছিলেন হায়ু মারু পাহাড়ে। সঙ্গে ছিলেন তার মতো বহু পুরোহিত।
হায়ু মারুর ওই দরজার গায়ে ওই সোনার চাকতিটি ঠেকাতেই নাকি পাহাড়ের মধ্যে থেকে তা খুলে যায়। এরপর ভেতরে ঢুকে যান আমারু মারুরা।
লোককথায় আরও বলে, পাহাড়ের ওই দরজাটি একটি সুড়ঙ্গের আকার নিয়ে নিয়েছিল। তার মধ্য থেকে স্বর্গীয় নীলাভ আলো বের হচ্ছিল। আমারু মারু সুড়ঙ্গে ঢোকামাত্রই দরজাটি বন্ধ হয়ে যায়।
যদিও পেরুর একটি পাহাড়ে কীভাবে ওই দরজাটি গড়ে উঠল, তার ব্যাখ্যা দিতে হিমশিম খাচ্ছে আধুনিক বিজ্ঞান। প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে, ‘স্বর্গের দরজা’র মতো বহু নিদর্শনের পেছনে প্রাচীন স্থাপত্যবিদ্যা বা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের হাত রয়েছে। তর্কবিতর্ক সত্ত্বেও ‘স্বর্গের দরজা’ ঘিরে কৌতূহল মেটাতে সেখানে ছুটছেন বহু পর্যটক। কেউ-বা যাচ্ছেন রহস্যের সন্ধানে। কেউ-বা আবার প্রাচীন স্থাপত্য দেখার ঝোঁকেই ছুটছেন ‘স্বর্গের দরজায়।