পুলিশ বাহিনীকে নাগরিক সমাজের আস্থা অর্জনে কাজ করতে হবে

| শনিবার , ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ

সামপ্রতিক সময়ে অপরাধজনক ঘটনায় পুলিশ সদস্যদের জড়িয়ে পড়ার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত একের পর এক অপরাধজনক ঘটনায় সচেতন সকল মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। আজাদীতে প্রকাশিত একটি ঘটনা সেই উদ্বেগকে আরো বেশি স্থায়িত্ব দিচ্ছে। ২০ ফেব্রুয়ারি ‘ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত সেই পুলিশ সদস্য বরখাস্ত’ শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, মুঠোফোনে অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ধারণ করে ভয়ভীতি দেখিয়ে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য রুবেল মিয়াকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গত রোববার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) বন্দর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) শাকিলা সোলতানা এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, রুবেল মিয়াকে চাকরি থেকে বরখাস্ত ও বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। এর আগে গত শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) নগরীর চান্দগাঁও থানায় নারী নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় পুলিশ সদস্য রুবেল মিয়াকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. অলি উল্লাহর আদালতে হাজির করা হলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। রুবেল মিয়া (৩৬), নেত্রকোনা জেলার সদর থানার ছেওপুর এলাকার আব্দুল মালেকের ছেলে। তিনি কর্ণফুলী থানার শিকলবাহা পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন।

যদিও ব্যক্তি পুলিশের অপরাধের দায় পুরো বাহিনীর ওপর দেওয়া যায় না। তবু এ ধরনের অপরাধমূলক ঘটনা আমাদের ভেতরে উদ্বেগের সৃষ্টি হচ্ছে। কারণ এতে একদিকে যেমন একটা পরিস্থিতি সম্পর্কে বাড়িয়ে বলার অভিযোগ উঠতে পারে, আরেক দিকে তেমনি বাহিনীটির নৈতিক ভিত্তির ওপর আঘাত লাগতে পারে।

পুলিশ আইন অনুযায়ী, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত পুলিশের বিরুদ্ধে দুই ধরনের বিভাগীয় শাস্তির বিধান রয়েছে। কোনো পুলিশ সদস্য ফৌজদারি অপরাধ করলে গুরুদণ্ড দেওয়া হয়। এ দণ্ডের আওতায় রয়েছে চাকরি থেকে বরখাস্ত, পদাবনতি, পদোন্নতি স্থগিতকরণ ও বেতন বৃদ্ধি স্থগিতকরণ। গুরুদণ্ড দিতে হলে বিভাগীয় মামলা করতে হয়। মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে সংশ্লিষ্ট পুলিশকে গুরুদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। তবে গুরুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিলেরও সুযোগ আছে। আর হুমকি দেওয়া, ঘুষ নেওয়া, চাকরি শৃঙ্খলাপরিপন্থি কাজ করা, দায়িত্বে অবহেলা করা, নির্দেশ অমান্য করা, ভিত্তিহীন বা তুচ্ছ বিষয়ে অভিযোগের জন্য পুলিশ সদস্যদের লঘুদণ্ড দেওয়া হয়।

বাহিনীটিরই নিজস্ব পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর গড়ে ১৮ থেকে ২০ হাজার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন লঘুগুরু অপরাধে যুক্ত হওয়ার অভিযোগ ওঠে। অথচ তাদের মধ্যে মাত্র দুই হাজারের মতো পুলিশ সদস্য সাজা পায়। শুধু তাই নয়, সাজাপ্রাপ্তের বড় অংশই পায় লঘু দণ্ড। বিষয়টা যে শুধু আমাদের ভাবাচ্ছে, তা নয়; পুলিশের অনেক কর্মকর্তাও এতে ভাবিত।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুলিশের একশ্রেণির সদস্যের বিরুদ্ধে ঘুষদুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানাবিধ বেআইনী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ সবসময়ই ছিল এবং আছে। তবে গত কয়েক বছরে একশ্রেণির পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে নারীর শ্লীলতাহানি, ছিনতাই, অপহরণ, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, মাদকইয়াবা চোরাচালান, মানবপাচারসহ নানাবিধ অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠতে দেখা গেছে। তবে এ সব অপরাধের দায়ে কাউকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সম্মুখীন হওয়ার খবর খুব একটা জানা যায় না।

অপরাধবিজ্ঞানীরা বলেন, সমাজে ক্রমবর্ধমান ও বহুমুখী অপরাধপ্রবণতা মোকাবেলা করে নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই পুলিশের জন্য এখন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে পুলিশকে তার অভ্যন্তরীণ অপরাধপ্রবণতা মোকাবেলা করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। একশ্রেণির পুলিশের ক্রমবর্ধমান অপরাধপ্রবণতা একদিকে যেমন পুরো পুলিশ বাহিনীকেই আস্থার সংকটের মুখে ঠেলে দিচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষমতাসীন সরকারকেও মাঝে মধ্যে বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন করছে।

আধুনিক বিশ্বে সাধারণ মানুষকে পুলিশের দ্বারস্থ হতেই হয়। পুলিশ জনগণের বন্ধুএ স্লোগানকে বাস্তবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। পুলিশ যেখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দেবে, সেখানে তারা যদি নিরাপত্তাহীনতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে মানুষ যাবে কোথায়? বিশেষজ্ঞরা বলেন, এতে সামাজিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে। পুলিশ সদস্যরাও প্রায়ই অপরাধীদের হাতে আক্রান্ত হচ্ছে। এ সব ঘটনায় পুলিশের ট্রেনিং, দক্ষতা ও আত্মরক্ষার যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। নাগরিক সমাজের আস্থা অর্জনের প্রেক্ষাপট তৈরি করতে পুলিশ বাহিনীর যে সব ঘাটতি রয়েছে তা যথার্থভাবে চিহ্নিত করা জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে