পূর্ব ইউক্রেনে রুশ সেনা ও ট্যাংক

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৮:০০ পূর্বাহ্ণ

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত দুটি বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলকে সোমবার রাতে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর মাধ্যমে তিনি এমন এক মোক্ষম চাল চেলেছেন যার মাধ্যমে রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যেকার উত্তেজনা এখন এক চরম নাটকীয় মোড় নিয়েছে। কার্যত সেখানে শান্তি আলোচনার সম্ভাবনারও ইতি ঘটলো। স্বঘোষিত গণপ্রজাতন্ত্র দোনেস্ক ও লুহানস্কে রাশিয়ার সমর্থনপুষ্ট বিদ্রোহীরা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আসছে। গতকাল মঙ্গলবার পুতিন পার্লামেন্টের কাছে রাশিয়ার বাইরে সেনা মোতায়েনের অনুমতি চান, যা নিয়ে রুশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে গতকালই ভোট হয় এবং ভোটে পুতিনের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। এর মধ্য দিয়ে ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলে সেনাবাহিনী পাঠানোর আনুষ্ঠানিক অনুমতি পেলেন পুতিন। রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের প্রধান এ বিষয়ে বলেছেন, তারা আশা করছেন রুশ সেনাবাহিনী সেখানে ‘শান্তিরক্ষার’ কাজ করবে। তবে ইতোমধ্যে সেখানে কিছু রুশ সেনা ও ট্যাংক ঢুকে পড়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদও বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হয়ে গেছে।
ইউক্রেনের দোনেস্ক ও লুহানস্ককে একত্রে ডনবাস বলা হয়। রুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ওই দুই অঞ্চল এখনও ইউক্রেন সেনার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। সোমবারের ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগ বাড়িয়ে ইউক্রেনের দুই এলাকাকে রাশিয়ার স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থ ইউক্রেনকে প্রকাশ্যে যুদ্ধের জন্য উসকানি দেওয়া। মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট জানাচ্ছে, পুতিনের এই কৌশলী পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রকে এক অস্বস্তিকর দ্বিধায় ফেলে দিয়েছে, কারণ জো বাইডেনের প্রশাসনের কূটনৈতিক উপদেষ্টারা নিশ্চিত হতে পারছেন না যে রাশিয়া যা করেছে – তাকে ঠিক ‘ইউক্রেনে রুশ অভিযান’ বলা যায় কিনা – যার পূর্বাভাস তারা অনেক দিন ধরেই দিচ্ছিলেন। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র আপাততঃ ‘আংশিক কিছু নিষেধাজ্ঞা’ আরোপ করেছে রাশিয়ার ওপর। তবে রাশিয়ার পাঁচটি ব্যাংক এবং তিন ধনকুবেরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। নিষেধাজ্ঞার আওতায় যুক্তরাজ্যে তাদের সব সম্পদ জব্দ করা হবে এবং দেশটিতে তাদের ভ্রমণও নিষিদ্ধ থাকবে। যুক্তরাজ্যের কোনও নাগরিক তাদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করা কিংবা সম্পর্ক রাখতে পারবেন না। জনসন বলেছেন, রাশিয়ার কর্মকাণ্ড ‘নতুন করে আগ্রাসন’ চালানোরই সামিল। এ সংকট সহসাই কাটবে না বলে জনসন ব্রিটিশ এমপি’দেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন। পরিস্থিতি আরও উত্তেজনার দিকে মোড় নিলে এই নিষেধাজ্ঞার আওতা আরও বাড়ানো হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ইউক্রেনের ওই দু’টি অঞ্চল দখলে এলে রাশিয়ার দখলে আসবে একটি বন্দরও। দোনেস্কের ওই বন্দর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকলে ঘুরপথে বাণিজ্যের বড় সমস্যা ঘুচবে রাশিয়ার। সহজ হবে বাণিজ্যপথ। বাঁচবে বিপুল অর্থ। ডনবাস সামরিক অবস্থানগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। ওই এলাকা থেকে রুশ সেনার পক্ষে দ্রুত ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে অভিযান চালানো সম্ভব বলে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটো-র আশঙ্কা।
বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুটি অঞ্চলকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর টেলিভিশনে দেওয়া এক ঘণ্টার এক ভাষণে নিজের সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দেন পুতিন। তিনি বলেন, আধুনিক ইউক্রেনকে ‘সৃষ্টি’ করেছে সোভিয়েত ইউনিয়ন, দেশটিকে ‘প্রাচীন রুশ ভূমি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর রাশিয়া ‘লুণ্ঠিত’ হয়েছে বলে অনুযোগ করেছেন তিনি। পুতুল সরকার দ্বারা পরিচালিত ইউক্রেন একটি ‘যুক্তরাষ্ট্রের উপনিবেশে’ পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। দেশটির বর্তমান নেতৃত্বের অধীনে জনগণ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। ২০১৪ সালের যে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে ইউক্রেনের রাশিয়াপন্থি নেতার পতন ঘটেছিল তাকে অবৈধ ক্ষমতাদখল বলে বর্ণনা করেছেন তিনি। এর প্রতিক্রিয়ায় গভীর রাতে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে তার দেশের সার্বভৌমত্ব লংঘন করছে। ইউক্রেইন ‘শান্তি চায়’, এমনটি জানিয়ে তিনি ঘোষণা করেন, ‘আমরা ভীত নই। আমরা কাউকে কিছু দেবো না। ইউক্রেনের এখন দরকার আন্তর্জাতিক অংশীদারদের কার্যকরী পদক্ষেপ ও পরিষ্কার সমর্থন।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেঙি রেজনিকভ বলেছেন, ‘সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রকে ফের একত্র করার কাজ শুরু করেছে রাশিয়া।’ সাবেক সোভিয়েতের আর এক প্রজাতন্ত্র বেলারুশে আগেই পৌঁছে গিয়েছে রুশ ফৌজ। ইউক্রেন-বেলারুশ সীমান্তে যুদ্ধের মহড়াও শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে সাঁড়াশি আক্রমণ হলে মুখে ইউক্রেন সেনা কতটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। সম্ভাব্য রুশ আগ্রাসনের মোকাবিলায় পোল্যান্ড এবং জার্মানিতে বাড়তি সেনা মোতায়েন করেছে ন্যাটো। কিন্তু সামরিক দিক থেকে রাশিয়া সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বলে মনে করেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশ। খবর বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধক্ষুব্ধ পুতিন যেন ইতিহাস নতুন করে লিখছেন
পরবর্তী নিবন্ধবিদ্যুৎ-গ্যাসে ধীরে ধীরে ভর্তুকি প্রত্যাহারের ভাবনা