কক্সবাজারের পেকুয়ায় পাহাড়ি ছড়া থেকে বালু উত্তোলন নিয়ে সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত ও তিনজন আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। নিহত মিন্টু মিয়া (৩৫) পার্শ্ববর্তী বাঁশখালী উপজেলার ১১নং পুঁইছড়ি ইউনিয়নের পূর্ব পুঁইছড়ির আহমদ হোসেনের পুত্র বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, আজ মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে উপজেলার টৈটং ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বটতলী জুমপাড়া এলাকায় একটি অবৈধ বালি মহাল থেকে বালি উত্তোলন নিয়ে এ ঘটনা ঘটে।
হামলায় মিন্টু মিয়া ঘটনাস্থলেই নিহত হন বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র নিশ্চিত করেছে। পরে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে ময়ানাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছে থানা সূত্র।
স্থানীয় লোকজন, প্রত্যক্ষদর্শী ও ওয়ার্ড মেম্বারের সাথে কথা বলে জানা যায়, একটি সরকারি ছড়া থেকে বালি উত্তোলন নিয়ে নিহত মিন্টু ও স্থানীয় জয়নালের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। পরে জয়নাল মিন্টুর বিরুদ্ধে ২ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে র্যাবের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করলে উত্তেজিত হয়ে মিন্টু ৫/৬ জন সন্ত্রাসী নিয়ে আজ বিকাল ৪টার দিকে জয়নালের বাড়ি ঘেরাও করে হামলা চালায়।
এসময় মিন্টুর দায়ের কোপে জয়নালের স্ত্রী খতিজা বেগম(৩২)-এর দেহ থেকে একটি হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং জয়নাল ও তার ভাই হাবিব উল্লাহ (২৮) আহত হয়।
পরে পাড়ার এক গৃহবধূর দেহ থেকে হাত কেটে নেয়ার খবর জানাজানি হলে এলাকার লোকজন ধাওয়া দিয়ে মিন্টুকে ধরে গণপিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। আহত খতিজা ও তার দেবর হাবিব উল্লাহকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য আবুল কাসেম বলেন, “আমি শুনেছি বটতলী জুমপাড়া লোকজনের সাথে মিন্টুর মধ্যে টৈটং ছড়া থেকে বালু উত্তোলন নিয়ে বিরোধ চলছিল। এমনকি এ নিয়ে র্যাব অফিসে দরখাস্ত দেয় একপক্ষ। এ ঘটনার জেরে নিহত মিন্টুসহ ৫/৬ জনের একদল যুবক আজ (২২ ডিসেম্বর) জয়নালের বাড়িতে গিয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে জয়নালের স্ত্রীর হাত কেটে নিলে এলাকার লোকজন উত্তেজিত হয়ে হামলাকারী মিন্টুকে গণপিটুনি দেয়। এতে সে মারা যায়।”
এ বিষয়ে অভিযোগকারী জয়নালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “মিন্টু সহ কিছু ভাড়াটে সন্ত্রাসী পার্শ্ববর্তী উপজেলা থেকে এসে দীর্ঘদিন ধরে আমাদের কাছ থেকে দুই লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দেয়ায় আজ সোমবার আমার বাড়ি ঘেরাও করে অতর্কিত হামলা চালিয়ে আমার স্ত্রীর হাত কেটে নিয়ে উল্লাস করার সময় এলাকার লোকজন তাকে ধরে গণপিটুনি দেয়। এতে সে মারা যায়। আমি, আমার স্ত্রী, আমার ভাই তাদের হামলায় আহত হই।”
এ ব্যাপারে পেকুয়া থানার ওসি (তদন্ত) কানন সরকার বলেন, “নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। খুনের ঘটনায় জড়িতদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।” এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, দীর্ঘদিন ধরে টৈটং-এর গহীন পাহাড়ি জায়গা দখল, বালি উত্তোলন নিয়ে একাধিক গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। দিনদুপুরে সেখানে ঘটে নানান অপরাধ। এমনকি দিন-দুপুরে অস্ত্রের মহড়াও দেয় সন্ত্রাসীরা। দীর্ঘদিন পাহাড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বড় কোনো অভিযান না হওয়ায় এইরকম ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।