পূজায় সিএমপির ৩২ নির্দেশনা

সমাজের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিদের নিয়ে গঠন করা হবে ‘সর্বজনীন আইন-শৃঙ্খলা কমিটি’

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৫:০৬ পূর্বাহ্ণ

আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজায় কোনো ধরনের নেতিবাচক গোয়েন্দা তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। পাশাপাশি তিনি আয়োজক কমিটির বাইরে সমাজের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিদের নিয়ে ‘সর্বজনীন আইনশৃঙ্খলা কমিটি’ গঠনের কথাও জানান। সিএমপি কমিশনার বলেন, পূজা যেমন সর্বজনীন, নিরাপত্তা ব্যবস্থাও হবে সর্বজনীন। গত বছর যে সমস্যা হয়েছে, সেটি নিরসনে আমরা বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছি। এটা আমাদের জন্য এক ধরনের অভিজ্ঞতা। অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা পরিকল্পনা করি।

গতকাল বুধবার দুপুর ১২টায় সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

সিএমপি কমিশনার বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীতে প্রায় ৩০০টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এসব মন্ডপে অতি গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ বিবেচনা করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হবে। কিছু মন্ডপে স্থায়ী পুলিশ সদস্য রাখা হবে, আর কিছু মন্ডপে পুলিশ থাকবে মোবাইল ডিউটিতে।

সভায় প্রতিমা তৈরির সময় নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা, মন্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী রাখাসহ ৩২টি নির্দেশনা তুলে ধরেন তিনি। সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘সার্বজনীন আইনশৃঙ্খলা কমিটি’ থানা ও পূজা মন্ডপ অনুযায়ী গঠন করা হবে। কমিটির আহ্বায়ক থাকবেন সংশ্লিষ্ট থানার ওসি। আর জোনাল এসি (সহকারী কমিশনার) ও ডিসিরা (উপকমিশনার) উপদেষ্টা হিসেবে থাকবেন। এছাড়া সকল স্তরের লোকজনকে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটি করা হবে। যেখানে পূজা কমিটির বাইরেও সমাজের অন্যান্য স্তরের লোকজনেরও অংশগ্রহণ থাকবে।

সভায় চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, মোবাইলের ইন্টারনেটের গতি পূজা চলার চারপাঁচ দিন স্লো করার অনুরোধ করছি। কারণ ফেসবুকে উল্টা পাল্টা লিখে অপপ্রচার চালানো হয়। ইন্টারনেট স্লো করলে গুজব থেকে বাংলাদেশ বাঁচবে। একটি গোষ্ঠী আছে উৎসবকে কেন্দ্র করে এই রকম কাজ করে। সামনে নির্বাচন, ওই গোষ্ঠী সবসময় চাইবে সরকারের ধারাবাহিকতা ব্যাঘাত করার জন্য, প্রশাসনের সফলতা ব্যাহত করার চেষ্টা করবে তারা। তিনি আরো বলেন, গতবছর পূজার সময় কুমিল্লাসহ সারাদেশে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তা সরকার ও প্রশাসনের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য। আমাদের সমপ্রীতিকে নষ্ট করার জন্য। এরকম কাজ যারা করে তারা সংখ্যায় কিস্তু কম। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করবো কিছু কিছু মন্ডপে স্থায়ীভাবে পুলিশ দেওয়ার জন্য। তিনি বলেন, পূজা উদযাপন পরিষদ সবসময় সতর্ক অবস্থায় আছে।

সিএমপি থেকে দেওয়া নির্দেশনাগুলো হলো, মন্দির বা পূজামন্ডপে যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে অনুষ্ঠান কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। অহেতুক কোনো প্রকার থিম, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা ডিজে পার্টি আয়োজন করা যাবে না। মন্ডপের প্রবেশ মুখে ভীড় নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া, পুরুষ ও মহিলাদের জন্য রাখতে হবে পৃথক প্রবেশ ও বের হওয়ার ব্যবস্থা, সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও ভিডিও ফুটেজ রেকর্ড করা, মন্ডপের চারদিকে বা উপরের অংশ উন্মুক্ত রাখা, প্যান্ডেলের আশেপাশে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা, জরুরি সেবার ফোন ও মোবাইল নম্বর সংরক্ষণ, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের জরুরি সেবার নম্বরগুলো দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শনের ব্যবস্থা, বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে জেনারেটর প্রস্তুত রাখা, বিদ্যুতের ত্রুটিপূর্ণ সংযোগ দ্রুত মেরামত করা। সার্বক্ষণিক একজন ইলেকট্রিশিয়ান নিয়োজিত রাখা, নিরাপদ স্থানে পূজামন্ডপ স্থাপন, মন্ডপসমূহে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা রাখা। যেমন, ফায়ার এঙটিংগুইসার, পানি, বালি ইত্যাদি।

নামাজ ও আজানের সময় সাউন্ড সিস্টেম বন্ধ রাখতে হবে, প্রতিমা পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জের সাথে সমন্বয় করতে হবে, অজ্ঞানপার্টি ও মলমপার্টি থেকে দর্শনার্থীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পূজামন্ডপে স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন ক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছে বিশেষ নির্দেশনা। পূজামন্ডপে আগত নারী দর্শনার্থীরা যাতে ইভটিজিং বা কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সে ব্যাপারে নিতে হবে জরুরি পদক্ষেপ, নারী ও পুরুষ স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন করতে হবে, স্বেচ্ছাসেবকদের চেনার সুবিধার্থে গেঞ্জি/ ক্যাপ/ আর্মডব্যান্ড ব্যবহার করতে হবে ও স্বেচ্ছাসেবকদের নামের তালিকা সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জের কাছে দিতে হবে, মন্ডপে মদ ও অন্যান্য মাদকদ্রব্য গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে, মন্ডপের আশপাশে মেলা/ জুয়ার আসর বসানো যাবে না, আতশবাজি ও পটকা ফুটানো যাবে না, কোনো ধরণের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বা গুজবের ঘটনা ঘটলে আগে নিকটস্থ পুলিশকে জানাতে হবে। প্রতিমা বিসর্জন সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে, বিসর্জনের শোভাযাত্রায় যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত লোক প্রবেশ না করে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। তাছাড়া বিসর্জনের আগে পূজামন্ডপের তালিকা সংশ্লিষ্ট থানায় ও সিটিএসবিতে প্রদান করতে হবে।

মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) এম এ মাসুদ, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) আ স ম মাহতাবউদ্দিন, পূজা কমিটি এবং বিভিন্ন সেবা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম কাস্টমসে রাজস্ব আদায়ে গতি
পরবর্তী নিবন্ধসড়কেই থামছে দূরপাল্লার বাস